সময়ের লাগাম বেঁধে নিয়ে
রাজনীতির ঘোড়ায় মহারাজ

ই লিগের লাজং ফুটবল ক্লাবের অন্যতম মালিক। উত্তর-পূর্বের ইংরেজি ম্যাগাজিনের মালিক-সম্পাদক। শিলঙে হোটেল। হার্ভার্ডের গেস্ট লেকচারার। শখের সঙ্গীতচর্চায় সিদ্ধহস্ত। প্রদেশ কংগ্রেসের স্বঘোষিত ‘মুখ্য ও সর্বোচ্চ প্রচারক’।
ত্রিপুরেশ্বরের রাজ দরবারে আপনাকে স্বাগত!
প্রদ্যোৎকিশোর দেববর্মা
হোক না গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ প্রয়োগ। রাজ পরিবারের যাবতীয় মহিমা নিয়ে ত্রিপুরার নির্বাচনের ময়দান আলো করে বসে এক জনই! ৩৫ বছরের মহারাজ। প্রদ্যোত বিক্রম ‘কিশোর’ মানিক্য দেববর্মা।
নামের ভারে কাবু হয়ে ইনি ঠিক বসে নেই! রীতিমতো দৌড়চ্ছেন! উত্তর থেকে পশ্চিম ত্রিপুরার উপজাতি ঘাঁটিতে। রাজবাড়ির চন্দ্রমহল থেকে গোলাঘাটির উপজাতি পাড়ায় তাঁর ছবি দিয়ে সগর্ব ঘোষণা, ‘লং লিভ তুইপ্রাশা’! ত্রিপুরার ভূমিপুত্ররা দীর্ঘজীবী হোন! আইএনপিটি-র উপজাতি প্রার্থীদের প্রচারে যাবতীয় গ্ল্যামার এনে দিচ্ছেন তরুণ মহারাজ। সাফ বলছেন, “উপজাতিরা এই গণতন্ত্রের চেয়ে মহারাজা বীর বিক্রম দেববর্মার আমলে অনেক ভাল ছিল!”
মহারাজ অবশ্য আছেন তোফা! রাজবাড়ির চন্দ্রমহলে রাত আটটায় দর্শন দেবেন, কথা ছিল। কথা মতোই দরবারি হলে মৃদু আলোর ঝাড় লণ্ঠনের নীচে মুখোমুখি শ্বেতবস্ত্র মহারাজ। স্নিকার-শোভিত পা দোল খাচ্ছে। প্রশ্ন শুনেই তিনি জানতে চান, অন রেকর্ড চান? না অফ দ্য রেকর্ড? দু’টোই চাই জেনে সোৎসাহে দু’টোই দিচ্ছেন।
এটা জেনেও যে, আগন্তুক সাংবাদিকের ভয়েস রেকর্ডার অন-অফ হচ্ছে না!
মহারাজ বলছেন, “আমার পদ নেই। কিন্তু প্রভাব আছে! মানুষের জন্য ভাল কাজ করতে পারলে গণতন্ত্রেও রাজ পরিবারের সদর্থক ভূমিকা থাকবে।” জানিয়েই রাখছেন, সাত-আট বছর পরে রাজনীতির ইনিংসে দাঁড়ি টেনে দেবেন! কংগ্রেসে পদ অবশ্য একটা আছে প্রদ্যোত বিক্রমের। সাধারণ সম্পাদক। প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে যে পদ থেকে সম্প্রতি ইস্তফা দিয়েছিলেন মহারাজ। কংগ্রেস নেতৃত্ব আনুষ্ঠানিক ভাবে পদত্যাগ মঞ্জুর করেননি। এমতাবস্থায় মহারাজ উপজাতি এলাকায় প্রচারের দায়িত্বে। নিজে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন? “তা হলে এত কেন্দ্রে প্রচার করা যেত না।” বলাই বাহুল্য, এটা অন রেকর্ড! কত এবং কেমন প্রচার করলেন, সোস্যাল সাইটে সব স্টেটাস আপডেট দেন একবিংশ শতকের মহারাজ!
