মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে ঘটা করে অবজার্ভেশন ওয়ার্ডের উদ্বোধন করিয়েও রোগী প্রত্যাখান কমাতে পারল না এসএসকেএম হাসপাতাল। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগীকে সুস্থ করে ছাড়া বা স্থিতিশীল করে অন্য ওয়ার্ডে পাঠানোর যে উদ্দেশ্যের কথা ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৪০ শয্যার ওই ওয়ার্ডটির উদ্বোধন করেছিলেন, তার ছিটেফোঁটাও মানা হচ্ছে না। ফলে হাসপাতালের আর পাঁচটি ওয়ার্ডের তালিকায় ওই ওয়ার্ডটি স্রেফ একটি সংযোজন হিসেবেই থেকে গিয়েছে। উপরন্তু, ওই ওয়ার্ডের জন্য বাড়তি নার্স বা চিকিৎসক না আসায় পরিস্থিতি সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিচর্যা তো দূর অস্ৎ, ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীরা ঠিক সময়ে ওষুধ, ইঞ্জেকশনটুকুও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী না থাকায় দিনের পর দিন ওয়ার্ড পরিষ্কার করা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে গোড়াতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের এই নয়া ‘শো কেস’। এখনও প্রতি দিন গড়ে ৮ থেকে ১০ জন রোগীকে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
অবজার্ভেশন ওয়ার্ডটির উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা দাবি করেছিলেন, রোগী প্রত্যাখান ঠেকাতে নতুন দিশা দেখাবে এই ওয়ার্ড। কোনও রোগী এলে তাঁকে স্থিতিশীল না করে এ বার আর অন্যত্র পাঠানো হবে না। জানিয়েছিলেন, অবজাভের্শন ওয়ার্ডে রোগীর থাকার মেয়াদ বড় জোর ৪৮ ঘন্টা। হয় তার মধ্যে রোগীকে সুস্থ করে ছেড়ে দেওয়া হবে, নয় তো রোগ নির্ণয় করে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হবে।
বাস্তবে কী হচ্ছে? ইমার্জেন্সির পাশের এই ওয়ার্ডটি সাধারণ ওয়ার্ডের পরিবর্ধিত অংশ হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। যাঁদের ভর্তি করা হচ্ছে, তাঁদের আর অন্য ওয়ার্ডে পাঠানোর কোনও ব্যবস্থাই হচ্ছে না। ফলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শয্যা ফাঁকা হওয়ার সুযোগই তৈরি হচ্ছে না। কেন এমন পরিস্থিতি? এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, “ওয়ার্ডটি যথাযথ ভাবে চালানোর জন্য বিভিন্ন বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসকদের সাহায্য প্রয়োজন। নিরবচ্ছিন্ন ফলো আপ ছাড়া রোগী ভর্তি ও ছুটি দেওয়া সম্ভব নয়। স্থির হয়েছিল, অবজার্ভেশন ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে স্থানান্তরের অগ্রাধিকার থাকবে। কিন্তু সে ব্যাপারে সিনিয়র চিকিৎসকদের অনেকেই সহযোগিতা করছেন না।”
অন্য সমস্যাও রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী, ৪০ শয্যার একটি নতুন ওয়ার্ড চালু করতে গেলে তিনটি শিফ্টের জন্য অন্তত ১৫ জন নতুন নার্স প্রয়োজন। অথচ এক জনকেও পাওয়া যায়নি। ১০ জন চিকিৎসকের জন্য ফাইল পাঠানো হয়েছে বহু দিন। মেলেনি বাড়তি চিকিৎসকও। এমনকী, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও পাওয়া যায়নি। ফলে কোনও রকমে ঠেকা দিয়ে একটি ওয়ার্ড চালাতে গেলে যা হয়, তা-ই হচ্ছে। কখনও চিকিৎসক রোগী দেখতে আসছেন না বলে অভিযোগ উঠছে, কখনও আবার নার্স ওষুধ দিতে ভুলে গিয়েছেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন রোগীর আত্মীয়েরা। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, “এই ওয়ার্ড আমাদের মাথা ব্যথার নতুন কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।”
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অন্যতম বড় সমস্যা রোগী প্রত্যাখান। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও হাসপাতালগুলি নির্বিচারে রোগী প্রত্যাখান করে। কী ভাবে এটা বন্ধ করা যায়, তা জানতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়েছিলেন মমতা। সেই কমিটির সুপারিশে অনুসারেই অবজার্ভেশন ওয়ার্ড চালু হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। গোড়া থেকেই তা উল্টো পথে হাঁটায় কী বলছেন স্বাস্থ্যকর্তারা?
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সুব্রত মৈত্র বলেন, “ভাবনাটি নতুন। যে কোনও নতুন বিষয় মানতে-বুঝতে সময় লাগে। আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। কর্মী সমস্যা মিটতেও মাস খানেক সময় লাগবে। এগুলি হয়ে গেলে তরতর করে এগোবে এই প্রকল্প। রাজ্যকে পথ দেখাবে এসএসকেএম।” |