দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পরেও রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রীর নির্দেশে বস্তি-ক্রীড়া বন্ধ করে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে চিত্রতারকাদের ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরব শিলিগুড়ি পুরসভার বিরোধী বামেরা। ১০ ফেব্রুয়ারি কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ওই ম্যাচের আয়োজন হয়েছে।
৮ এবং ৯ ফেব্রুয়ারি শিলিগুড়ি পুরসভার উদ্যোগে শহরের বিভিন্ন বস্তির ছেলেমেয়েদের নিয়ে কেন্দ্রীয় ভাবে বস্তি-ক্রীড়ার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই মতো ২২ জানুয়ারি পুরসভার তরফে নির্ধারিত ফি দিয়ে স্টেডিয়াম ঠিক করা হয়। আয়োজনও সেরে ফেলেন পুরসভার বস্তি উন্নয়ন বিভাগের কর্মকর্তারা। ঠিক হয় বেঙ্গল টাইগারস্-এর উদ্যোগে বলিউড, টলিউড-সহ ৮টি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি-র দল নিয়ে সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগের যে খেলা হচ্ছে তারই ২টি ম্যাচ ১০ ফেব্রুয়ারি শিলিগুড়িতে হবে। তাই ওই দিন কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম প্রয়োজন। অনুশীলন ও আয়োজনের জন্য তার আগে দু’দিনও স্টেডিয়াম চাই। এর পরই নির্ধারিত দিনে ওই ক্রিকেট খেলার আয়োজন সম্পূর্ণ করতে উদ্যোক্তাদের অনুরোধে ময়দানে নামেন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। তিনি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত এবং স্টেডিয়াম কমিটির কর্মকর্তাদের ফোন করে বস্তি-ক্রীড়া ৮-৯ ফেব্রুয়ারি না করে পিছিয়ে দেওয়ার কথা জানান। মন্ত্রীর অনুরোধে শেষ পর্যন্ত বস্তি-ক্রীড়া ওই দিন না করে ক্রিকেট ম্যাচের ব্যবস্থা করা হয়। পরিবর্তে বস্তিক্রীড়া পিছিয়ে ১২-১৩ ফেব্রুয়ারি করার কথা ঠিক হয়।
ক্রীড়ামন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন ওই খেলার সঙ্গে তিনি যুক্ত নন। তাঁর কথায়, “মেয়র এবং জেলাশাসকই বিষয়টি ঠিক করেছেন। শহরের বস্তিবাসীদের ক্রীড়াও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তা ঠিক মতো হোক আমরা সেটাই চাই।” ক্রীড়া দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, ‘সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ’-এর উদ্যোক্তারা কলকাতায় ম্যাচ দু’টি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সিএবি’র তরফে ছাড়পত্র মেলেনি। এর পর তাঁরা কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ম্যাচের আয়োজন করতে ক্রীড়ামন্ত্রী, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর দ্বারস্থ হন। ঠিক হয়েছে টলিউডের তারকাদের নিয়ে বেঙ্গল টাইগার্স খেলবে তেলেগু ওয়ারিয়র্সের সঙ্গে। টি- টোয়েন্টি ধাঁচে অপর ম্যাচে খেলবে কর্ণাটক বুল্ডোজার বনাম বীর মারাঠি। বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি জেলাশাসক তথা স্টেডিয়াম কমিটির সভাপতি সৌমিত্র মোহন। সহসভাপতি তথা মহকুমাশাসক রচনা ভগত জানান, তেমন কোনও বিষয় নেই। খেলার দু’ দিন আগে আয়োজন অনুশীলনের জন্য বস্তি-ক্রীড়া পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “ক্রীড়া মন্ত্রী ওই ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজনের জন্য ফোন করেছিলেন। ম্যাচের জন্য বস্তি-ক্রীড়া পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।” বস্তি উন্নয়ন বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবশঙ্কর সাহা জানান, বস্তি ক্রীড়ার জন্য সমস্ত আয়োজন প্রায় সেরে ফেলা হয়েছিল। অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও ওয়ার্ডগুলিতে বস্তি-ক্রীড়া নির্ধারিত সময়ে শেষ করে প্রতিযোগীদের নাম পাঠান হয়। খেলা পিছনোয় সমস্যাও হয়েছে। প্রতিযোগীদের বিষয়টি জানাতেও হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যানার বা হোর্ডিং-এ বস্তি ক্রীড়ার যে তারিখ দেওয়া হয়েছিল তার উপর ‘স্টিকার’ লাগিয়ে ওই দিনের পরিবর্তে কবে খেলা হবে তা দিতে হচ্ছে। বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “ক্রীড়ামন্ত্রীই তো বলেছিলেন মাঠে জলসা হবে না, খেলা হবে। চিত্র তারকাদের ক্রিকেট এও এক ধরনের ‘জলসা’-ই বলা যায়। তার জন্য এ ভাবে বস্তিক্রীড়া পিছিয়ে দিয়ে শিলিগুড়ির বস্তিবাসী মানুষের সম্মানে আঘাত করা হল।” |