কখনও স্টেশনে বা বাসস্ট্যান্ডে। আবার কখনও অন্যের বাড়িতে দিন কাটিয়েছেন। বৃহস্পতিবার নিজের বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে এ কথা জানালেন ছায়াদেবী। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “প্রায় এক মাস নিজের বাড়ির বাইরে কাটিয়েছে। এ দিন ঘরে ঢুকতে পেরে ভাল লাগছে।” তবে আতঙ্ক তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তাঁর আশঙ্কা, ছোট ছেলে ও বৌমা ফের অত্যাচার শুরু করলে কী হবে? তাই পুলিশ প্রশাসনের কাছে তাঁর আবেদন, “আমার বিরুদ্ধে ওঠা বধূ নির্যাতনের অভিযোগ এবং আমরাও যে অভিযোগ জানিয়েছিলাম, তা যেন যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
পুলিশ জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশ মতো এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা ছায়াদেবী ও তাঁর বড় ছেলে ইন্দ্রনীল চক্রবর্তীকে নিয়ে শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ ডাঙালপাড়ার বাড়িতে যাওয়া হয়। এ দিনও গেটের তালা বন্ধ ছিল। তাই এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সুদীপ চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে তালা ভেঙে ওই বৃদ্ধা ও তাঁর ছেলেকে ঘরে ঢোকানো হয়। |
তালা ভাঙছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
অভিযোগ ছিল, ছোট ছেলে লালকমল চক্রবর্তী মা, দাদা ও বৌদিকে মারধর করে নিজের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। আদালতের নির্দেশ মেনে মঙ্গলবার ওই বৃদ্ধা ও বড় ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু গেটে তালা দেওয়া থাকায় ওই দিন তাঁরা বাড়িতে ঢুকতে পারেননি। বুধবার আদালত ফের নির্দেশ দেয়, তালা খোলা থাকলে ভাল, না হলে তালা ভেঙে তাঁদের বাড়িতে ঢোকাতে হবে। সেই নির্দেশ মতো পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা বলেন, “বৃদ্ধা যে অভিযোগ করেছেন, সেই মামলায় আগেই জামিন নিয়েছেন অভিযুক্তরা। বিষয়টি বিচারাধীন।”
তবে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকায় খুশি নন বৃদ্ধা। তাঁর ক্ষোভ, “আইনি জটিলতার জন্য আমাকে এ দিন দীর্ঘ ক্ষণ বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। কারণ, সাড়ে ১০টা নাগাদ থানায় যাই। সেখানে কাজ মিটিয়ে সাড়ে ১১টা নাগাদ বাড়িতে পৌঁছই। কিন্তু তখনও পুলিশ আসেনি। আমি অসুস্থ। তাই তালা বন্ধ থাকায় পড়শির বাড়িতে গিয়ে কিছু ক্ষণ করতে হয়েছে।” বাড়িতে ঢুকতে পেরে তিনি যেমন খুশি হয়েছেন, তেমনি আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। এরই মাঝে ঝরে পড়েছে আক্ষেপের সুর। বৃদ্ধার কথায়, “ছোট ছেলেকে বেশি ভালবাসতাম!” ছোট ছেলে লালকমলের দাবি, “দাদা ও মা নাটক করছে। আমরা কাজের খোঁজে বেরিয়েছি। কোথাও পালিয়ে যাইনি।” |