আকাশকন্যা ফিলিপিনোই, বললেন মা
তার জন্ম সংযুক্ত আরব আমির শাহির একটি সংস্থার বিমানে। চাইলেই সে ওই দেশের নাগরিকত্ব পেতে পারে।
তার জন্ম বাংলাদেশের চট্টগ্রামের আকাশে। ওই দেশের নাগরিক হতেও বিশেষ কোনও বাধা নেই তার।
তার জন্ম ফিলিপিন্সের বাবা-মায়ের সংসারে। স্বাভাবিক ভাবেই সে ফিলিপিনো বলে চিহ্নিত হতে পারে।
তার জন্ম নথিভুক্ত হয়েছে কলকাতায় নামার পরে। তাই সে ভারতের নাগরিক হতে পারে কি না, জল্পনা রয়েছে তা নিয়েও। তবে অন্য সব সম্ভাবনা ও জল্পনা নস্যাৎ করে দিয়ে ওই আকাশকন্যার মা শুক্রবার বলেন, “মেয়ের জন্য এত দেশের নাগরিকত্ব চাই না। সে ফিলিপিন্সেরই নাগরিক হবে।” কী নাম দিয়েছেন মেয়ের? ফিলিপিনো যুবতী ক্যামকো গিমনাসেপুল ভেদামাস মুচকি হেসে বললেন, “এখনও কিছু ঠিক করিনি।”
মেয়ের নাগরিকত্বের ব্যাপারে মনোভাব জানাতে কোনও দ্বিধা না-থাকলেও ঘটনার আকস্মিকতা আর নতুন পরিবেশ এখনও বিহ্বল করে রেখেছে ওই বিদেশিনিকে। অচেনা দেশ। অচেনা মানুষ। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে সেই অচেনাকেই চিনে নিতে চাইছেন বছর তিরিশের ভেদামাস। কেউ সামনে এলেই লাজুক সুরে বলছেন, “আমি বাড়ি যাবো। আমি বাড়ি যেতে চাই।”
আকাশকন্যার মা। —নিজস্ব চিত্র
কোথায় কয়েক হাজার মাইল দূরে তাঁর সাগরপারের শহর ম্যানিলা! আর কোথায় কলকাতা! আগে এই শহরের নামও শোনেননি। বললেন, “আমার ভাগ্যই টেনে এনেছে এখানে।”
সেই টেনে আনাটা কী রকম?
বৃহস্পতিবার দুবাই থেকে ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় যাচ্ছিলেন ভেদামাস। মাঝ-আকাশে বিমানের মধ্যেই শুরু হয় প্রসবযন্ত্রণা। আকাশেই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। শুক্রবার ভিআইপি-রাজারহাট সংযোগস্থলে একটি হাসপাতালে শুয়ে ভেদামাস বললেন, “পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিলাম। এমনটা যে ঘটবে, ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি।”
বিমানের ভিতরে আচমকা ব্যথা ওঠা, চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে কন্যাসন্তানের জন্মদান, কলকাতায় জরুরি অবতরণ, অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে ভিআইপি মর্যাদায় হাসপাতালে আসা একের পর এক ঘটনা ঘোরের মধ্যে ঘটে গিয়েছে। এ দিন সকালে সামান্য থিতু হওয়ার পর থেকেই তাঁর দু’চোখে ভর করেছে অসহায়তার ছবি। হাসপাতালের নার্স, কর্মী-অফিসারেরা আশ্বাস দিচ্ছেন। তবু শান্ত হতে পারছেন না ভেদামাস। বুঝতে পারছেন, হাসপাতালে থাকতে হবে আরও কয়েকটা দিন। ভরসার কথা একটাই, ভারতে থাকার জন্য রবিবার পর্যন্ত যে অস্থায়ী ভিসা তাঁকে দেওয়া হয়েছিল তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
কেমন আছে শিশুটি? চিকিৎসকেরা জানান, জন্মের সময় শিশুটির ওজন ছিল এক কিলোগ্রাম ৯০০ গ্রাম। অপরিণত শিশুটিকে হাসপাতালে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। মায়ের শয্যাতেও দেওয়া হচ্ছে না তাকে। ভেদামাসই মাঝেমধ্যে গিয়ে দেখে আসছেন মেয়েকে। শিশুরোগের চিকিৎসক দ্বৈপায়ন ঘটক জানান, এই অবস্থায় শিশুটিকে নিয়ে বিমানযাত্রায় ঝুঁকি আছে। তা ছাড়া বিমানে শিশুটির জন্ম হওয়ায় তার শরীরে কোনও সংক্রমণ ঘটেছে কি না, তা-ও যাচাই করা দরকার। তাই ভেদামাসকে আরও কয়েকটা দিন থাকতে হতে পারে অচেনা শহরের হাসপাতালে।
তার পরে কী করতে চান?
ভেদামাস বললেন, “দুবাইয়ে যেখানে চাকরি করতাম, ওরা বলেছে, ফিরলে ওখানেই চাকরি করতে পারব। তবে আর দুবাইয়ে ফেরার ইচ্ছা নেই।” ফিলিপিন্সের গরিব ঘরের মেয়ে ভেদামাস রুজির টানে চলে গিয়েছিলেন দুবাইয়ে। কাজ করতেন বিউটি পার্লারে। স্বামীও এক সময় দুবাইয়ে তাঁর সঙ্গে থাকতেন। কাজ করতেন। গত অগস্টে দুবাইয়ের কাজ ছেড়ে স্বামী ফিরে গিয়েছেন ম্যানিলায়। পাকাপাকি ভাবে ম্যানিলায় স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার জন্যই বুধবার মাঝরাতে দুবাই থেকে বিমানে ওঠেন ভেদামাস। মাঝখানে সন্তান লাভ। তাকে নিয়ে দেশে ফেরাই তাঁর লক্ষ্য, জানালেন ওই বিদেশিনি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.