তিস্তা নিয়ে কমিটিকে এগোতে বারণ মমতার
কেন্দ্রীয় জল কমিশনের কাছ থেকে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান না পাওয়ায় রাজ্য সরকারকে দেওয়া রিপোর্টে তিস্তার জল-বণ্টন নিয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট সুপারিশই করতে পারেনি কল্যাণ রুদ্র কমিটি। বদলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে অসম্পূর্ণ রিপোর্ট ও নিজের কিছু মতামত জানিয়েছেন নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র। সব শুনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বলেছেন, “আপনাকে আর কিছু করতে হবে না।” সরকারি সূত্রের খবর, এ ঘটনার পরে মাস চারেক কেটে গেলেও রাজ্যের তরফে কল্যাণবাবুর সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। তিস্তা নিয়ে তিনি আদৌ কোনও চূড়ান্ত রিপোর্ট দেবেন কি না, তা-ও জানা নেই রাজ্য সরকারের।
কল্যাণ রুদ্র কমিটির অসম্পূর্ণ রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে কতটা জল দেওয়া যায় তা নির্ধারণ করার আগে নদীর প্রবহমানতা, তিস্তায় জলের সঠিক পরিমাণ ও এ দেশের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনের বিষয়গুলি জানাটা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু কেন্দ্রীয় জল কমিশন থেকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া হয়নি। ফলে কমিটি কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। সুতরাং রুদ্র কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্ট যেমন সরকারের হাতে জমা পড়েনি, তেমনই রাজ্য সরকারও বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি, এমনটাই মহাকরণ সূত্রে বলা হচ্ছে।
তিস্তার কতটা জল বাংলাদেশকে দেওয়া যাবে, বা আদৌ দেওয়া যাবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই এক সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়েছিল রাজ্য সরকার। মমতা কেন্দ্রকে জানিয়েছিলেন, তিস্তায় জলের পরিমাণ এবং তা বণ্টনের পরে রাজ্যে সেচের উপর প্রভাব খতিয়ে দেখবে বিশেষজ্ঞ কমিটি। এই কমিটির রিপোর্ট হাতে এলে তবেই তিস্তা চুক্তি নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানাবে রাজ্য। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি কমিটির মত সরকারের নাপসন্দ হওয়াতেই তিস্তার জল সংক্রান্ত বিষয়ে কল্যাণ রুদ্রকে আর মাথা ঘামাতে বারণ করা হল? কল্যাণবাবুকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য বলেন, “এ বিষয়ে আমি একটি কথাও বলব না।”
মমতাকে কী জানিয়েছিলেন তিনি?
সরকারের এক মুখপাত্র জানান, মূলত বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-পরিসংখ্যান নিয়েই গবেষণা শুরু করেছিল কমিটি। সারা বছর নদীর জলপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করার বাসনা থাকলেও সময় ও পরিকাঠামোর অভাবে তা করা যায়নি। ফলে কেন্দ্রীয় জল কমিশন এবং রাজ্য সেচ দফতরের দেওয়া তথ্যের উপরই ভরসা করতে হয়েছে রুদ্র কমিটিকে। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিশনটি পূর্ণাঙ্গ ও সাম্প্রতিক তথ্য দেয়নি। অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে কোনও সুপারিশ কমিটি করতে চায়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর গবেষণা-প্রাপ্ত মতামত জানিয়েছেন অধ্যাপক রুদ্র।
কী সেই মতামত?
সরকারি সূত্রের খবর, রুদ্র কমিটি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছে, তিস্তার সেতু রয়েছে গজলডোবায়। এখান থেকে ভাটিতে আরও ৭২ কিলোমিটার এগিয়ে বুড়িগ্রামে বাংলাদেশে ঢুকেছে নদীটি। তিস্তার ভাটিতেই জলপাইগুড়ি, হলদিবাড়ির মতো শহর রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের বাস সেখানে। ফলে বাংলাদেশকে জল না দিয়ে গজলডোবা ব্যারাজ থেকেই যদি সব জল সেচের কাজে তুলে নেওয়া হয়, তা হলে এ রাজ্যেরও ১৫ লক্ষ বাসিন্দার জীবন-জীবিকা নষ্ট হবে। তা ছাড়া বাস্তুতন্ত্রের নিয়মে নদীর জীবনই তার প্রবহমানতা। নদীর জল আটকে সেচের জন্য তুলে নিলে তিস্তাই শুকিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ, এ পারে তিস্তার গতি অব্যাহত রাখতেই বাংলাদেশকে জল দেওয়া ছাড়া গতি নেই। তা ছাড়া আর্ন্তজাতিক আইনও বলছে, একাধিক দেশের মধ্যে বয়ে চলা একটি নদীর জল সকলে মিলেই ভাগ করে নিতে হবে।
কমিটি অবশ্য সতর্কবাণী শুনিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী অত বেশি জল তাদের দিতে চাইলেও সমস্যা হবে। সে ক্ষেত্রে টান পড়বে গজলডোবার উচ্চ অববাহিকায় ভূগর্ভস্থ জলে। কিন্তু সিকিমে তিস্তায় কতটা জল প্রবাহিত হয়, এ বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য পায়নি কমিটি। উত্তর সিকিমের লাচুং, লাচেন থেকে নীচের রংপো পর্যন্ত ২১টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তিস্তার উপর এ রাজ্যেও আরও দু’টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। সেগুলি চালু হলে ঠিক কত জল দু’রাজ্যের লাগবে, তিস্তার জল ঠিক কতটা কমবে, তা নিয়েও কোনও নির্দিষ্ট তথ্য পায়নি রুদ্র কমিটি।
কেন্দ্রীয় জল কমিশন কেন পরিসংখ্যান দেয়নি?
দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের এক সূত্রের মতে, দোমহনি এবং তিস্তাবাজারে তিস্তার জলপ্রবাহ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় জল কমিশন। চিন সীমান্তে গুরুত্বপূর্ণ এই নদীর জল-প্রবাহের যাবতীয় পরিসংখ্যান ‘অতি গোপনীয়’ গোয়েন্দা-তথ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশেষ আন্ডারটেকিং দিয়ে রাজ্য সরকারকে তা নিতে হয়। কিন্তু তার পরেও জাতীয় নিরাপত্তার কারণেই পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেওয়ায় নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। সম্ভবত এ জন্যই কল্যাণবাবু তাঁর চাহিদামতো পরিসংখ্যান পাননি। কমিটির রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ধারাবাহিক ও সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান না পাওয়ার কারণেই কোনও চূড়ান্ত সুপারিশ করা সম্ভব হয়নি।
কিন্তু কল্যাণবাবুকে ‘আর কিছু না করার’ নির্দেশ কেন দিলেন মুখ্যমন্ত্রী? কেনই বা তার পর থেকে তার সঙ্গে সরকারের কোনও যোগাযোগ নেই? তা হলে কি রাজ্য সরকার এ বিষয়ে কোনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছ, নাকি আপাতত ঝুলেই রইল দু’দেশের মধ্যে অতি গুরুত্বর্পূণ এই চুক্তিটির ভবিষ্যৎ? প্রশ্ন এখন এটাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.