|
|
|
|
মৃত্যুদণ্ড অপরাধ কতটা কমায়, সংশয়ী অমর্ত্য |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নিছক বদলা বা প্রতিশোধস্পৃহায় আস্থা নেই তাঁর। প্রকৃত সুবিচার হল তা-ই, যা সমাজে বিকাশ তথা সমৃদ্ধির পথে নতুন দিক্নির্দেশ দেবে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি-সহ দেশের একাধিক প্রথম সারির বিচারপতি ও আইনজীবীদের সামনে ন্যায় বিচারের বিশ্লেষণে এ ভাবেই সওয়াল করলেন অমর্ত্য সেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতা হাইকোর্টের সার্ধ-শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে টাউন হলে এক বক্তৃতা-সভায় মৃত্যুদণ্ডের কার্যকারিতা নিয়ে নিজের সংশয়ও গোপন করেননি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। সভায় প্রশ্নোত্তর-পর্বে অমর্ত্য বলেন, “অভিজ্ঞতা বলছে, সমাজে অপরাধ কমানোর ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড খুব একটা কাজে আসেনি।”
গত ডিসেম্বরে দিল্লিতে এক তরুণীর গণধর্ষণ ও তাঁর মৃত্যুর পরে ধর্ষণকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নিয়ে দেশ জুড়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ নিয়ে গঠিত বর্মা কমিশনের রিপোর্টে মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ না করা হলেও কেন্দ্র ধর্ষণের শাস্তি নিয়ে যে অর্ডিন্যান্স জারি করেছে, সেখানে কিন্তু ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডই রাখা হয়েছে। এ দিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্রের বক্তব্যেও উঠে এসেছে দিল্লি গণধর্ষণের ঘটনা। প্রধান বিচারপতি ওই প্রসঙ্গটি তুলে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে বলেন, “আমাদের কি তবে নতুন করে নীতি-শিক্ষার পাঠ নিতে হবে!”
দিল্লির ঘটনার প্রেক্ষাপটে ন্যায় বিচার-প্রসঙ্গে চতুর্থ শতকে লেখা ‘মৃচ্ছকটিকম’ নাটকটির কথা এ দিন মনে করিয়ে দেন অমর্ত্য। ধনী ও প্রভাবশালীদের হাতে সমাজে বিচার-ব্যবস্থার বিকৃতির ছবি উঠে এসেছে ওই প্রাচীন সংস্কৃত নাটকে। নাটকের নায়ক চারুদত্ত শেষ পর্যন্ত সমাজের মঙ্গলের কথা ভেবে কুচক্রী অপরাধীদের ক্ষমা করে দিচ্ছেন। হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টের এক ঝাঁক প্রথম সারির বিচারপতির সামনে অমর্ত্য এ দিন ন্যায় বিচার প্রসঙ্গে চারুদত্তের ভাবনার কথা তুলে ধরেন। কিন্তু তাঁর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা হতে পারে, এই আশঙ্কায় এটাও বলেন যে, দিল্লি-কাণ্ড বা অনুরূপ ঘটনায় অপরাধীদের বেকসুর রেহাই দেওয়ার পক্ষপাতী তিনি নন। “ক্ষেত্র বিশেষে আমি কিন্তু কঠোর সাজার বিরুদ্ধে নই” স্পষ্ট ব্যাখ্যা অমর্ত্যর। অনুষ্ঠানে দেশের তৃণমূল স্তরে আইনের শাসন এখনও পৌঁছয়নি বলে আক্ষেপ প্রধান বিচারপতির। অমর্ত্য নিজের বক্তৃতায় প্রধানত ন্যায়-নীতির টানাপোড়েনের দিকগুলিই তোলেন। ২০০৯ সালে প্রকাশিত তাঁর বই ‘দ্য আইডিয়া অফ জাস্টিস’-এর উপরে ভিত্তি করেই এই ধ্যান-ধারণাগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করেন তিনি। তাঁর মতে, ন্যায়ের মাধ্যমে নীতিতে বৃহত্তর মাত্রা যুক্ত হয়। এ দেশে কোনও কোনও ক্ষেত্রে পুরনো রক্ষণশীল আইন বদলের প্রবণতাকে স্বাগত জানান। সমকামিতাকে অপরাধ বলে দেগে দেওয়ার বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টের ভূমিকাকে স্বাগতও জানান তিনি। |
|
|
|
|
|