সংখ্যা অস্ত্রে লড়াই বিজেপির সঙ্গে
রুণ দশায় ‘ইকনমিক্স’। চাপের মুখে ‘পলিটিক্স’। ভরসা তাই এখন ‘স্ট্যাটিসটিক্স’।
অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়ে বিরোধী আক্রমণের মোকাবিলায় পরিসংখ্যানই হাতিয়ার এখন কংগ্রেস তথা ইউপিএ সরকারের।
গত কালই আর্থিক বৃদ্ধি ৫ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস ঘোষণা করছে সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিকাল অর্গানাইজেশন (সিএসও)। অর্থনীতির এই দৈন্যদশার জন্য মনমোহন সরকারের নীতিকে দায়ী করে আজ থেকেই মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপি। চাপের মুখে অর্থ মন্ত্রক তাই আজ সংখ্যাতত্ত্বের আশ্রয় নিয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের সাফাই, “প্রাথমিক পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এই পূর্বাভাস করা হয়েছে। অতীতে দেখা গিয়েছে, প্রথমে যা অনুমান করা হয়েছিল, পরে তার সংশোধন হয়েছে।” গত ছয় বছরের হিসেব দেখিয়ে অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, সিএসও-র প্রাথমিক অনুমানকে ছাপিয়ে গিয়েছে বৃদ্ধির বাস্তব হার। বিশ্বজনীন আর্থিক মন্দার বছরগুলিতেও মেলেনি তাদের পূর্বাভাস। এই বছর গুলিতে বৃদ্ধির হার তাদের প্রাথমিক অনুমানের চেয়ে অনেকটাই কমে গিয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের দাবি, এ বারও চূড়ান্ত হিসেবে বৃদ্ধির হার ৫.৫% বা তার থেকে বেশিই হবে।
সরকার অতীতের হিসেবকে ঢাল করলেও তাতে আমল দিতে রাজি নয় বিজেপি। অরুণ জেটলির অভিযোগ, টানা ৯ বছর ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও ইউপিএ সরকার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ব্যর্থ। এ জন্য দায়ী সরকারের নীতিপঙ্গুত্ব। বৃদ্ধির হারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব আয়ও কমবে। ফলে কর্মসংস্থান তো বটেই, সরকারের সামাজিক উন্নয়ন বা দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পেও কাটছাঁট হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাও কিন্তু সেই আশঙ্কা একেবারে খারিজ করে দিচ্ছেন না। তাঁরাও মানছেন, আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমে যাওয়ার ফলে সরকার আরও ‘কঠিন’ এবং ‘অপ্রিয়’ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে। আরও আর্থিক সংস্কার, বিদেশি লগ্নির অনুমতি এবং ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে হবে মনমোহন সিংহ, পি চিদম্বরমদের।
অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা রঘুরাম রাজনের কথায় আজ তারই ইঙ্গিত মিলেছে। রাজন বলেন, “বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের থেকে অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের অর্থনীতির যে ক্ষমতা রয়েছে, তাতে সঠিক নীতি নিলে বৃদ্ধি কমপক্ষে ৮ শতাংশে পৌঁছতে পারে।” কিন্তু কী সেই সঠিক নীতি? রাজনের ব্যাখ্যা, “রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ধার করে-করে ঘাটতি বাড়িয়ে গেলে চলবে না। লেনদেনের ঘাটতিও সামাল দিতে হবে।” অর্থাৎ সেই ব্যয়সঙ্কোচের কথাই বলছেন রাজন। মনমোহন-চিদম্বরম চাইছেন পেট্রোলিয়ামে ভর্তুকি আরও কমাতে। কমার সম্ভবনা প্রতিরক্ষা বরাদ্দও।
কংগ্রেসের অনেক নেতাই কিন্তু মনে করছেন, অর্থনীতির দোহাই দিয়ে সরকার যদি ডিজেল-রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানোর মতো একের পর এক কঠিন আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে থাকে, তা হলে আমজনতার ক্ষোভ বাড়বে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তা রাজনৈতিক আত্মহত্যার সামিল হবে। অর্থমন্ত্রী বাজেটের আগে প্রথামাফিক কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে এক বার বৈঠকে বসেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি সেই বৈঠক। ওই দিন কংগ্রেস নেতারা বাজেটে কিছু জনমোহিনী ঘোষণার জন্য অর্থমন্ত্রীর উপরে ফের একপ্রস্ত চাপ তৈরির চেষ্টা করবেন। এই ক্ষেত্রে আবার বৃদ্ধির ওই পূর্বাভাসকে শাপে বর হিসেবে দেখছেন অর্থ মন্ত্রকের একাংশ। তাঁদের ব্যাখ্যা, অর্থমন্ত্রী বাজেটে রাজকোষে ঘাটতির লক্ষ্মণরেখা পেরোতে নারাজ। ফলে জনমোহিনী বাজেট তৈরির জন্য দলের প্রবল চাপ সামলাতে এখন আর্থিক বৃদ্ধির করুণ দশাকে ঢাল করতে পারেন চিদম্বরম।
সিএসও-র অনুমান যেখানে ৫%, সেখানে অর্থ মন্ত্রক কী ভাবে ৮% হারে বৃদ্ধির দাবি করছে? রঘুরাম রাজনের যুক্তি, “সিএসও-র এই হিসেবের সমস্যাটা হল, এটা পুরনো পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে তৈরি। যখন অর্থনীতির মোড় ঘুরতে শুরু করেছে, সেই সময় পুরনো পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে হিসেব কষলে তা কম হতে বাধ্য।”
অর্থ মন্ত্রকের তরফেও আজ বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, সিএসও গত বছরের নভেম্বর অথবা ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হিসেব কষেছে। তাতেই চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ৫%-এ নেমে আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ওই সময়ের পরে কিন্তু অর্থনীতির ছবিটা অনেকটাই উজ্জ্বল হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে অর্থ মন্ত্রক বলছে, গত অক্টোবরের পর থেকে উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধি বেড়েছে। ডিসেম্বরে মূল্যবৃদ্ধির হার কমে এসেছে। তার ফলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমিয়েছে। যা বৃদ্ধির হারকে আরও কিছুটা উপরে ঠেলে তুলবে। অরুণ জেটলি যখন রাজস্ব আদায় নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন, তখন অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, এপ্রিল-ডিসেম্বর সময়কালে উৎপাদন শুল্ক ও পরিষেবা কর বাবদ আয় বরং আগের বছরের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে।
মন্ত্রকের আর একটি সূত্রের দাবি, গত অর্থবর্ষের মোট দেশীয় উৎপাদন বা জিডিপি-র সঙ্গে এ বছরের জিডিপি তুলনা করে বৃদ্ধির হার বার করা হয়। গত সপ্তাহেই সিএসও গত অর্থবর্ষের জিডিপি-র পরিমাণ সংশোধন করেছে। আগের হিসেবের তুলনায় জিডিপি বেড়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। ফলে এ বছরের সঙ্গে গত বছরের জিডিপি-র ফারাক কমে গিয়েছে। আর তাই বৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.