|
|
|
|
|
ছড়া, কবিতায় মাতাতে
বয়সের ক্লান্তি তাঁর বাধা নয়
আশিস বসু • আগরতলা |
|
শরীরে ১৬-১৭টা অস্ত্রোপচারের ধাক্কা। ১৯৯২ সাল থেকে বিধানসভার সদস্য। বয়স সত্তরের উপরে। মুখে মুখে ছড়া তৈরি করতে পারেন। বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। সকাল আটটা থেকে রাত আটটা, নির্বাচনী প্রচারে শরীরের উপর ধকল যাচ্ছে খুব।
দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভর করেই মঞ্চে ওঠাবসা করতে হয় তাঁকে।
আর প্রায়শই তাঁকে ভর করে ‘বিতর্ক’ ছড়ায় রাজ্যে।
আসলে কবি-মন্ত্রী অনিল সরকারের সঙ্গে ‘বিতর্ক’ যেন ওতপ্রোত ভাবেই জড়িয়ে থাকে। আদর করে নিজের বাড়ির ‘পোষ্য’-টির নাম রেখেছিলেন ‘ব্রাহ্মণ’। আর তা নিয়ে রাজ্যে ঝড় উঠেছিল।
আবার নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত বনকুমারীতে শিবম হত্যার ঘটনায়ও অনিলবাবু ‘বিতর্কের’ কেন্দ্রে। ভোটের মুখে টাটকা চেহারায় আবার শিবম হত্যার ঘটনা তাড়া করে বেড়াচ্ছে সিপিএমকে। অনেকটা সেই সোমনাথবাবুর পিছনে সঞ্জীব-তীর্থঙ্করের মতো। ভোটের আগে অনিলবাবু অবশ্য শিবমের হত্যাকারীর ‘উপযুক্ত শাস্তি’ চেয়েছেন।
কিন্তু স্থানীয় থানার ভূমিকায় এলাকাবাসী বেজায় অসন্তুষ্ট। কবি-মন্ত্রীও তা জানেন।
|
অনিল সরকার
ছবি: উমাশঙ্কর রায়চৌধুরী |
তবে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে ভুলেও শিবম প্রসঙ্গ টানছেন না অনিলবাবু। বরং নিজের ঢঙেই প্রচার করছেন, ভোটারদের বলছেন, ‘‘আনন্দে থাকুন। বাউল, কীর্তন, সুফি, লালন গান, যাঁর যা পছন্দ গেয়ে যান।’’ অনিলবাবুর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে শান্তি-সম্প্রীতির বাতাবরণ না থাকলে মানুষের পক্ষে কি গান গাওয়া সম্ভব? সম্ভব নয়। আর সেই কারণেই বামফ্রন্ট সপ্তমবারেও প্রয়োজন।’’
বিবেকানন্দের সার্ধশতবর্ষ পালিত হয়েছে ত্রিপুরায় বেশ ঘটা করে। ভোটের প্রচারে আসছেন বিবেকানন্দ, তাঁর বাণী। কবি-মন্ত্রীর সহাস্য মন্তব্য, “ভোটের বাজারে বিবেকানন্দকেও ভালই বিকোচ্ছি।’’ বিবেকানন্দের বাণীকে আশ্রয় করে তিনি বলছেন, ‘‘ব্রাহ্মণের জ্ঞান, ক্ষত্রিয়ের সাহস, বৈশ্যের বাণিজ্য, শূদ্রের সাম্যমানুষের এই সব গুণাবলির উপযুক্ত বিকাশের পরিবেশ দিচ্ছে বামফ্রন্টই।’’
তাঁর প্রতাপগড় বিধানসভা কেন্দ্রের আড়ালিয়া, সুভাষনগর, পূর্ব প্রতাপগড়, বিবেকানন্দ নগর, মলয়নগর, সাধুটিলা, বনকুমারী, বাগাটিলার বাসিন্দারা তো পানীয় জলের সঙ্কট, রাস্তা ও নিকাশি ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা নিয়ে তিতিবিরক্ত। উমা সাহা, সমীর রায়, দেবল দাসরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, নড়বড়ে কাঠের সেতুর পরিবর্তে হাওড়া নদীর উপর কংক্রিটের ব্রিজের দাবি এলাকাবাসীর বহু দিনের। ২০ বছর ধরে টানা বামফ্রন্ট শাসনেও সেই দাবি পূরণ হচ্ছে না কেন? কেন এলাকা উন্নয়নে এত পিছিয়ে? প্রশ্ন তুলেছেন অনিলবাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী, কংগ্রেস প্রার্থী রঞ্জিৎ দাস।
সিপিএম এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। কী কী উন্নয়ন এলাকায় হয়েছে তার ফিরিস্তি কর্মীদের ঠোঁটের ডগায়। কিন্তু অনিলবাবু তা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাতে রাজি নন।
তাঁর সেই সহাস্য উত্তর, ‘‘গায়ে চামড়ার রোগ হলেও রোগীর হার্ট অ্যাটাক তো হয়নি। সেটাকে তো আটকানো গিয়েছে। বামফ্রন্টের এটাই তো বড় সাফল্য। ও সব সমস্যা ধীরে ধীরে মিটে যাবে।” অনিলবাবুর এই মনোভাবে গায়ে জ্বালা ধরে যাচ্ছে বিরোধীদের। ব্যক্তিগত আক্রমণে তাঁরা বলছেন, ‘‘অনিলবাবুর কবিসত্তা আসলে একটা ভড়ং।’’ হা-হা করে হেসে ওঠেন অনিলবাবু, ‘‘এসো ব্রাহ্মণ শুচি করি মন, ধর হাত সবাকার....। এই তো আমার মন্ত্র। এত বড় কথাই তো আমার আশ্রয়।” তিনি জানালেন, ত্রিপুরায় বাম জমানার প্রথম দিকে নিরক্ষর জনসাধারণ ও কোদাল, কাস্তে ছয়লাপ। সত্তরের শেষের দিকেও প্রশাসনে পাঁচ শতাংশের বেশি তফসিলি জাতি ও উপজাতির মানুষ ছিলেন না। এখন রাজ্য প্রশাসনে ১৭ শতাংশ তফসিলি জাতি ও উপজাতির মানুষ। এটা তো বামফ্রন্টের সাফল্য।
পশ্চিমবঙ্গ, কেরলে বাম শাসনের ছন্দপতনের কথা তিনি নিজেই মনে করিয়ে দেন, ‘‘ত্রিপুরার বামফ্রন্ট সরকার এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব দল ছাড়িয়ে, উঁকি মারে ভারতের আকাশে।’’ বয়স তাঁকে ঝিম ধরিয়ে দিলেও রাজ্যবাসীকে ছড়া, কবিতা দিয়ে মাতিয়ে রাখতে একটুও ‘ক্নান্ত’ নন তিনি। |
|
|
|
|
|