ভিটামিন তেল পাচ্ছে না শিশুরা
রাজ্যের কয়েক লক্ষ নবজাতক ও শিশুকে গত প্রায় আট মাস ধরে ভিটামিন-এ তেল খাওয়ানো যাচ্ছে না। রুটিন টিকাকরণের অত্যাবশ্যক অনুষঙ্গ হিসেবে এই তেল শিশুদের খাওয়ানো হয়। অথচ, এই অতি গুরুত্বপূর্ণ তেল এই মুহূর্তে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ভাঁড়ারে নেই।
রাজ্য টিকাকরণ আধিকারিক সুকান্ত শীল বলেন, “বাগবাজারে স্বাস্থ্য দফতরের স্টোরে এখন এক ফোঁটাও ভিটামিন-এ তেল নেই। ফলে কয়েক মাস ধরে জেলাতেও তা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। অধিকাংশ সরকারি জায়গা থেকে কোনও শিশুকে এই তেল খাওয়ানো যাচ্ছে না।”
অথচ শিশুদের অপুষ্টি রোধে এই তেল জরুরি। পশ্চিমবঙ্গে শিশুদের মধ্যে যেখানে অপুষ্টির হার প্রায় ৩৮ শতাংশ, সেখানে শিশুরা কেন ভিটামিন-এ তেল পাচ্ছে না?
রাজ্য টিকাকরণ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এই তেল আগে সরবরাহ করত কেন্দ্র। বছর দেড়েক আগে থেকেই ভিটামিন-এ তেলের সরবরাহ অনিয়মিত হতে থাকে। এ নিয়ে অনেক চিঠিচাপাটিও হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। মাস আটেক আগে দিল্লি থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তারা আর ভিটামিন-এ তেল পাঠাবে না। গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের (এনআরএইচএম) টাকা থেকে রাজ্যকেই তা কিনে নিতে হবে। কিন্তু গত আট মাসে তেল কেনার সংস্থা ঠিক করতে পারেনি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ফলে রাজ্যে সরকারি স্তরে শিশুদের ভিটামিন-এ তেল খাওয়ানো বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
কেন এত দিনেও তেল কেনার কোনও সংস্থা খুঁজে পেল না রাজ্য?
সুকান্তবাবুর যুক্তি, “এখানে যে ক’টি ভাল মানের সংস্থা রয়েছে, তারা হয় ভিটামিন-এ তেলের ক্যাপসুল বা ইঞ্জেকশন তৈরি করে। ছোট শিশুকে ক্যাপসুল খাওয়ানো যায় না। তাদের ওই সময় রুটিন টিকা চলে বলে এই তেলের জন্য আলাদা করে ইঞ্জেকশন দেওয়ারও নিয়ম নেই। সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরের তালিকাতেও এত দিন এই তেল সরবরাহকারী কোনও সংস্থার নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল না।”
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ভিটামিন-এ তেল কেনার জন্য তিন বার দরপত্র ডেকেছিল রাজ্য হেল্থ সার্ভিস কর্পোরেশন। কোনও সংস্থাই তাতে অংশগ্রহণ করেনি। উপায় না দেখে হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বীরভূমের মতো কয়েকটি জেলা নিজেরাই স্থানীয় সংস্থা ঠিক করে ভিটামিন-এ তেল কেনে। কিন্তু সেই তেলের মান পছন্দ হয়নি স্বাস্থ্য দফতরের। তাই জেলাগুলিকে স্থানীয় ভাবে তেল কিনতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে সঙ্কট আরও বেড়েছে।
পাঠাতে নারাজ কেন্দ্র
ভিটামিন-এ কেন জরুরি? ভিটামিন-এ র ডোজ
• অপুষ্টি কমে
• ডায়েরিয়া-সহ বিভিন্ন রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
• শরীর থেকে প্রোটিন ক্ষয় আটকায়
• অন্ধত্ব অনেকাংশে নিবারণ হয়
• ৫ বছর বয়স পর্যন্ত ৯টি ডোজ
• প্রথম ডোজ শিশুর ৯-১২ মাস
বয়সে হামের টিকার সঙ্গে
• শেষ ডোজ শিশুর ৬০ মাস বয়সে
রাজ্য টিকাকরণ দফতরের কর্তারা জানান, চতুর্থ দরপত্র ডাকার পর এত দিনে কয়েকটি সংস্থাকে বাছাই করা হয়েছে। তবে সব নিয়মকানুন মেনে তাদের কাছ থেকে তেল কিনতে-কিনতে মার্চ মাস গড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ, আরও অন্তত তিন মাস বহু শিশু এই তেল পাবে না।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, পশ্চিমবঙ্গ ভিটামিন-এ তেল কিনতে পারছে না জেনেও কেন্দ্র কেন চুপ করে আছে। শিশুদের স্বার্থে তারা কেন তেল সরবরাহে এগিয়ে আসেনি?
উত্তরে কেন্দ্রের শিশু স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি কমিশনার শীলা দেব বলেন, “আমরা তেল সরবরাহ বন্ধ করে শুধু টাকা দিয়ে দিচ্ছি। কারণ, বিভিন্ন সংস্থার থেকে তেল নিয়ে রাজ্যগুলিতে পাঠাতে অনেক দেরি হয়ে যায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ যে তেল কেনার মতো সংস্থাই খুঁজে পাচ্ছে না, সেটা আমাদের জানায়নি। সমস্যার কথা জানলে তবে তো সাহায্য করব!” সুকান্তবাবুর অবশ্য পাল্টা দাবি, “চিঠির পর চিঠি লিখে পরিস্থিতি জানিয়েও কেন্দ্রের সাড়া মেলেনি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.