ঘাটতি কমাতে তেল-গ্যাসের ভর্তুকিতে রাশ টেনেছে কেন্দ্র। আয় বাড়াতে আসন্ন বাজেটে পরিষেবা কর ও উৎপাদন শুল্কের হার বাড়াতে পারে তারা। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, দুই করের হারকেই ১২% থেকে বাড়িয়ে ১৪ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু এর জেরে মূল্যবৃদ্ধি যাতে লাগামছাড়া না হয়, তা নিশ্চিত করতে পেট্রোপণ্যকে সম্ভবত এর বাইরে রাখা হবে। এই চড়া দরের বাজারে সাধারণ মানুষকে কিছুটা রেহাই দিতে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে করমুক্ত সঞ্চয়ের ঊর্ধ্বসীমা এক লক্ষ টাকা থেকে বাড়ানোর বিষয়েও।
২০০৮-এ বিশ্ব জোড়া মন্দার সময় উৎপাদন শুল্ক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। পরিষেবা করের হারও কমিয়ে আনা হয়েছিল ১০ শতাংশে। উদ্দেশ্য ছিল, উৎপাদন ও পরিষেবা ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করা। কিন্তু পরে অর্থনীতির হাল কিছুটা শুধরোলে ঘাটতিতে রাশ টানতে গত বাজেটে দুই হারকেই বাড়িয়ে করা হয় ১২%। এ বার এই দুই করের হারে বৃদ্ধির ইঙ্গিত স্পষ্ট অর্থমন্ত্রীর উপদেষ্টা পার্থসারথি সোমের বক্তব্যেই। তিনি বলেন, “২০০৮-’০৯ সালে মন্দা যুঝতে ওই পরিমাণ রাশ আলগা করা কতটা প্রয়োজন ছিল, তার কোনও বিশ্লেষণ আমি খুঁজে পাইনি।” এ বার তাই ফের মুঠো শক্ত করার কথাই ভাবা হচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোট কথা মাথায় রেখে বাজেটে নতুন কর বসিয়ে বড় ধাক্কা দিতে চান না চিদম্বরম। তাই কর কাঠামোয় তেমন রদবদল না করে, বরং আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে করের আওতায় এনে সরকারের আয় বাড়াতে চান তিনি। চিদম্বরমের বক্তব্য, “আমি স্থিতিশীল কর ব্যবস্থা এবং স্বচ্ছ-সরল কর আইনে বিশ্বাসী।” একই ভাবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে কর ফাঁকি প্রতিরোধ আইন (জিএএআর) নিয়ে জটিলতা ভোডাফোনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই মিটিয়ে ফেলতে চান তিনি।কর-কাঠামোকে সরল ও সুবিধাজনক করতে আগামী অর্থবর্ষ থেকে না হলেও অন্তত ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে প্রত্যক্ষ কর বিধি (ডিটিসি) চালু করতে চাইছে অর্থ মন্ত্রক। এই লক্ষ্যেই গত বাজেটে আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লক্ষ টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু যশবন্ত সিন্হার নেতৃত্বাধীন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সুপারিশ করে, ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত রাখা হোক। ২ লক্ষ ১ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে ১০% কর দিতে হয়। আর ৫ লক্ষ ১ টাকা থেকে ১০ লক্ষ পর্যন্ত ২০% এবং তার বেশি হলে ৩০% হারে আয়কর দিতে হয়। কমিটির সুপারিশ ছিল, ৩ লক্ষ ১ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে ১০% কর বসুক। ১০ লক্ষ ১ টাকা থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ২০% এবং তার বেশি আয়ে ৩০% কর বসুক। পার্থসারথি বলেন, “স্থায়ী কমিটির সুপারিশ খতিয়ে দেখে বিলে পরিবর্তন করা হচ্ছে।” তা ছাড়া, সবচেয়ে ধনীদের উপর বাড়তি কর বসানোরও প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা সি রঙ্গরাজন। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, বাড়তি কর না বসলেও সারচার্জ বসানো হতে পারে। এই বাজেটে নতুন কর ব্যবস্থা চালু না হলেও, তা কবে থেকে হবে, সেই সময়সীমা ঘোষণা করা হতে পারে।
কর কাঠামোয় বড় পরিবর্তন না করলেও, বাজেটে আমজনতাকে বেশি সঞ্চয়ে উৎসাহ দিতে চান চিদম্বরম। আয়কর আইনের ৮০সি ধারায় এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় মোট আয়ের থেকে বাদ দিয়ে করের হিসেব
করা হয়। ওই সীমা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। |