পুরনো জুতো হোক কিংবা দুর্গন্ধময় মোজা! টিমবাসে পছন্দের চেয়ারে বসা। রাস্তার ধারের ল্যাম্পপোস্ট গোনা। ড্রেসিংরুমে সবার শেষে পোশাক পরা!
ফুটবলারদের তুকতাকের ঐতিহ্য বিশ্ব জুড়েই দারুণ ভাবে প্রচলিত। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো থেকে জন টেরি, হিগুয়েতা, মারিও গোমেজপ্রত্যেকেই ‘লাকি চার্ম’-এর পূজারি। শুক্রবার ডার্বি-যুদ্ধের চব্বিশ ঘণ্টা আগে মেহতাব-নবিদের অন্দরমহলে ঢুঁ মেরেও তুকতাকের যা ধোঁয়া দেখা গেল, তাতে চোখ জ্বালা করতে পারে! অক্ষয় কুমার থেকে শুরু করে জোড়া শালিক, ডাল-আলুসেদ্ধ ভাত বাদ আছে কিছুর? ‘এল ক্লাসিকো’য় নামার আগে ওয়ার্ম আপে কখনওই গোলমুখী শট মারেন না রোনাল্ডো। সি আর সেভেনের ধারণা, তার চেয়ে ম্যাচে করা ভাল। রোনাল্ডোর ধাঁচেই চিন্তাভাবনার আদল তৈরি করেছেন ইস্টবেঙ্গলের গোলমেশিন এডে চিডি। ম্যাচের আগে গোলমুখী শটে চরম আপত্তি লাল-হলুদের ই সি নাইনের। চিডির কথায়, “ম্যাচের আগের দিন রাতে আমার খেলা ম্যাচের ডিভিডি দেখি আমি। কোনও ফোন ধরি না। মনসংযোগ স্থির রাখার জন্য।” ওডাফা ওকোলির অবশ্য কোনও অন্ধ বিশ্বাস নেই। সবুজ-মেরুন ‘টাইগার’ পরিশ্রম করেই শৃঙ্গ জয় করতে চান, “ফুটবল মাঠে শুরু হয়ে মাঠেই শেষ হয়ে যায়। আমি আমার ঈশ্বরকে ছাড়া আর কিছুতে বিশ্বাস করি না।” |
তুকতাকের মাত্রা ফরোয়ার্ড লাইনের চেয়ে রক্ষণের ডেরায় বেশি জনপ্রিয়। চেলসির অধিনায়ক জন টেরি টিমবাসে নিজের পছন্দের সিট ছাড়া বসেনই না। রাস্তায় ল্যাম্পপোস্ট গোনাও তাঁর স্বভাব। ঠিক যেমন লাল-হলুদ স্টপার অর্ণব মণ্ডল গোটা রাস্তায় খুঁজে বেড়ান দুই শালিকের পয়া জুটি। কেন? ব্যাখা দিলেন স্বয়ং অর্ণবই, “দু’শালিক দেখা খুব শুভ। অন্তত আমি তো বহু ক্ষেত্রে সুফল পেয়েছি।” দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ফুটবলার সৌমিক দে আবার বাঁ পায়ের জুতো আগে পরেন। আর হরমনজিৎ সিংহ খাবরা? বড় ম্যাচের আগের রাতে অক্ষয় কুমারের সিনেমা দেখা ‘মাস্ট’। ওখানেই শেষ নয়, ম্যাচের দিন আবার ড্রেসিংরুমে নিজের পছন্দের সিটে বসা চাই। বলছিলেন, “আমার জায়গায় কেউ বসে পড়লে দাঁড়িয়ে থাকি। তবু অন্য কোথাও বসি না।” বাগানের রক্ষণের প্রহরী নির্মল ছেত্রী আবার ম্যাচের আগের দিন বই পড়েন। রাত জেগে। অনেকক্ষণ।
ডার্বির তুকতাক থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারেননি কোচেরাও। আয়ার্ল্যান্ডের কোচ ত্রাপাতোনি থেকে মোহন-ইস্টের করিম বেঞ্চারিফা, ট্রেভর মর্গ্যান সবাই কুসংস্কারের ভক্ত। ত্রাপাতোনির বড় দিদি গির্জার ‘নান’। তাঁর পাঠানো পবিত্র জলে স্নান না করে ইতালীয় কোচ মাঠে নামেন না। ঠিক যেমন করিম একটি বিশেষ মেরুন টি-শার্ট ছাড়া ডার্বিতে যুবভারতী-মুখো হন না। মোহনবাগানের মরক্কান কোচ বললেন, “মেরুন টি-শার্ট আমার জন্য খুব লাকি। গত ডার্বিতেও পরেছিলাম। শনিবারও পরে নামব।” ইস্টবেঙ্গলের ব্রিটিশ কোচও গত ডার্বির জামাটাই পরে নামবেন। তবে বললেন, “নোংরা নয়, পরিষ্কার জার্সি পরেই নামব।”
রক্ষণ, ফরোয়ার্ড এবং কোচ তো গেল। পড়ে গোলকিপার। হিগুয়েতা তাঁর নীল রঙের আন্ডারওয়ার যতই ময়লা হোক, টুর্নামেন্টের মধ্যে পাল্টাতেন না। শনিবারের ম্যাচের দুই গোলকিপার অভিজিৎ মণ্ডল এবং শিল্টন পালের কি ডার্বির আগে কোনও তুকতাক আছে? লাল-হলুদের অভিজিৎ বললেন, “এটাই আমার প্রথম ডার্বি। তাই ঠিক করেছি নিরামিষ খাব। ডাল, আলুসিদ্ধ, ভাত।” সবুজ-মেরুনের শিল্টন আবার প্রথমে বাঁ হাতের গ্লাভস পরেন। তার পরে ডান হাত। তবে এমনও ফুটবলার আছেন যাঁরা তুকতাকে তেমন বিশ্বাস করেন না। ওডাফার মতোই রহিম নবি এবং মেহতাব হোসেনের ভরসা ঈশ্বর। দু’জনেই এ দিন বললেন, “বিসমিল্লা বলে মাঠে নামব।”
ওডাফা-নবি-মেহতাবের মতো সামান্য কয়েক জন ব্যতিক্রম থাকলেও, তুকতাকের বাজারই সরগরম কলকাতার ময়দানে। দেখার শুধু, জোড়া শালিক না রাস্তার ধারের ল্যাম্পপোস্টডার্বি-যুদ্ধ পার করে কে? |