নাগরিক কোন দেশের, ধোঁয়াশা
মাঝ আকাশেই কন্যা-সন্তান প্রসব
ড়িঘড়ি বিমানে উঠে চিকিৎসকেরা দেখলেন, মেঝেতে শুয়ে সদ্যোজাত এক শিশুকন্যা। পাশে আছেন মা-ও। কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, বৃহস্পতিবার দুবাই থেকে ম্যানিলা যাওয়ার পথে মাঝ আকাশেই এক কন্যা-সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ক্যামকো গিমনাসেপুল ভেদামাস নামে ওই ফিলিপিনো মহিলা। বিমানটি কলকাতা বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করার পর ওই মহিলাও তাঁর সন্তানকে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মা ও শিশু, দু’জনেই সুস্থ বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তবে আকাশে জন্ম হওয়ায় মেয়েটির নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শিশুটির মা ফিলিপিন্সের নাগরিক। কিন্তু তার জন্ম হয়েছে বাংলাদেশের আকাশে। তাই তাকে কোন দেশ নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে বিমানবন্দরের অফিসারদের একাংশের মধ্যেও।

সদ্যোজাত সেই শিশু কন্যা। —নিজস্ব চিত্র
যদিও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী ওই শিশুটি তার মা-বাবার দেশের নাগরিকত্ব পাবে। তবে সে প্রাপ্তবয়স্ক হলে যে দেশের বিমানে (এ ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমীরশাহী) তার জন্ম সে দেশের নাগরিকত্ব চাইতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটি নিয়মের জটিলতা রয়েছে বলে সব্যসাচীবাবু জানান। তিনি বলেন, “শিশুটি বাংলাদেশের আকাশে জন্মেছে। ফলে বিমানসংস্থাও দুবাইয়ের বদলে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তার স্বীকৃতি চাইতে পারে।”
ঘটনাটা কী হয়েছিল? ম্যানিলায় যাওয়ার জন্য দুবাই থেকে বিমানে চাপেন বছর তিরিশের ক্যামকো গিমনাসেপুল ভেদামাস। সঙ্গে পরিবারের কেউ ছিলেন না। মাঝ আকাশে তাঁর প্রসব বেদনা শুরু হয়। তাঁকে সাহায্য করতে আসেন সহযাত্রী এক চিকিৎসক। বিমানসেবিকাদের কেবিন আর যাত্রীদের কেবিনের মাঝের এক ফালি জায়গায় কাপড় টাঙিয়ে বানানো হয় আঁতুড়-ঘর।
বিমানবন্দরের এক অফিসার জানান, ওই সদ্যোজাতের জন্মস্থান চট্টগ্রামের আকাশে। সেখান থেকেই এমিরেটস সংস্থার ওই বিমানের চালক কলকাতা এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলকে (এটিসি) জানান, এক যাত্রীর চিকিৎসা সংক্রান্ত সাহায্যের জন্য জরুরি অবতরণ করতে চান তিনি। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ কলকাতায় নামে সেই বিমান। কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ অনুমতি নিয়ে (ভেদামাসের ভারতে ঢোকার ভিসা ছিল না) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মা ও মেয়েকে। তাঁদের কলকাতায় রেখেই পৌনে বারোটায় বিমানটি  ম্যানিলার উদ্দেশে ফের রওনা দেয়।
ওই মহিলা চিকিৎসকদের জানিয়েছেন, তিনি ২৮ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। মাঝ আকাশে সন্তানের জন্ম দিয়ে তিনি যারপরনাই খুশি। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, সাধারণত ২০ সপ্তাহর বেশি অন্তঃসত্ত্বা হলে তাঁকে বিমান ওঠার অনুমতি দেওয়া হয় না। দুবাই থেকে কী ভাবে ওই মহিলা বিমানে ওঠার অনুমতি পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ভেদামাসকে নিয়ে বিপাকে কলকাতার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। ওই মহিলার সম্পর্কে বিশেষ তথ্য তাঁদের নেই। বিমান সংস্থা জানিয়েছে, অবিলম্বে ভেদামাসের এক আত্মীয়া কলকাতায় আসছেন। তত ক্ষণ ওই মহিলার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। শিশুর পিতার নামও জানা যায়নি। বৃহস্পতিবার চিকিৎসকদের পরামর্শেই তাঁর সঙ্গে বেশি কথা বলা যায়নি। ভাঙা ইংরাজিতে ভেদামাস জানান, তিনি তাড়াতাড়ি দেশে ফিরতে চান। খোঁজ নিয়েছেন সন্তানেরও। চিকিৎসকেরা তাঁকে ছাড়তে নারাজ। চিকিৎসকেরা জানান, শিশুকন্যার ওজন হয়েছে এক কিলো ৯০০ গ্রাম। তাকে সদ্যোজাতদের জন্য বিশেষ ইউনিটে (এনআইসিইউ) রাখা হয়েছে। হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার ইপ্সিতা কুন্ডু বলেন, “বাচ্চা ও মা দু’জনেই ভালো আছে। নিয়ম অনুযায়ী, আমাদের হাসপাতালে শিশু জন্মালে তা স্থানীয় রাজারহাট পুরসভাকে জানাই। এ ক্ষেত্রে জন্ম আমাদের এখানে হয়নি। তবুও বিষয়টি পুরসভার গোচরে আনা হবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.