দফতরে ঢুকতে বাধা জেলাশাসককে
পাহাড়ে রাজনৈতিক সংঘাতে তৃণমূল-মোর্চা
রাজ্যের সঙ্গে জিটিএ-র প্রশাসনিক স্তরে সংঘাত এখন তুঙ্গে। রাজনৈতিক ভাবেও তৃণমূলের সঙ্গে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সংঘাতের যেন সূচনা হয়ে গেল বৃহস্পতিবার।
এই দিন সকালে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনকে দার্জিলিঙের জিটিএ-র সদর দফতর লালকুঠিতে ঢুকতে দিল না মোর্চা। বাধা দিল তাঁর জেলাশাসকের দফতরে ঢোকার মুখেও। একই সময়ে কার্শিয়াংয়ের পানিঘাটায় মোর্চার ডাকা শনিবারের বন্ধের বিরোধিতা করে অবস্থান, জনসভা করে তৃণমূল। রাত পোহালেই মোর্চার ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধের মুখে এই পরিস্থিতিতে উত্তেজনার পারদ চড়ছে পাহাড়ে।
সৌমিত্র মোহন
বুধবারই সৌমিত্র মোহনকে জিটিএ-র প্রধান সচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করে জিটিএ সভা। তার পরে এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ লালকুঠির সামনেই সৌমিত্র মোহনের গাড়ি আটকে দেয় মোর্চা প্রভাবিত জিটিএ-এর অস্থায়ী কর্মচারি সংগঠন। সংগঠনের তরফে জানানো হয়, সৌমিত্র মোহন দার্জিলিঙের জেলাশাসক থাকলে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু, তাঁকে কোনও মতেই জিটিএ-এর প্রধান সচিব পদে আর বসতে দেবেন না তাঁরা। বাধ্য হয়ে সৌমিত্র মোহন গাড়ি ঘুরিয়ে জেলা প্রশাসনের সদর দফতরে চলে যান। সেখানে তাঁর অফিসের সামনে মোর্চার ছাত্র সংগঠন স্লোগান দিয়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে স্মারকলিপি দেয়। জেলা প্রশাসনের তরফে প্রধান সচিবকে জিটিএ-তে ঢুকতে না-দেওয়ায় দার্জিলিং থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ওই অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা রুজু করেছে।
দার্জিলিঙে যখন হট্টগোল চলছে, সেই সময়ে পানিঘাটায় জনসভা শুরু করে তৃণমূল। সেখানে পাহাড়ের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। প্রধান সচিবকে অপসারণের দাবির প্রসঙ্গে গৌতমবাবুর বক্তব্য, “এই বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী দেখছেন। তা নিয়ে আমি কিছু বলব না। তবে মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের ব্যাপারে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল।” তবে সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে বারে বারেই গুরুঙ্গদের বন্ধ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন গৌতমবাবু। তাঁর কথায়, “অনেক দিন পরে পাহাড় যখন হাসছে, সেই সময়ে বন্ধ করলে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে ভুল বার্তা যাবে। কোনও মতবিরোধ থাকলে আলোচনায় মেটাতে হবে।”
দার্জিলিঙে জিটিএ-র প্রধান সচিবের দফতরের সামনে
জমায়েত মোর্চা সমর্থকদের। বৃহস্পতিবার। ছবি: রবিন রাই।
ঘটনাচক্রে, পাহাড়ের তৃণমূলের আহ্বায়ক রাজেন মুখিয়া কড়া ভাষায় মোর্চার সমালোচনা করেছেন। প্রাক্তন জিএনএলএফ নেতা রাজেনবাবুর অভিযোগ, “সুবাস ঘিসিংয়ের মতোই পাহাড়ে মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ একদলীয় শাসন কায়েম করতে চাইছেন। মর্জিমাফিক বন্ধ ডাকা, যখন খুশি বিরোধী দলের লোকজনকে হেনস্থা করার ঘটনা আর পাহাড়বাসী মানবেন না।” পাহাড়ের সর্বত্র তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে তাঁরা গ্রামে ঘুরবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
পাহাড়ের মোর্চা বিরোধী দল গোর্খা লিগ এবং তরাই-ডুয়ার্সের মোর্চা ঘনিষ্ঠ আদিবাসী নেতাকে কাছে টেনে তৃণমূল জোট গড়তে চাইছে বলেও মনে করছে মোর্চা। মোর্চার অন্দরের খবর, এ দিন দার্জিলিঙে গুরুঙ্গ সর্বদল বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও করেছেন। ওই বৈঠকে গোর্খা রাষ্ট্রীয় কংগ্রেস, জাতীয় কংগ্রেসের পাহাড় শাখা, বিজেপির প্রতিনিধিরা ছিলেন। বৈঠকের পরে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয় তামাং বলেন, “সকলেই গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনের ব্যাপারে সহমত। শীঘ্রই চার দলের প্রতিনিধিরা দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ওই দাবি জানাবে।” তবে গোর্খা লিগ, সিপিআরএম, গোর্খাল্যান্ড টাস্ক ফোর্সের মতো দলগুলি বৈঠকে যোগ দেয়নি। তৃণমূল তাদের কাছে টানতে চাইছে বলে মোর্চা নেতাদের একাংশের সন্দেহ। বিনয় তামাং বলেন, “আমরা সবই নজর রাখছি। যাঁরা আমাদের সঙ্গে থাকবে না, ধরে নিতে হবে তাঁরা আলাদা গোর্খাল্যান্ড চান না।”
রাজ্য সরকার ও শাসক দলের সঙ্গে মোর্চার যথাক্রমে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক দ্বৈরথের ফলে পাহাড় ফের ছন্দ হারাবে কি না আমজনতার মধ্যে সেই প্রশ্ন উঠেছে। বিনয় তামাংয়ের অভিযোগ, “রাজ্য সরকার জিটিএকে স্বশাসন দিয়েও জবরদস্তি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে প্রশাসনিক সংঘাত তৈরি করেছে। এখন রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলার নাম করে পাহাড়ে উত্তেজনা ছড়াতে চাইছে।”
অন্য দিকে পাহাড়ে অবস্থান, সভা করে মোর্চাকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করার ইঙ্গিত দিয়েছে তৃণমূল। এ দিন লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠন নিয়ে রাজনীতি না করার দাবিতে লেপচাদের একটি সংগঠনও অনশনে বসেছেন। এই অবস্থায় গ্রীষ্ম মরসুমের শুরুতে উদ্বেগ বাড়ছে পাহাড়বাসীর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.