|
|
|
|
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাধের টেগোর হিল এখন খণ্ডহর |
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি |
সকালে শরীর চর্চার আখড়া। বেলা গড়াতেই প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিচরণ ভূমি। আর সন্ধ্যা নামলেই সমাজ বিরোধীদের ঠেক। রবীন্দ্রনাথের জ্যোতি দাদার তৈরি উপাসনা-ভূমি রাঁচির ‘টেগোর হিল’ এর বর্তমান চেহারাটা এখন এমনই।
ঝাড়খণ্ড সরকারের ওয়েবসাইটে রাঁচির দর্শনীয় জায়গাগুলির যে তালিকা পর্যটকদের জন্য দেওয়া আছে, তার মধ্যে অন্যতম রাঁচির মোরাবাদি এলাকার এই টেগোর হিল। অবাঙালি পর্যটকদের জন্য তা শুধুই একটা ভ্রমণস্থল হলেও রাঁচি তথা ঝাড়খণ্ডের বাঙালিদের সঙ্গে কিন্তু এই জায়গার কার্যত নাড়ির সম্পর্ক। বিশেষত এখানকার ব্রাহ্ম সমাজের কাছে এর গুরুত্ব অসীম। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর টেগোর হিলের ওই পাহাড়ের উপরেই নিজের বাড়ি তৈরির পাশাপাশি ব্রাহ্মদের উপাসনার জায়গাও তৈরি করিয়েছিলেন। ঘটা করে সেখানে ব্রাহ্ম সমাজের মাঘোৎসব পালিত হত।
টেগোর হিলের আনাচ-কানাচে বসানো দৈন্যদশাগ্রস্ত শ্বেত পাথরের ফলকগুলি ইতিহাসের জানান দিচ্ছে, ১৯১০ সালে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরে ওই দুধ সাদা রঙের বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। ১৯২৫ সালে তিনি সেখানেই মারা যান। |
|
টেগোর হিলের উপাসনাস্থল। ছবি: মুন্না কামদা |
বর্তমানে টেগোর হিলের ভিতরে গজিয়ে উঠেছে বড় বড় ঘাস। মূল ফটক লোহার গেটের অভাবে খোলাই পড়ে থাকে। বছর চারেক আগে টেগোর হিল ট্রাস্টি বোর্ডের তত্ত্বাবধানে দেওয়ালে কিছু ভাস্কর্য লাগানো হয়েছিল। তার অধিকাংশই ভেঙে গিয়েছে। একটি ছোট প্রেক্ষাগৃহ তৈরি করা হয়। সেটির ভিতরের জিনিসপত্রও চুরি হয়ে গিয়েছে। পর্যটকদের জন্য তৈরি শৌচাগারটিও বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। ফলে অনেকেই সেখানে এলে প্রাকৃতিক কাজ সারেন টেগোর হিলের আনাচ-কানাচে।
এক মাত্র যে ঘরে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ থাকতেন তার বাইরে লাগানো তালাটি এখনও অটুট।
ট্রাস্টি বোর্ড বা অছি পরিষদের সদস্য, রাঁচির বাসিন্দা মনীন্দ্রনাথ চৌধুরীর কথায়, “শান্তিনিকেতন থেকে শিল্পীদের দিয়ে এসে কিছু কাজ করানো হয়েছিল। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভিতরের জিনিসপত্র যা ছিল সবই চুরি হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকার টেগোর হিলকে অধিগ্রহণ করল। কিন্তু কাজের কাজ কিছু করল না।” টেগোর হিলের এই দুরাবস্থায় ক্ষুব্ধ ব্রাহ্ম সমাজ। হাজারিবাগ ব্রাহ্ম সমাজের অছি পরিষদের সদস্য নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “এটা আমাদের কাছে যেমন দুঃখের, তেমনই লজ্জার। এক সময় ব্রাহ্মরা সেখানে উপাসনা করতেন। আজ সেই মন্দিরের কী অবস্থা।”
মাঘ মাস চলছে। সারা ভারতের ব্রাহ্ম সমাজের মতো ঝাড়খণ্ডেও বিভিন্ন ব্রাহ্ম সমাজে ১১ মাঘ দিনটিতে মাঘোৎসব হয়েছে। রাঁচিতে এই উৎসব হবে ২৭ মাঘ, অর্থাৎ ১০ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু এবারেও টেগোর হিলের হাল না ফেরায় হতাশ ব্রাহ্ম, অ-ব্রাহ্ম, সকলেই। কারণ রাঁচির মাঘোৎসব শুধু ব্রাহ্মদের মধ্যেই আর সীমাবদ্ধ নয়, অ-ব্রাহ্ম বাঙালিরাও তাতে সামিল।
রাঁচির ডেপুটি কমিশনার বিজয়কুমার চৌবে অবশ্য জানিয়েছেন, “টেগোর হিলের সংস্কারের জন্য একটি প্রোজেক্ট রিপোর্ট পর্যটন দফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে মাস দুয়েক আগে। সরকার প্রকল্পের অনুমোদন দিলেই সংস্কারের কাজ শুরু হবে।”
ঝাড়খণ্ডে এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে। কিন্তু যতদিন আগের সরকার ছিল তখনও কিছু হয়নি। কিন্তু এখন রাজ্যপালের নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড প্রসাসন যদি কিছু করে, সেই আশাতেই রয়েছেন এখানকার মানুষ। |
|
|
|
|
|