হোম নিয়ে রাজ্যের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ কোর্ট |
পুলিশ হেফাজতে বিভিন্ন হোমে থাকা মহিলারা ধর্ষিতা হন। তাঁদের মৃত্যু, লুকিয়ে কবর দেওয়া কিছুই জানতে পারে না পুলিশ। পুলিশের এই ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র গুড়াপে হোম নিয়ে তদন্তের ভার সিবিআইকে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শেষ পর্যন্ত রাজ্যের জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে আগামী সোমবার পর্যন্ত রাজ্য সরকারকে সময় দিয়েছে হাইকোর্ট। ওই দিন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে জানাতে হবে, এই ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মাস ছয়েক আগে দুলাল স্মৃতি সংসদ নামে গুড়াপের একটি হোমে গুড়িয়া নামে এক আবাসিকের মৃত্যুর পরে তাঁকে হোমের ভিতরেই কবর দিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, হোমের কর্তারা তাঁকে ধর্ষণ করত। সেই সময়েই আইনজীবী বাসবী রায়চৌধুরী হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থের মামলা দায়ের করেন। আবেদনে তিনি বলেন, কেবল গুড়িয়াই নয়, আরও তিন জনকে একই ভাবে তাঁদের পরিবার বা পুলিশকে না জানিয়ে কবর দেওয়া হয়েছে। সেই মামলার প্রেক্ষিতে সিআইডি-কে এই ধরনের সব হোম সম্পর্কে রিপোর্ট জমা দিতে বলে হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার সিআইডি-র রিপোর্ট পড়েই অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ। এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিআইডি কী করে এমন দায়সারা তদন্ত করতে পারে, তা ভেবেই বিস্মিত বিচারপতিরা।
আবেদনকারীর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, রাজ্যের নারীরা তা হলে কোথায় নিরাপদ! পুলিশের হেফাজতে থাকা মহিলাদের হোমেও তাঁরা নিরাপদ নন। এমনকী, মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাও হোমের পুরুষ কর্তাদের লালসার শিকার হচ্ছেন। পুলিশ এই সব অপকর্মের কথা
জানত না, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। আর এখন পুলিশের রিপোর্ট দেখেই বুঝতে পারা যাচ্ছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্ত বিতর্ক থেমে যাবে এমনটা ধরে নিয়েই পুলিশ রিপোর্ট তৈরি করেছে।
রঞ্জনা দেবী ও সুনীতা পাসোয়ান নামে আরও দুই আবাসিককেও হোম কর্তৃপক্ষ কবর দিয়েছিলেন বলে পুলিশ অভিযোগ পেয়েছিল। সেই অভিযোগের কথা তারাই এক সময় আদালতকে জানিয়েছিল। কিন্তু সিআইডি-র রিপোর্টে তাদের ব্যাপারে কোনও উল্লেখ নেই। ওই দুই আবাসিক সম্পর্কে পুলিশ মামলাও করেনি। রিপোর্টের এই অংশ দেখেই প্রধান বিচারপতি সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চান, রাজ্যের জিপি কোথায়? এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের মত কী?
মিনিট দশেক পরে জিপি এজলাসে আসেন। প্রধান বিচারপতি জানতে চান, ছ’মাস আগে ভিসেরা পাঠানো হলেও এখনও তার রিপোর্ট পাওয়া গেল না কেন? সরকার এই সব হোম সম্পর্কে কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা-ও জানতে চান বিচারপতিরা। জিপি-র পক্ষে তৎক্ষণাৎ এত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব ছিল না। তিনি সময় চান। প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকার এত ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে অথচ ওই সব হোমে মৃতদের পরিবারকে কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হল না কেন? রাজ্যের অন্য মহিলা হোমগুলিতেই বা কী চলছে?
সোমবার রাজ্য সরকারের বক্তব্য জানার পরে ডিভিশন বেঞ্চ জানাবে এই সংস্থার তদন্তে আস্থা রাখবে
কি না। |