ময়দানে বড় ম্যাচের ঢাকে কাঠি পড়লেই একটা ব্যাপার গত পাঁচ-সাত বছর নিয়মিত ঘটতে দেখছি। অনেক আগেভাগে চিন্তাভাবনা চালু করে দাও। কী স্ট্র্যাটেজি হবে, কোন উপায়ে বিপক্ষের কোটি টাকার স্ট্রাইকার জুটিকে বধ করা যাবে...এই সব।
বিশেষ করে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলে বিদেশি কোচরা আসার পরপরই ব্যাপারটা শুরু হয়েছে। ডার্বির অন্তত চারটে ম্যাচ আগে থেকে ওই বিশেষ ম্যাচ নিয়ে আগাম আলোচনা চালু হয়ে যাচ্ছে। এ বারও তাই। আগাম এ সব হলে কী হয় জানেন? ফুটবলারদের মনের ওপর মারাত্মক চাপ পড়ে। আসল সময় নার্ভাস হয়ে পড়ে। খেলাটা অগোছালো হয়ে যায়। প্রদীপদা (বন্দ্যোপাধ্যায়) বা অমলদাদের (দত্ত) কোনও দিন এটা করতে দেখিনি। ওঁরা বড় ম্যাচের আগেই বড় ম্যাচ নিয়ে ভাবতেন। আমিও তাই। |
যা-ই হোক, শনিবারের ডার্বিতে ফিরি। ৯ ডিসেম্বরের ঝামেলা এখনও পুরনো হয়নি। অতএব, ৯ ফেব্রুয়ারির ম্যাচ নিয়ে তীব্র টেনশনের একটা আবহ থাকবেই। ভাল ফুটবলের সম্ভাবনা কম। নবিকেই ধরুন। শেষ ডার্বিতে ওকে গ্যালারি থেকে ইট ছুড়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নবি শুক্রবার আমাকে ফোন করেছিল। গলা প্রচণ্ড টেনস্ড। যা বোঝানোর ওকে বুঝিয়েছি। ও যথেষ্ট সাহসী, অতীতের আতঙ্কটা কাটিয়ে উঠতে ওর মিনিট পনেরো-কুড়ি লাগা উচিত। পারলে কিন্তু ও ম্যাচের ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে যেতে পারে।
ঠিক যেমন হতে পারে টোলগে আর ওডাফা জুটি। এই একটা কারণে ম্যাচে আমি সামান্য এগিয়ে রাখব মোহনবাগানকে। কেন বলছি? দেখুন, টোলগে-ওডাফা একসঙ্গে এই প্রথম খেলবে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে। একটা ভীতি তো বিপক্ষের থাকবেই। তর্ক চলতে পারে, টোলগে-ওডাফাকে বল দেবে কে? মোহনবাগান মাঝমাঠে তো শুধুই মিসপাস। ঘটনা হচ্ছে, সারা ম্যাচে যদি ওডাফা-টোলগে পাঁচটা বলও পায়, ঠিক দু’টো গোল করে দেবে। মোহনবাগানের ফরোয়ার্ড লাইন ‘এরিয়াল’ বলেও মারাত্মক। ইস্টবেঙ্গলে চিডি যা নয়। |
সবচেয়ে বড় কথা, শনিবার বরং চিডিকে বল জোগানোর লোকেরই অভাব হতে পারে। চিডিকে মারাত্মক দেখায় কারণ মাঝমাঠে মেহতাব-পেনের মতো ফুটবলার আছে বলে। মেহতাবের তিরিশ-চল্লিশ গজের পাসগুলো থাকে চিডির গোলের পিছনে। কিন্তু এই ম্যাচে পারবে কি? সন্দেহ আছে। শনিবার টোলগেদের আটকাতে নেমে আসতে হতে পারে মেহতাব কিংবা পেনকে। চিডির বলের ব্যবস্থা করার সময় না-ও পেতে পারে তখন ওরা।
তা হলে ইস্টবেঙ্গলের জয়ের টোটকাটা কী? দু’টো টিমের ডিফেন্স-মাঝমাঠ উনিশ-বিশ। ইস্টবেঙ্গলের দু’টো জিনিস চাই। সাহস। মর্গ্যানকে যেটা দেখাতে হবে। আলট্রা-ডিফেন্সিভ হয়ে পড়লে চলবে না। আর চাই তাৎক্ষণিক বিচার। মানে, একেবারে শেষ মুহূর্তে বিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা ফুটবলারদের মনে করিয়ে দেওয়া। ডার্বির আধঘণ্টা আগেও ওডাফাকে নিয়ে কিন্তু আলাদা বসেছি আমি।
সবশেষে বলি, শনিবারের বড় ম্যাচের ওপর না ইস্টবেঙ্গলের চ্যাম্পিয়ন হওয়া নির্ভর করবে, না মোহনবাগানের অবনমন বাঁচানো। তবে যে জিতবে, বাকি লিগে তাদের মানসিক ভাবে ঘায়েল করা খুব কঠিন। হাজার হোক, ডার্বি তো! |
ডার্বি ধামাকা |
আই লিগের ডার্বিতে শনিবারটা লাল-হলুদের |
• ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০১ ইস্টবেঙ্গল-১ (ওমোলোজা) : মোহনবাগান- ০
• ৮ এপ্রিল, ২০০৬ ইস্টবেঙ্গল- ৩ (ভাইচুং, তুলুঙ্গা, গৌরাঙ্গ) : মোহনবাগান-১ (মেহতাব)
• ২৫ অক্টোবর, ২০০৮ ইস্টবেঙ্গল-১ (নবি) : মোহনবাগান-১ (ভাইচুং)
• ৯ এপ্রিল, ২০১১ ইস্টবেঙ্গল- ২ (টোলগে, বলজিৎ) : মোহনবাগান-১ (সুরকুমার)
• ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১২: ইস্টবেঙ্গল-১ (রবিন) : মোহনবাগান-১ (ওডাফা)
(ইস্টবেঙ্গলের জয় ৩ : মোহনবাগানের জয় ০ : ড্র ২) |
আই লিগের শেষ ১০ ডার্বিতে |
এগিয়ে সবুজ-মেরুন |
• মোহনবাগানের জয় ৫ : ইস্টবেঙ্গলের জয় ২ : ড্র ৩ |
আই লিগে এক মরসুমে দুই ডার্বিতেই জয় |
• ইস্টবেঙ্গল ২ বার (২০০২-০৩ ও ২০০৩-০৪) দু’বারই চ্যাম্পিয়ন
• মোহনবাগান ৩ বার (২০০১-০২, ২০০৭-০৮ ও ২০০৯-১০) চ্যাম্পিয়ন শুধু প্রথম বার |
পরিসংখ্যান হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় |
|