|
|
|
|
কুঠিবাড়িতে হবে বিশেষ প্রদর্শশালা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শান্তিনিকেতন |
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুরুল কুঠিবাড়ি ক্রয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে ওই বাড়ির তিনতলায় (যা ‘কবিকক্ষ’ নামে পরিচিত) একটি বিশেষ প্রদর্শশালা তৈরি হবে বলে ঘোষণা করলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত।
শুক্রবার শ্রীনিকেতনের পল্লিসংগঠন বিভাগের সেমিনার হলে কুঠিবাড়ি ক্রয়ের শতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত একটি আলোচনাসভায় তিনি এ কথা ঘোষণা করেন। রবীন্দ্রনাথের গ্রামোন্নয়ন ও পল্লি সংগঠন ভাবনাকে আরও সুদূর প্রসারী করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে বিশ্বভারতী। শ্রীনিকেতনের বিভিন্ন বিভাগ, ভবনগুলিকে ঢেলে সাজা ছাড়াও রবীন্দ্রস্মৃতি জড়িত কুঠিবাড়িকে ঘিরেও বিশেষ পরিকল্পনা নিচ্ছেন তাঁরা। বর্তমানে ওই কুঠিবাড়িটিকে পল্লি সংগঠন বিভাগ ও পল্লি সম্প্রসারণ কেন্দ্র এবং নিরাপত্তা ও জনসংযোগ বিভাগের দফতর হিসাবে ব্যবহার করে বিশ্বভারতী। কবিকক্ষে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহার করা বেশ কিছু জিনিসপত্র ও আসবাব সংরক্ষিত করা আছে। |
চলছে সংস্কার। নিজস্ব চিত্র। |
আলোচনাসভার যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক সুজিতকুমার পাল ও রফিকুল ইসলাম বলেন, “শ্রীনিকেতনকে ঢেলে সাজার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের পল্লি উন্নয়ন ও পুনর্গঠন ভাবনাকে সুদূরপ্রসারী করতে উপাচার্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। তারই অন্যতম, সুরুল কুঠিবাড়িকে ঘিরে একটি বিশেষ প্রদর্শশালা গড়ে তোলা। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে শুরু হওয়া প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ শেষ হলেই পরিকল্পনাগুলি দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।”
প্রসঙ্গত, ১৮৪৫ সালে বর্ধমানের খানা জংশন থেকে সাঁইথিয়া পর্যন্ত রেলের লুপ লাইন বসানোর সময় সুরুল গ্রামের কাছে রেল কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ারের জন্য একটি দোতলা পাকা বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল। কালক্রমে সেই বাড়িটিই সুরুল কুঠিবাড়ি নামে পরিচিতি পায়। বোলপুর রেলস্টেশন চালু হওয়ার (১৮৫৮) পরে ব্রিটিশ রেল কোম্পানি ১৮৯৬ সালে ওই কুঠিবাড়ি ও সংলগ্ন কয়েক বিঘা পতিত জমি স্থানীয় রায়পুর গ্রামের জমিদার স্মিতিকণ্ঠ সিংহের দুই ছেলে নরেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ ও সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহকে বিক্রি করে দেয়। দীর্ঘ দিন পরিত্যক্ত থাকার পর, ১৯১২ সালের ১৬ অক্টোবর ইংল্যান্ডে থাকার সময় রবীন্দ্রনাথ নরেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহের কাছ থেকে ৮ হাজার টাকায় সুরুল কুঠিবাড়ি ও সংলগ্ন জমি কিনে নেন। সেই কুঠিবাড়ি থেকেই শুরু হয় তাঁর পল্লি উন্নয়ন ও পুনর্গঠন ভাবনার বাস্তব রূপদান।
১৯১৫ সালে আরও ২০ হাজার টাকা খরচ করে বাড়িটি সংস্কার করান রবীন্দ্রনাথ। তৈরি হয় তিনতলার ঘর। কিনে ফেলেন লাগোয়া আরও কিছু জমি। ১৯১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে সেখান থেকে পল্লি পুনর্গঠন ও গ্রাম সংস্কারের কাজ শুরু করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বহু ইতিহাসের সাক্ষ্মী এই সুরুল কুঠিবাড়ি। ১৯১৫ সালে ফাল্গুনি নাটক, ১৯১৬ সালে বলাকা কাব্যগ্রন্থের দশটি কবিতা রচনা হয়েছিল এই কুঠিবাড়িতেই। এ ছাড়া রবীন্দ্রনাথের মেয়ে মীরাদেবী, জামাই নগেন্দ্রনাথ, পুত্র রথীন্দ্রনাথও এক সময় এখানে বাস করেছেন।
১৯৩৯ সালের ২৫ জুন থেকে ১৭ জুলাই শেষবারের মতো এই কুঠিবাড়িতে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তৈরি করেছিলেন ডাকঘর নাটকের ছ’টি গান। এ দিনের আলোচনাসভায় উপাচার্য ছাড়াও ছিলেন বিশ্বভারতীর দুই প্রাক্তন অধ্যাপক প্রবীর দাশগুপ্ত ও দেবব্রত দাশগুপ্ত, প্রাক্তন সহ-উপাচার্য উদায়নারায়ণ সিংহ, রবীন্দ্রভবনের অধিকর্তা তপতী মুখোপাধ্যায়, ইন্দিরা গাঁধী কেন্দ্রের অধিকর্তা সবুজকলি সেন-সহ বহু বিশিষ্ট জন। |
|
|
|
|
|