পারিবারিক জমির মামলায় ষড়যন্ত্র ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠল জামুড়িয়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর বিশ্বনাথ চট্টরাজের বিরুদ্ধে। তাঁর দাদা পরেশনাথ চট্টরাজ আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দর কাছে সাহায্য চেয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ। যদিও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে।
পরেশবাবু জানান, জামুড়িয়ার নিঘায় তাঁদের পরিবারের ৫৬ শতক জমি রয়েছে। অংশীদার ২৪ জন। তাঁর অভিযোগ, বিশ্বনাথবাবু পরপর দু’বার তাঁর কাউন্সিলরের সিলমোহর ব্যবহার করে ‘ওয়ারিশন সার্টিফিকেট’ দিয়েছেন। তাতে অংশীদারের সংখ্যার তফাত রয়েছে। ২০১২ সালের ১২ জুনের শংসাপত্রে চব্বিশ জনেরই নাম ছিল। কিন্তু ওই মাসেরই ২৬ তারিখ বিশ্বনাথবাবু ফের একটি ‘ওয়ারিশন সার্টিফিকেট’ তৈরি করিয়ে সিলমোহর দেন। তাতে নাম রয়েছে মাত্র আট জনের। পরেশবাবু ও তাঁর খুড়তুতো ভাই মানস চট্টরাজ-সহ ১৬ জন শরিকের নাম বাদ।
পরেশবাবুদের আরও অভিযোগ, নতুন ওয়ারিশন সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে বিশ্বনাথবাবুরা ‘ষড়যন্ত্র করে’ জমি বিক্রির জন্য আসলাম খান নামে এক জনকে ‘পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি’ দেন। পরে ওয়ারিশন সার্টিফিকেটে নাম থাকা আট জনের পাঁচ জন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি জারি করে আসলম খানের হাত থেকে ওই ক্ষমতা সরিয়ে নেন। কিন্তু তারই মধ্যে আসলাম খান ওই ৫৬ শতক জমি অন্য এক জনকে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ।
বিশ্বনাথবাবুর দাবি, “সবার অনুরোধেই প্রথম বারের ওয়ারিশন সার্টিফিকেটে নিজের নাম লিখি। কিন্তু তার পরের সার্টিফিকেটটির সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমারই পরিবারের কেউ আমার নাম দেওয়া সাদা প্যাডে আমার অনুপস্থিতিতে ওই কাজ করেছে।” আসলাম খানের জমি বিক্রি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যে পাঁচ জন সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আসলামকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি থেকে সরিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে আমিও ছিলাম। তার পরেও কী ভাবে আসলাম এই ভাবে জমি বিক্রি করল, তা জানি না।”
আসলাম খানের দাবি, “গত ৭ মে ওঁদের বাড়িতে গিয়ে আমি জমি বিক্রির ব্যাপারে সম্মতি নিয়েছিলাম। ১১ তারিখ আট জন পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দেন। সেই মতো, ২৫ মে ৩০ শতক এবং ৩ জুলাই ১৭ শতক জমি বিক্রি করেছি। ৩ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় আমি জমি বিক্রি করি আর দুপুর ২টোয় ওঁরা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি বাতিল করেন। বেআইনি কোনও কাজ আমি করিনি।”
মানসবাবু জানান, ২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তিনি ও ২ ডিসেম্বর পরেশবাবু জামুড়িয়া থানায় পৃথক ভাবে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কিন্তু তাতে প্রতিকার মেলেনি। গত ৭ জানুয়ারি পরেশবাবু আসানসোল নিম্ন আদালতে মামলা দায়ের করেন। ১১ জানুয়ারি এসিজেএম আদালত জামুড়িয়া থানাকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। তাতেও থানা পদক্ষেপ করেনি বলে তাঁর অভিযোগ।
পরেশবাবুর বক্তব্য, “আমার মেজো ভাই বিশ্বনাথ সিপিএমের কাউন্সিলর। ছোট ভাই লোকনাথ পুলিশ পরিচালিত গুঞ্জন পার্কে টিকিট বিক্রি করে। আমাদের ধারণা, এই কারণেই পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই শনিবার পুলিশ কমিশনারের দফতরে প্রতিকারের জন্য লিখিত আবেদন জানিয়েছি।” লোকনাথ পাল্টা বলেন, “আমাদের বাড়িতে ২৪ জনের বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, আট জন জমির দেখভাল করবে। তাই আমার দাদা বিশ্বনাথ প্রথম ওয়ারিশান সার্টিফিকেট দেন। পরেরটা অন্য কেউ করেছে। পুলিশকে প্রভাবিত করার প্রশ্নই নেই। আমার বড়দা পরেশ তৃণমূলের সমর্থক। তিনি পারিবারিক ঘটনাকে রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্ঠা করছেন।”
জামুড়িয়া থানার ওসি চন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, “পুলিশ কারও কথায় চলছে না। আদালতের নির্দেশে চক্রান্ত করে প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের মামলা করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।” পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ বলেন, “আমি এখনও বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।” |