পঞ্চায়েতে দাপাতে পারে সন্ত্রাস, ইঙ্গিত স্কুলভোটে
রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে প্রথম বড় ভোট, পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। প্রথম বিরোধী হিসেবে বড় নির্বাচনে যাচ্ছে বামেরা। এত দিন মূলত বামেদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভোট চেয়ে এসেছে তৃণমূল। কিন্তু সম্প্রতি রাজ্যের নানা এলাকায় স্কুল নির্বাচনে যে ভাবে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠল, তাতে ছবিটা উল্টে গিয়েছে। কংগ্রেস তো বটেই, বামেরাও ব্যাপক অশান্তির আশঙ্কা করছে।
এ বার ভোট হয়েছে সেই স্কুলগুলিতেই, তিন বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের সাফল্যের পরে যার একাংশে পরিবর্তনের স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল। কিন্তু এ বার বহু স্কুলে তৃণমূল-বিরোধীরা প্রার্থী দেওয়া দূরে থাক, মনোনয়নই জমা দিতে পারেননি। ফলে বাম জমানায় যা হত, এই আমলেও শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালিয়ে বিরোধিতার কণ্ঠরোধ করার অভিযোগ উঠেছে। যদিও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বামেদের মতো নিরঙ্কুশ আধিপত্য তৃণমূল করে উঠতে পারেনি।
উত্তরবঙ্গে বরাবরই কংগ্রেসের শক্তি বেশি। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়ায় সেখানে অনেকখানি মাসুল দিতে হয়েছে তৃণমূলকে। বেশ কিছু জায়গায় বামেরা হৃতজমি উদ্ধার করেছে। দক্ষিণবঙ্গে বহু জায়গাতেই কিন্তু একবগ্গা জিতেছে তৃণমূল। এর মধ্যে গত পঞ্চায়েত ভোটে দখল করা পূর্ব মেদিনীপুর যেমন রয়েছে, জমি আন্দোলনের জেরে রুজি হারানোর হতাশা সত্ত্বেও রয়েছে সিঙ্গুর। কিন্তু বহু জায়গাতেই ভোট কার্যত হয়নি।
গত বেশ কিছু বছর যাবৎ যে সব জায়গা খুন-সন্ত্রাস-হানাহানির কারণে প্রায়ই খবরে আসে, তার অন্যতম বর্ধমানের কেতুগ্রাম ১ ব্লক। সেখানে সিপিএম এবং কংগ্রেস লড়াইতেই নেই। দু’দলেরই অভিযোগ, তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন তুলতে দেওয়া হয়নি। রায়নাতেও ৪৫টি স্কুলভোটের মধ্যে একটিতে প্রার্থী দিতে পেরেছে বিরোধীরা। নানুরে সাতটি স্কুলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল। অন্য জেলাতেও আছে এ রকম উদাহরণ।
আব্দুল মান্নানের দাবি, “রাজ্যে ৬০ শতাংশেরও বেশি স্কুলের ভোটে তৃণমূল জিতেছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। বিরোধী প্রার্থী দিতে দেয়নি। আক্রমণ করেছে, প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। এই সব ভোটের ফল জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন নয়।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, “হুমকি-বোমাবাজি তো আছেই, বাম প্রার্থীরা জেতায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে তালাবন্ধ করে রাখার অভিযোগও রয়েছে।” এখনও পর্যন্ত হওয়া সব ক’টি পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বামেরা। তাদের বিরুদ্ধেই বরাবর সন্ত্রাস চালিয়ে একবগ্গা ‘ভোট করা’র অভিযোগ উঠেছে। এখন তারাই নতুন শাসকদলের সন্ত্রাসের আশঙ্কায় সরব হচ্ছে। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের দাবি, “বিরোধীদের যে প্রার্থী দিতে দেবেন না, সে কথা তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা হামেশাই প্রকাশ্য সভায় বলছেন। ওদের নিজেদের দলেও তীব্র দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচন তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূলের সংঘর্ষেও রক্তাক্ত হবে।”
অপর বিরোধী কংগ্রেসের দশা আরও করুণ। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার কথায়, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএমের সন্ত্রাসে আমরা ৪১ হাজার আসনের মধ্যে মাত্র ২০ হাজারে প্রার্থী দিতে পেরেছিলাম। তৃণমূলের সন্ত্রাসে এ বারও ছবিটা পাল্টাবে বলে মনে হয় না।”
তৃণমূল অবশ্য এতে আমল দিতে রাজি নয়। তাদের মতে, নিজেদের ‘সাংগঠনিক দুর্বলতা’ ঢাকতেই এই সব অভিযোগ আনছে বিরোধীরা। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের বক্তব্য, “রাজ্যে গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই শুরু করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৩ এবং ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএমের সন্ত্রাসে আমরা অধিকাংশ আসনে প্রার্থী দিতে পারিনি। ২০০৯ এবং ২০১১ সালে কিন্তু মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন।” বিরোধীরা মনে করাচ্ছেন, ২০০৯ সালে লোকসভা এবং দু’বছর পরে বিধানসভা নির্বাচন আধা সামরিক বাহিনী নামিয়ে কয়েক দফায় করিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সে কারণে কোনও পক্ষই পেশিশক্তি দেখাতে পারেনি। সূর্যবাবু বলেন, “এ বারও আমরা তিন দিনে নির্বাচন চেয়েছি। আশা করি, নির্বাচন কমিশন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.