বাড়িতে আগুন লেগে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল এক প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের। বুধবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটে ধূপগুড়ি থানার মল্লিকসভা গ্রামে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম রহমতুল আলম (৪২)। তিনি দেবীডাঙ্গা প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। যে ঘর থেকে তাঁর দগ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়েছে তার পাশের ঘরে শিক্ষকের স্ত্রী ও দুই সন্তান ছিলেন। তাঁরা আগুনের আঁচ পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। ওই শিক্ষক নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খেতেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। কিন্তু ঘরে আগুন কিভাবে লাগল তা নিয়ে ধন্দ্বে পড়েছে পুলিশ। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “ওই শিক্ষক ঘুমের ওষুধ খেয়ে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। আগুন কিভাবে লাগল তা জানতে বিশদে খোঁজখবর করা হচ্ছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার রাত ১০টা নাগাদ খাবার খেয়ে ঘর বন্ধ করে শুয়ে পড়েন রহমতুলবাবু। পাশের ঘরে আট বছরের মেয়ে ও পাঁচ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রী আইরিননাস পারভিন প্রামাণিক। রাত ১২টা নাগাদ ঘরের ভেতর ধোঁয়ার গন্ধে তার ঘুম ভেঙে যায়। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, পাশের স্বামীর ঘরে আগুন জ্বলতে দেখেন তিনি। স্বামীকে ডেকে তোলার জন্য দরজা ধাক্কা দিলেও ভেতর থেকে তা বন্ধ ছিল। |
আগুনে পুড়েছে বাড়ি। বৃহস্পতিবার ধূপগুড়িতে রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি। |
আইরিননাস বাইরে বেরিয়ে চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকতে শুরু করেন। প্রতিবেশীরা গিয়ে শিক্ষকের ঘরের দরজা ভাঙার চেষ্টা করে। সেই সময় রান্না ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে থাকা গ্যাস সিলিণ্ডার ফেটে আগুন দ্রুত ছড়াতে থাকে। কাঠের তৈরি বাড়িটির ৬টি ঘর মুহূর্তে পুড়ে যায়। ঘন্টাখানেক বাদে ধূপগুড়ি থেকে দমকলের দুটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে স্ত্রীর সঙ্গে ওই শিক্ষকের বনিবনা হচ্ছিল না। বছর দুয়েক আগে বধূ নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতার হন রহমতুল আলম। সে সময় প্রায় দেড় মাস তিনি জেলে বন্দি ছিলেন। পরে জামিনে ছাড়া পান। জেল থেকে ফেরার পর প্রতিবেশীদের মধ্যস্থতায় ফের স্বামী ও স্ত্রী ঘর করতে শুরু করেন। ওই এলাকার বাসিন্দা তথা সাঁকোয়াঝোরা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য অতুলকুমার রায় বলেন, “ওই ঘটনার পর পারিবারিক অশান্তি তেমন ভাবে লক্ষ করা না গেলেও সিগারেটের নেশা শুরু করেন তিনি। রাতে ওষুধ ছাড়া ঘুমোতে পারতেন না বলে শুনেছি।” প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রাতে ঘুমের ঘোরে সিগারেটের আগুন নেভাতে ভুলে যাওয়ার ফলে বিছানা থেকে সারা ঘরে আগুন ছড়ায়। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে মালবাজার থেকে ঘটনাস্থলে যান মৃত শিক্ষকের দাদা রফিকূল ইসলাম। তাঁর কথায়, “এক মাস আগে বাবা মারা গিয়েছেন। এ বারে যে ভাবে দাদা মারা গেলেন তা কিছুতে মানতে পারছি না। সে ঘুমের ওষুধ বা নেশা করত বলে কখনও শুনিনি।” |