বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটে। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের তিনতলা থেকে দড়ি দিয়ে নামানো হচ্ছে ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডের যন্ত্রাংশ। স্টেডিয়ামের ১ ও ২ নম্বর গেট সংলগ্ন ‘জি’ ব্লকের কাছে একটি র্যাম্পের উপরে দাঁড় করানো একটি ছোট ট্রাকে সেই যন্ত্রাংশ তোলা হচ্ছে। তিনতলার উপরে দুই ব্যক্তি, নীচে র্যাম্পে আরও তিন জন দাঁড়িয়ে। যন্ত্রাংশ নামাতে গিয়ে দড়ি থেকে খুলে পড়েও গেল।
তবে কি ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড সরিয়ে দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ? খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, তাঁরা কিছু জানেনই না।
কাছেই আরও একটি ম্যাটাডর। যাঁরা ওই সব সামগ্রী সরাচ্ছিলেন, তাঁদের এক জনকে জিজ্ঞাসা করতেই জানা গেল, “পরিত্যক্ত লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম। এই সব স্ক্র্যাপ মাল বিক্রি হবে, তাই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।” কিছু বাদে ফ্রেন্ডস অফ দ্য স্টেডিয়ামের কয়েক জন কর্মী যন্ত্রাংশের একটি টুকরো নিয়ে গেলেন। |
স্টেডিয়াম থেকে বেরোচ্ছে মালভর্তি ট্রাক। বৃহস্পতিবার। ছবি: শৌভিক দে |
সল্টলেক স্টেডিয়াম থেকে বৃহস্পতিবার এ ভাবেই ‘গোপনে সরানো’ হচ্ছিল একদা গর্বের ওই ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডের যন্ত্রাংশ। স্টেডিয়ামের কর্মীদের একাংশের এমন অভিযোগ পেয়ে ‘হস্তক্ষেপ’ করতে বাধ্য হলেন কর্তৃপক্ষ। ঘটনাস্থলে গেলেন কয়েক জন আধিকারিক। এর পরেই যন্ত্রাংশ ‘সরানো’র কাজ স্থগিত রাখা হয়। দু’টি ম্যাটাডর দাঁড়িয়ে রইল স্টেডিয়ামের মধ্যেই। যদিও ঘটনার কথা সরকারি ভাবে স্বীকার করেনি ক্রীড়া দফতর। তবে ক্রীড়ামন্ত্রী বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
স্টেডিয়াম সূত্রে খবর, ১৯৮৪ সালে দু’টি ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড লাগানো হয়েছিল স্টেডিয়ামে। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রদর্শনীর খেলার সময়ে ওই দুটি স্কোরবোর্ড খুলে স্টেডিয়ামের তিনতলাতেই রাখা ছিল। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ডার্বি ম্যাচ। পুলিশের অনুরোধে স্টেডিয়াম সাফাইয়ের কাজ চলছে। তাই রাবিশ-সহ বিভিন্ন জিনিস সরানো হচ্ছে। সেই সুযোগেই এই যন্ত্রাংশও সরিয়ে ফেলার চেষ্টা চলছিল বলে অভিযোগ। স্টেডিয়াম সূত্রে খবর, ওই স্কোরবোর্ড বসাতে ২ কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। এ দিন যে সব সামগ্রী সরানোর চেষ্টা হয়েছিল, তা আদতে তামার তৈরি।
কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছে প্রশাসন। কারণ প্রশাসনেরই একটি অংশের দাবি, ওই ধরনের সামগ্রী বিক্রির ক্ষেত্রে আগে সরকারি ভ্যালুয়ারকে দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করার কথা। তার পরে নোটিস, টেন্ডার প্রক্রিয়া পার করে তবেই বিক্রির কথা। কিন্তু আদৌ কি এই প্রক্রিয়া কার্যকরী হয়েছে?
কেন ওই যন্ত্রাংশ সরানো হচ্ছিল? এতে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের অনুমতি রয়েছে? সদুত্তর মেলেনি। মন্ত্রী মদন মিত্রকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বলেন, “একটি বৈঠকে ছিলাম। জানি না। খোঁজ নিয়ে বলতে পারব।” |