রাতে পুলিশের ভ্যান গ্রামে একবার ঘুরে গেলেও কোনও খোঁজ নেয়নি। এমন কী, প্রশাসনের কেউই হবিবপুরে ডাইনি অপবাদ দেওয়া পরিবারের খোঁজ নিতে যায়নি। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে হবিবপুরের মনোহরপুর গ্রামের আদিবাসী লক্ষী মুর্মুর পরিবার। উল্টে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য অভিযুক্তরা ভয় দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতির জেরে ওই পরিবারের কেউ গ্রামের বাইরে বার হতে সাহস পাচ্ছে না। হবিবপুর-এর বিডিও অর্ণব রায় বলেন, “ওই আদিবাসী পরিবারের উপর ফের যাতে কেউ হামলা না করতে পারে সে জন্য পুলিশি নজরদারি চলছে। এ দিন ব্লকের কাজ ও কর্মীর অভাবের জন্য ওই গ্রামে কেউ যেতে পারেননি। আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, “অভিযুক্তদের ধরার জন্য তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। গ্রামে নজরদারি চলছে।”
বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ মনোহরপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গিয়েছে পরিবারের বাড়িতে তালা ঝুলছে। আশেপাশের বাড়ির লোকজন কেউ কিছু জানাতে পারেননি। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় ছোট মেয়েকে নিয়ে লক্ষী মুর্মু বাড়িতে ঢোকেন। তালা খুলতেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসে ডাইনি অপবাদে ভীত, আতঙ্কিত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কিশোরী। কাঁদতে কাঁদতে কিশোরী বলে, “রাতে একটা পুলিশ ভ্যান গ্রামে এসেছিল। আমাদের সঙ্গে কোনও কথা না বলে অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। ২৫ তারিখ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা। কী ভাবে পরীক্ষা দেব বুঝতে পারছি না। অভিযুক্তরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রচণ্ড চাপ দিচ্ছে।”
বুলবুলচন্ডী পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সিপিএমের প্রধান বিমলা মুর্মু বলেন, “ওরা মিথ্যা বলছে। ওদের কেউ ভয় দেখাচ্ছে না। গ্রামের ছেলেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করায় গ্রামের সবাই ওদেরকে একঘরে করে রেখেছে। গ্রামবাসীরা চাইলে ওদের গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করতে পারে। তা তো হয়নি। সব মনগড় কথা।” আর একই সুরে কথা বলেছেন পঞ্চায়েত প্রধান বিজেপি’র নির্মল সোরেন। তিনি বলেন, “পরিবারটি ভাল নয়। তাই একঘরে হয়ে রয়েছে। মামলা না তুললে ওদের সঙ্গে গ্রামের কেউ মিশবে না।”
ওই কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা ছাড়াও ডাইনি অপবাদ দেওয়া হয়। তাঁর মা’কেও একই অপবাদ দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, তাঁদের বাড়িতে লুঠপাট চালিয়ে আগুন ধরানো হয়। পরিবারটির অভিযোগ, তাঁদের ছয় বিঘা কেড়ে নেওয়ার জন্য একটা চক্রান্ত চলছে। ইতিমধ্যে ছয় জন অভিযুক্ত আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। |