ফের ধস কালিপাহাড়িতে, ফাটল জমি ও ৭ বাড়িতে
ফের ধস নামল আসানসোলে। শুক্রবার সকালে আসানসোলের কালিপাহাড়ি সংলগ্ন তুড়িপাড়া এলাকায় প্রায় সাতটি বাড়ির দেওয়াল ও মেঝেতে ফাটল দেখা যায়। বিস্তীর্ণ এলাকার জমি জুড়েও এক ইঞ্চি চওড়া ফাটল দেখা যায়। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। আসানসোল মহকুমা প্রশাসন ও ইসিএল কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এলে তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে আসতে হয় আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের ডিসিপি শীষরাম ঝাঝাড়িয়া ও এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশকুমার চাডিয়াকে। কিছুক্ষণের জন্য ইসিএল কর্তৃপক্ষকে গৃহবন্দি করে রাখেন বিক্ষুব্ধরা। পরে ইসিএলের তরফে অস্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেওয়া হলে বিক্ষোভ থামে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ তাঁরা মাটি ফাটার আওয়াজ পান। কিছু একটা হচ্ছে বুঝতে পেরেই ঘর ছেড়ে বাইরে এসে তাঁরা দেখেন, বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে মাকড়সার জালের মতো মাটি ফাটছে। কিছু অঞ্চল বসে যাচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যেই আশেপাশের কয়েকটি বাড়ির দেওয়াল ও মেঝে ফেটে চৌচির হয়ে যায়। স্থানীয় লক্ষ্মী তুড়ি বলেন, “তখনও আমাদের ঘুম ভাঙেনি। ঘরের মেঝেতে ফাটল ধরছে দেখেই সবাইকে নিয়ে হুড়মুড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। দেখলাম আশপাশের জমিও বসে গিয়েছে।” অপর এক বাসিন্দা পুতুল মাহাতো জানান, তিনি ঘরের সামনের কলে জল আনতে গিয়েছিলেন। আচমকা দেখেন কলটা হেলে পড়ল। সামনের জমির বেশকিছুটা অংশেও চওড়া ফাটল দেখা যায়। তিনি বলেন, “আগেও এরকম কয়েকবার ঘটেছে। তাই বুঝলাম জমিতে ধস নেমেছে।”
রাস্তায় ফাটল।
এই অঞ্চলটি আসানসোল পুরসভার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। প্রায় ৬৬টি পরিবারের বাস এখানে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে চলে আসেন আসানসোলের মেয়র তথা এলাকার বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় ও চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারি। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন। তখনই ঘটনাস্থলে পৌঁছন ইসিএলের কালিপাহাড়ি কোলিয়ারির পিএম (আইসি) টিএন মৈত্র ও এজেন্ট অনির্বাণ রায়চৌধুরী। আসতেই বিক্ষোভের মুখে পড়েন তাঁরা। পুরসভার চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারি ও মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে স্থানীয় বাসিন্দারা ইসিএল কর্তৃপক্ষকের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবি জানাতে থাকেন। জিতেন্দ্রবাবু এবং তাপসবাবুর উপস্থিতিতেই দুই ইসিএল কর্তাকে বেশ কিছুক্ষণ একটি ঘরে বন্ধও করে রাখেন বিক্ষুব্ধরা। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়। নিয়ন্ত্রণ আনতে ঘটনাস্থলে আসেন আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের ডিসিপি শীষরাম ঝাঝাড়িয়া ও এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশকুমার চাডিয়া। ছাড়া পান দুই ইসিএল আধিকারিক। এর মধ্যেই ঘটনাস্থলে চলে আসেন আসানসোলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট প্রদীপ অগ্রবাল। স্থানীয় বাসিন্দা তথা তৃণমূল নেতা বাদল মিশ্র দাবি তোলেন, “স্থানীয়দের অস্থায়ী পুনর্বাসন ও সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ইসিএলের আধিকারিকদের সেখান থেকে যেতে দেওয়া হবে না।”
স্থানীয়দের বিক্ষোভ।
চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারি দাবি তোলেন, এলাকার ৬৬টি পরিবারকে ইসিএল কর্তৃপক্ষের তরফে দু কাঠা করে জমি দিতে হবে ও বাসস্থান বানিয়ে দিতে হবে। ইসিএলের তরফে এই বিষয়গুলি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয় ও এলাকায় অস্থায়ী ত্রাণ শিবির তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্তদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এরপরেই বিক্ষোভ থামে। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট প্রদীপ অগ্রবাল জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য ইসিএল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। বিস্তারিত রির্পোট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
কিন্তু মাঝেমধ্যেই ধস নামার কারণ কী? মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মাটির তলার কয়লা কেটে নেওয়ার পর ফাপা অংশে বালি ভরাট করা হয়নি। তাই মাঝে মাঝেই এ সব অঞ্চলে ধস নামছে।” ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেসরকারি আমলে এই খনিগুলি থেকে নানা স্তরে কয়লা কেটে তোলা হয়। কিন্তু বালি ভরাট করা হয়নি। ফলে গোটা অঞ্চল ধসপ্রবণ হয়ে আছে। ১৯৯৭ সালে ডিজিএমএস এই অঞ্চলটিকে ধসপ্রবন ও বিপজ্জনক বলে ঘোষণাও করেছে। ডিজিএমএসে এই এলাকা কালিপাহাড়ির ১৫ নম্বর বস্তি ও লোকেশন নম্বর ১৮তে ধসপ্রবণ বলে চিহ্নিত রয়েছে।

ছবি: শৈলেন সরকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.