|
|
|
|
কর্মী ধর্মঘটে ধানবাদের বিস্তীর্ণ খনি অঞ্চল নির্জলা |
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি |
মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।
কয়লা খনি এলাকা হওয়ায় মাটি থেকে জল তোলার কোনও উপায়ই নেই। তার উপরে নগর পরিষেবা সংস্থার কর্মীরা ধর্মঘট ডেকেছেন। ফলে ধানবাদের অধিকাংশ এলাকা গত চারদিন ধরে নির্জলা। সমস্যায় জেরবার সাধারণ মানুষ। অনেকেই স্নান করতে পারছেন না। প্রাণের দায়ে শেষ পর্যন্ত পুকুর থেকে পানীয় জল নিচ্ছেন।
ধানবাদের ঝরিয়া ও কাতরাসে জল সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে মিনারেল এরিয়া ডেভলপমেন্ট অথরিটি (মাডা)। সেই সংস্থাকে স্থানীয় নগর নিগম (পুরসভা)-র সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে ঝাড়খণ্ড সরকার। সরকারের সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতেই মাডার কর্মীরা গত সোমবার থেকে অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘটে বসেছেন। ফলে জল সরবরাহ থেকে শুরু করে সব ধরনের পরিষেবার কাজ বন্ধ রয়েছে।
খনি অধ্যুষিত এলাকা ঝরিয়া ও কাতরাস। দু’টি জায়গা মিলিয়ে সেখানে বাঙালিদের সংখ্যা আনুমানিক দু’ লক্ষেরও বেশি। মাডার কর্মীদের ধর্মঘটের ফলে পানীয় জল পাচ্ছেন না কেউই। ঝরিয়ার বাসিন্দা, পেশায় কয়লা ব্যবসায়ী দীপক দত্ত জানান, ঝরিয়ার গ্রাম এলাকাগুলির বেশিরভাগটাই বাঙালি অধ্যুষিত। মানবাঁধ, নুনুডি, পাথরডি, পোদ্দার পাড়া, আমলা পাড়ার মতো গ্রামগুলি মঙ্গলবার থেকে কার্যত নির্জলা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। দীপকবাবুর কথায়, “দু’ দিন ধরে স্নান করা যাচ্ছে না। এখন কোনওমতে পুকুর, ডোবা থেকে জল তুলে ফুটিয়ে শোধন করে তা পানের উপযুক্ত করা হচ্ছে। এ ভাবে আর এক-দু’দিন চললে পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে।”
ঝরিয়া কিংবা কাতরাসের মতো জায়গাগুলিতে ভূপৃষ্ঠের নীচেই কয়লা খনি। গভীর নলকূপ বসাতে হলে মাটির নিচে বোরিং করতে গেলেই বিষাক্ত গ্যাস কিংবা মাটির তলা থেকে আগুন বেরিয়ে পড়তে পারে। সেখানে মাটির তলা থেকে জল তোলার কোনও বিকল্প উপায় নেই। ফলে জল সংকটের মোকাবিলা করতে গ্রামের পুকুরই ভরসা। যেসব গ্রামে পুকুরের জল একেবারেই পানের অযোগ্য, সেখানে পার্শ্ববর্তী গ্রামই ভরসা।
আজ সকালে ঝরিয়া থেকে ধানবাদ পুরসভায় জলের গাড়ি পাঠানোর জন্য ফোন করা হয়। কিন্তু ট্যাঙ্কার খারাপ থাকার কারণে পুরসভা জল পাঠাতে পারেনি বলে অভিযোগ ঝরিয়াবাসীদের অনেকেরই। ধানবাদ পুরসভার ডেপুটি মেয়র নীরজ সিংহ বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি অবশ্য বলেন, “চাহিদা মতো জল পাঠানো হচ্ছে। আমাদের বারোটি ট্যাঙ্কার রয়েছে। তবে ধানবাদ পুর এলাকার লোকজনকেও তো জল দিতে হবে।”
মাডার কর্মীদের অভিযোগ, সরকার মাডা তুলে দিতে চাইছে। মাডার কর্মীদের প্রচুর টাকা বেতন বকেয়া রয়েছে। কর্মী ইউনিয়নের নেতা দীনেন্দ্রনাথ দুবে বলেন, “আমরা কাজ করতে অপারগ। সাধারণ বাসিন্দাদের অসুবিধা আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাদেরও না খেতে পেয়ে মরার অবস্থা। একুশ-বাইশ মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না।” লাগাতার হরতালের নির্জলা হয়ে যাওয়া এলাকার বাসিন্দারাও ক্ষুব্ধ। ফলে প্রশাসনের উপরেও চাপ বাড়ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আজ ধানবাদের ডেপুটি কমিশনার প্রশান্ত কুমার নিজের দফতরে আন্দালনকারীদের আলোচনার জন্য ডেকে পাঠান। ডিসি বলেন, “জল না দেওয়াটা অমানবিক। আমি আন্দোলনকারীদের বলেছি অবিলম্বে জল চালু করতে। মাডার কর্মীদের দাবি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে। তবে জল চালু না হলে প্রশাসনকেও কড়া হতে হবে।” পাশাপাশি, আন্দোলনকারীরা জানান, ডেপুটি কমিশনারকে বলা হয়েছিল তাঁর প্রতিশ্রুতি লিখিতভাবে দিতে। কিন্তু তিনি রাজি হননি। ফলে হরতাল জারি থাকছে বলেই জানান দীনেন্দ্রবাবু। |
|
|
|
|
|