আজ বাদে কাল যুদ্ধু হবে....
হাল্লার মন্ত্রীর সেই কথাটাই ঝট করে মনে পড়ে যাবে কাণ্ডকারখানা দেখলে! তবে যুদ্ধ নয়, প্রস্তুতিটা উৎসবের।
কাল, শনিবার পানাগড়ে মাটি উৎসবের উদ্বোধন করতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবারও টালির চাল দেওয়া দরমার বেড়ার কুটিরে চলেছে মাটি দিয়ে দেওয়াল লেপার কাজ। গোবর-মাটি দিয়ে নিকোনো হয়েছে মেঝে। মাটি খুঁড়ে সাবমার্সিবল পাম্প দিয়ে জল ভরে বানানো হচ্ছে জলাশয়। আর বিশাল উঁচু হয়ে মাথা তুলছে মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চ।
সময় বেশি মেলেনি। গত ২০ জানুয়ারি দক্ষিণ ২৪ পরগণায় এক অনুষ্ঠানে মমতা ঘোষণা করেন, মাটি উৎসব পানাগড়ে হবে। প্রথমে বাছা হয়েছিল পানাগড় মিত্র সঙ্ঘের ময়দান। কিন্তু সেখানে উৎসব হলে এমনিতেই যানজটে জেরবার পানাগড় বাজারের পরিস্থিতি আরও বেহাল হবে বুঝে পরে ভাবা হয়, বুদবুদের কোটা পঞ্চায়েত সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের জমিতে উৎসব হবে। কিন্তু যোগাযোগের সমস্যা এবং ওই জমি নিয়ে বেশ কিছু বর্গাদারের ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার অভিযোগ থাকায় পিছিয়ে আসে প্রশাসন। শেষমেশ পানাগড় থেকে প্রায় দু’কিমি দূরে বিরুডিহায় বায়ুসেনা স্টেশনের পাশে উৎসব করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। |
উৎসবের থিম কৃষি ও মাটি-কেন্দ্রিক। সেই সঙ্গে, গ্রামীণ বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতিও তুলে ধরা হবে। ‘থিম’ গান হিসাবে বাছা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ’। কৃষি ও মাটি সংক্রান্ত সরকারি দফতরগুলি স্টল দিচ্ছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে হস্তশিল্পীরা আসছেন। তাঁরা কেউ তাঁতে চাদর বানাবেন, কেউ জাল বুনবেন, কেউ বাঁশের কাজ করবেন, কেউ মাটির পুতুল বানাবেন, কেউ বা কী ভাবে ঢেঁকি ব্যবহার করে চাল তৈরি করা যায় তা দেখাবেন। শিল্পকর্মের প্রদর্শনীও থাকবে।
বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কাল দুপুর ২টোয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকছে বাউল গান ও লোকসঙ্গীত। জেলার শিল্পীদের সংবর্ধনা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। সাংসদ কোটার অর্থে বেশ কয়েকটি জেলাকে অ্যাম্বুল্যান্সও দেবেন। অনুষ্ঠানে থাকার কথা শুভাপ্রসন্ন, যোগেন চৌধুরী ও মহাশ্বেতা দেবীর। মমতা তো বটেই, শুভাপ্রসন্ন এবং যোগেন চৌধুরীও উদ্বোধনের পরে ছবি আঁকবেন। সে জন্য মূল মঞ্চের পাশে আরও একটি মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। সন্ধ্যায় বসবে যাত্রাপালার আসর। পরের দিন থেকে দুপুর ১টায় শুরু হবে বিভিন্ন সরকারি দফতরের অনুষ্ঠান, বিকাল ৪টে থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উৎসব চলবে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
উৎসব আয়োজনে প্রধান দায়িত্ব নিয়ে কৃষি দফতরই বাকি দফতরগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ করছে। উৎসবে স্টল দিচ্ছে কৃষি বিপণন, বন, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন, মৎস্য, ক্ষুদ্র সেচ, পর্যটন, তথ্য ও সংস্কৃতি, ক্ষুদ্র শিল্প, খাদ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন, জলসম্পদ অনুসন্ধানের মতো নানা দফতর। তারা দিনভর অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রাজ্যের সব জেলার প্রধান লোকসঙ্গীত ও লোক-সংস্কৃতি তুলে ধরা হবে। বীরভূমের বাউল, বর্ধমানের রণ-পা, কবিগান, মালদহের গম্ভীরা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুতুল নাচের পাশে থাকবে জলপাইগুড়ির ভাওয়াইয়া, মুর্শিদাবাদের আলকাপ, বাঁকুড়ার ঝুমুর ইত্যাদি। কলকাতার লোকগানের দল ‘দোহার’ও আসছে গান গাইতে। |
সময় কম থাকায় বেশ তাড়াহুড়ো যে হচ্ছে তা টের পাওয়া গিয়েছে এ দিন উৎসব প্রাঙ্গণে গিয়ে। সদ্য তৈরি জলাশয়ে সদ্য তৈরি হয়েছে বাঁধানো পুকুরঘাট। সিমেন্ট শুকোয়নি। গাড়ি-গাড়ি খড়, গোবর, মাটি, বাঁশ, টালি পড়ে যত্রতত্র। তারই মাঝে চলছে আলপনা দেওয়া, লেখাজোকার কাজ। উৎসব চত্বরে গাছের গোড়া মাটি ও ইট দিয়ে বাঁধাই করা হচ্ছে। নবদ্বীপের বৈষ্ণবপাড়া সমিতি থেকে এসেছেন তাঁতশিল্পী লক্ষ্মণ মজুমদার। তিনি ব্যস্ত চাদর তৈরির হস্তচালিত তাঁত চালু করতে। কোথাও ঢেঁকি পাতা চলছে, কোথাও বা মাছ ধরার জালের মেশিন বসানোর কাজ। বিভিন্ন সরকারি দফতরের আধিকারিকেরা নিজের-নিজের স্টলে দেখভালে ব্যস্ত।
আর তো মোটে একটা দিন। বেঙ্গল লিড্স-এর মতো অব্যবস্থা হবে না তো এখানেও? জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনার দাবি, তেমন সম্ভাবনা নেই। আয়োজন নিখুঁত করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে এর আগে তিনটি বৈঠক হয়েছে। এ দিন চতুর্থ বারের জন্য বৈঠক বসে। জেলাশাসক বলেন, “অগ্রগতি সন্তোষজনক। মুখ্যমন্ত্রী আসার আগে এই চত্বরের চেহারাই বদলে যাবে।”
উৎসব কি বদলাতে পারবে মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষগুলোর কষ্টের দিনলিপি? |