প্রায় সাত মাস ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে একশো দিনের কাজ। এমনকী পঞ্চায়েতের কাছে বারবার আবেদন করেও কোনও সুরাহা মিলছে না বলে অভিযোগ। এই দশা মানকর পঞ্চায়েতের মাড়ো গ্রামের বাসিন্দাদের। তাঁরা জানান, পঞ্চায়েত কোনও ব্যবস্থা না নিলে জেলাশাসকের কাছেও দরবার করবেন তাঁরা।
কিন্তু এতদিন ধরে একশো দিনের কাজ বন্ধ কেন? জবাবে সিপিএম পরিচালিত মানকর পঞ্চায়েতের প্রধান সুরজিৎ বাউড়ি শুধু জানান, টাকার অভাবে এখন কাজ বন্ধ। কিন্তু প্রায় মাড়ো গ্রামে আটমাস কাজ না হওয়ার অভিযোগ মানতে চাননি জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা। তিনি বলেন, “ওয়েবসাইটের পরিসংখ্যানে ২৬ লক্ষের মধ্যে ২৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার কাজ করানোর হিসেব দিয়েছে মানকর পঞ্চায়েত। কাজেই অর্থ নেই এই অভিযোগ ঠিক নয়।” জেলা পর্যায়ের এক আধিকারিকও জানান, যে সমস্ত পঞ্চায়েত আগের খরচের আশি শতাংশ পর্যন্ত হিসাব ওয়েবসাইটে আপডেট করেছে তাদের পরবর্তী পর্যায়ের অর্থ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে মানকর পঞ্চায়েত ওই নিয়ম মেনেছে কি না তা তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। জেলাশাসক জানান, কেন্দ্র থেকে অর্থ আসতে দেরি হওয়ায় পঞ্চায়েতে অর্থ যেতে দেরি হয়েছে।
গলসি ১ ব্লকের মানকর পঞ্চায়েতের মাড়ো গ্রামে প্রায় চার হাজার বাসিন্দা বাস করেন। তাঁদের অধিকাংশ কৃষির উপর নির্ভরশীল হলেও একশো দিনের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে অনেকেই এই কাজে যোগ দিয়েছেন। বর্তমান জব কার্ড হোল্ডারের সংখ্যাও প্রায় সাড়ে আটশো। কিন্তু গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রায় সাতমাস ধরে এখানে একশো দিনের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। ফলে গ্রামের উন্নয়নও স্তব্ধ। তাঁরা আরও জানান, এমনিতেই গ্রামের মানুষদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা উন্নত নয়। তার উপরে একশো দিনের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের হাল ক্রমেই আরও খারাপ হচ্ছে। গ্রামেরই তপন রুইদাস, রাতু মেটে, নারায়ণ মেটে’রা বলেন, “একশো দিনের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের রুজি রোজগারও বন্ধ। খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।” অবিলম্বে কাজ চালু করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
একশো দিনের প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। গ্রামের এক মুদি দোকানের মালিক হরপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একশো দিনের কাজ যখন চলছিল তখন সবার হাতেই কমবেশি টাকা ছিল। ফলে আমাদের ব্যবসাও ভালই চলছিল। কিন্তু কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসাও মার খাচ্ছে।” মাড়ো গ্রামের তৃণমূল নেতা বাপ্পাদিত্য রায়ের অভিযোগ, তাঁরা বছরে ন্যূনতম কাজটুকুও পাচ্ছেন না। ফলে বিপদে পড়ছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। চলতি আর্থিক বছরে কর্মদিবসও খুব কম ছিল বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, “গ্রামের মানুষের স্বাক্ষর করা অভিযোগপত্র গত ২৩ অগস্ট ২০১২ সালে আমরা বিডিওর কাছে জমা দিয়েছিলাম। এছাড়া মৌখিক ভাবেও কাজ শুরুর আবেদন জানানো হয়েছিল।”
|