প্রয়াত বাবা ছিলেন কংগ্রেস সাংসদ। মা মহারানী বিভু দেবী ত্রিপুরার মন্ত্রী ছিলেন। এখন কলকাতার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাসিন্দা। যুব-মহারাজ এই প্রথম পুরোদস্তুর নির্বাচনী প্রচারে। কিন্তু আট বছরের সময়সীমা কেন? “বিয়ে করলে অগ্রাধিকারগুলো সব একই রকম থাকবে, তার কোনও মানে নেই! তা ছাড়া, এক জিনিস নিয়ে চোদ্দ-পনেরো বছর থাকলে মাথা আর কাজ করে না। পনেরো বছর চাকরি হয়ে গেলে আপনার আনন্দবাজারে থাকতে ইচ্ছা করবে?” হিন্দি-ইংরেজির সকৌতুক মিশ্রণে মহারাজের আরও সংযোজন “এই জন্যই পুরনো আমলে রাজা-রাজড়ারা একটা বয়সের পরে হরিদ্বারে চলে যেতেন!” তাঁর বাবা-মা’ও স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছিলেন। আট বছর পরে তিনিও তবে অবসরে? “রাজনীতি ছাড়াও কত কিছু করছি। তখন নয় রাজনীতি করব না! কিন্তু এর মধ্যেই পরিবর্তন করিয়ে যাব!”
কীসের পরিবর্তন? সিপিএম-রাজের? প্রদ্যোত বিক্রম মাথা নাড়ছেন, “না, না! এই ধারণাগুলো সব পশ্চিমবঙ্গ থেকে জন্মেছে! তুমি সিপিএম, তোমার সঙ্গে কথা বলব না! তুমি কংগ্রেস, তাই সিপিএম আমলে তোমার চাকরি হবে না! এটা রাজনীতি হল? মানসিকতার এমন পরিবর্তন চাই, যখন কাজ করতে গিয়ে রাজনৈতিক পরিচয়ের বাছ-বিচার নিয়ে কেউ ভাববে না!” যে রাজনীতিতে এত রকম নীচতা আছে নিজেই বলছেন, সেখানে এলেন কেন? “সুরাপান করে স্পোর্টস কার চালিয়ে বন্দুক আর নারী নিয়ে মহারাজ ঘুরে বেড়ালে কি ভাল হত?” কংগ্রেসেই এলেন কেন? “সিপিএম আমাকে নিত না! বিজেপি-র যা সব ভাবনা, ভাবা যায় না! ঠিক লোকের হাতে থাকলে কংগ্রেসের চেয়ে ভাল দল আর কিছু হয় না!”
আরও জানান মানিক সরকারের চেয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অনেক প্রতিভাবান, পণ্ডিত এবং ক্যারিশমার অধিকারী। মানিকবাবুর কপালটা শুধু খুব ভাল! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হৃদয়ের আয়তন গোলাপজামের মতো! রাহুল গাঁধীর সঙ্গে তাঁর দোস্তি ভালই। কংগ্রেস মহলের চালু কাহিনি, কাজের শেষে ক্লান্ত হলে রাহুল কখনও কখনও বলেন, মহারাজ কো বুলাও (দিল্লিতে থাকলে)! কামরে মে আগ লাগা দেগা! তা সেই আগুনের আঁচ নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় জানতে ইচ্ছে হল, ত্রিপুরায় প্রচারে রাহুল এলে নিশ্চয়ই যাবেন? “ওঁরা তো যে কোনও জায়গায় ভোট হলেই যান! সব জায়গায় আমি কী করে যাব?” প্রচার সচিবের দিকে চোখ টিপলেন মহারাজ প্রদ্যোত বিক্রম মানিক্য!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.