নিয়মমাফিক জেনারেল ডায়েরি করে থানা থেকে পুলিশ নিয়ে বালির এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দিয়েছিলেন ‘সিআইডি-র ডিএসপি’। দাবি মতো টাকা না দিলে কপালে বিপদ রয়েছে বলে হুমকিও দেন। কিন্তু ভবানীভবনে যোগাযোগ করতেই বেরিয়ে এল আসল ঘটনা। জানা গেল, ডিএসপি-র পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি আদতে সিআইডি-র এক প্রাক্তন ইনস্পেক্টর। গত বছর তিনি অবসর নিয়েছেন। শেষমেশ শুক্রবার কমল চৌধুরী নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বালি পাঠকপাড়ার ওই স্টিলের ছাঁট ব্যবসায়ীকে ফোন করে ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে রফা করার হুমকি দেন কমলবাবু। এমনকী, হাওড়া ময়দান এলাকায় দেখা করারও প্রস্তাব দেন। ওই ব্যবসায়ী রাজি না হওয়ায় পরদিন সকালে তাঁর বাড়িতে একেবারে বালি থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হন ওই ব্যক্তি। ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে হুড়মুড়িয়ে ঘরের ভিতরে ছ’জন লোক ঢুকে পড়েন। তাঁদের এক জন নিজেকে ডিএসপি কমল চৌধুরী বলে পরিচয় দেন। তিনিই হুমকি দেন, রফার জন্য তৎক্ষণাৎ ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। পরে বাকি টাকা হিসেব করে দেখা হবে। না দিলে গ্রেফতার করে ‘মজা দেখানো’র হুমকিও দেন। ওই ব্যবসায়ী বলেন, “কী কারণে রফা জানতে চাইলে, ওই ব্যক্তি আমাকে বলেন, ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে এক জন আমার থেকে প্রচুর টাকা পান। সেই জন্যই এই রফা।”
ওই ব্যবসায়ী জানান, ৪ তারিখ ফোন পেয়েই তিনি ভবানীভবনে যোগাযোগ করেছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে কমল চৌধুরীর সম্পর্কে কেউ কোনও তথ্য দিতে পারেননি। কিন্তু পরদিন সকালে বালি থানার পুলিশ নিয়ে কমলবাবু তাঁর বাড়িতে পৌঁছে যাওয়ায় চমকে যান তিনি। ওই ব্যবসায়ী বলেন, “ভবানীভবন ওই ডিএসপি সম্পর্কে কোনও তথ্য দিতে না পারায় ভুয়ো ভেবেছিলাম। কিন্তু ওই ব্যক্তি বালি থানার পুলিশ নিয়ে বাড়িতে আসায় বুঝতে পারছিলাম না কে সত্যি।” এর পরেই বালি থানায় গিয়ে কমল চৌধুরীর নামে একটি অভিযোগ দায়ের করেন ওই ব্যবসায়ী।
পুলিশ জানায়, ৫ তারিখ সকালে বালি থানায় এসে নিজেকে ডিএসপি পরিচয় দিয়ে সহযোগিতা চান ওই ব্যক্তি। তিনি জানিয়েছিলেন, বালিতে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে তল্লাশি করতে যেতে হবে। এমনকী তার জন্য নিয়মমাফিক একটি জেনারেল ডায়েরিও করা হয়। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, “পরে ওই ব্যবসায়ীর থেকে পুরো বিষয়টি শুনে আমরাও অবাক হয়ে যাই। তদন্ত শুরু করি।” ওই ব্যবসায়ীও ভবানীভবনে গিয়ে বিষয়টি জানান। ওই ব্যক্তির বিবরণ শুনে সিআইডি-র অফিসারেরা জানান, কমল চৌধুরী সিআইডির প্রাক্তন ইনস্পেক্টর। ২০১২ সালে তিনি অবসর নিয়েছেন। পরে ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে বালি থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে কমলকে গ্রেফতার করে সিআইডি। |