|
|
|
|
কাঁচামালের অভাবে ধুঁকছে খাদ্য
প্রক্রিয়াকরণ, অভিযোগ বণিকসভার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
শিল্পায়নে পায়ের তলায় মাটি পেতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে জোর দেওয়ার কথা বার বার বলছে রাজ্য সরকার। তাতে আলাদা গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট রাজ্যের শিল্পনীতিতে। এমনকী বেঙ্গল লিড্সের মঞ্চ থেকেও আরও অনেক বেশি জ্যাম-জেলি-আচার তৈরির স্বপ্ন ফেরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার আয়োজিত খাদ্য উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চেই উঠে এল খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের বেহাল দশার ছবি। শুধু তা-ই নয়, সেই চিত্র তুলে ধরল উৎসব আয়োজনে সহযোগী বণিকসভা ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) কৃষি ও খাদ্য বিষয়ক কমিটিই।
বণিকসভাটির দাবি, কাঁচামালের জোগান এখন যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে প্রশ্নচিহ্ন ঝুলে গিয়েছে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের লাভজনক বৃদ্ধির উপর। যা পরিস্থিতি, তাতে এই ধরনের শিল্পগুচ্ছ (ক্লাস্টার) গড়া সহজ নয়।
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে খাদ্য উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে বৃহস্পতিবার আট-আট জন মন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্বাগত ভাষণে আইসিসি-র প্রেসিডেন্ট এম কে জালান বলেন, “রাজ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ধুঁকছে। এই শিল্পের ইউনিটগুলিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সরবরাহ নেই। কমলালেবু, আনারস কিংবা টমেটোর মতো কাঁচামালের অভাবে উত্তরবঙ্গের ইউনিটগুলি বন্ধ হওয়ার মুখে। আশা করি, রাজ্য এই বিষয়ে নজর দেবে। সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন করে ভাবনা-চিন্তা করবে।” |
খাদ্য উৎসবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র |
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে সাফল্যের মুখ দেখতে যে ফল এবং কৃষি উৎপাদনে বৈচিত্র্য এবং নতুনত্ব আনা জরুরি, তা মেনে নিয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও। তবে একই সঙ্গে এই শিল্পে সম্ভাবনার উজ্জ্বল দিকগুলি তুলে ধরেছেন তিনি। তাঁর দাবি, বেশ কিছু ফল ও কৃষি উৎপাদনে দেশের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। মনে করিয়ে দিয়েছেন এখানে কর্ম সংস্থানের বিপুল সম্ভাবনার কথাও। উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের এই সমস্যা নতুন নয়। বরং এর সূত্রপাত সেই ১৯৯০ সাল থেকেই। কারণ, তখন চা-ব্যবসায় মোটা মুনাফার হাতছানিতে ধান, আনারস, কমলালেবুর চাষ ছেড়ে সেই জমিতে চা ফলানোর দিকে ঝুঁকেছিলেন অনেকেই। দেখা গিয়েছিল জমি পেলেই চা ফলানোর প্রবণতা। সেই থেকেই কাঁচামালে টান পড়া শুরু। কিন্তু সেই সমস্যা মেটাতে পূর্বতন বাম কিংবা বর্তমান তৃণমূল সরকার, কেউই এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ।
এ দিনের আলোচনায় প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতির সমস্যা তুলে ধরে সমবায়মন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি জানান, রাজ্যে এমন সমিতির সংখ্যা ৬ হাজার। কিন্তু জমি-জায়গা থাকলেও, এর মধ্যে ৯০০ সমিতির কাজকর্ম বন্ধ। এ নিয়ে তদন্ত চলছে। চিন্তা-ভাবনা চলছে বন্ধ সমিতির জায়গায় নতুন সমিতি গঠনেরও।
মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি বিষয়ক পরামর্শদাতা প্রদীপকুমার মজুমদারের আবার দাবি, “শুধু উৎপাদনশীলতা বাড়ানো নয়। রাজ্য সরকারের মূল লক্ষ্য বরং সার্বিক ভাবে কৃষকের জীবনধারণের মান উন্নত করা।
চাষি যাতে বাজারে উৎপাদিত পণ্যেরন্যায্য দাম পান, তা নিশ্চিত করাই কৃষিনীতির লক্ষ্য।”
এ দিন খাদ্য উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অমিতবাবু। উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন মন্ত্রী সুব্রত সাহা, কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়, ক্ষুদ্র, কুটির ও বস্ত্র শিল্পমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, কারামন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী, স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি প্রকল্প মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো এবং খাদ্য মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। উৎসব চলবে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ দিনের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় শ’পাচেক কৃষি প্রতিনিধি অংশ নেন। |
|
|
|
|
|