হুল্লোড় |
ডেটের অজুহাত লাগে না
কেন ঋতুপর্ণার সঙ্গে ছবি করলেন না তিনি? ডেট না থাকার সমস্যা?
না ভয়? অকপট পাওলি জানালেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্তকে |
বলিউডে তো আপনার নতুন নাম মিস ফিশি...
(হেসে) ওহ্! ওটা তো অনেক দিন হল। খুব মাছ ভালবাসি যে। এই তো গোয়ার বাগা বিচে শ্যুট করতে গিয়ে মন-প্রাণ ভরে সি-ফুড খেলাম। কোঙ্কনি ছবি। নাম ‘বাগা বিচ’। এক জন মহিলা মালা বিক্রেতার চরিত্র। ‘শ্যাক’-এর মালিকরা শোষণ করে। পুলিশরাও।
ওই মেয়েরা কিন্তু গড়গড়িয়ে রাশিয়ান আর ফরাসি ভাষায় কথা বলেন...
হ্যাঁ ।পড়াশুনো জানে না। এ দিকে রাশিয়ান, ফরাসি বলছে! বিদেশি খদ্দেরের সঙ্গে ব্যবসা জমানোর জন্য। আমিও ওই ধরনেরই একটি চরিত্রে অভিনয় করছি।
এটা কি সত্যি যে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ছবিতে থাকলে আপনি সেই ছবিতে কাজ করতে চান না?
এই কথাটা আবার কোথা থেকে এল?
আপনি তো শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আর নন্দিতা রায়ের ‘অলীক সুখ’ ছবিটা করলেন না...
ডেটের সমস্যা।
আপনার নাকি ভয় ছিল ঋতুপর্ণা ও শিবপ্রসাদ বন্ধু, তাই আপনার উপর ফোকাসটা হয়তো কমে যেতে পারে...
আমি ব্যক্তিগত ভাবে সিনেমাকে দেখি না। পরিচালক তাঁর ছবির প্রয়োজনে অভিনেতাকে নেন। ভাবি না যে শুধু আমাকে নিয়েই ছবি তৈরি হবে। আর অন্যদের অভিনয়টা পাতে দেওয়া যাবে না। আমার পরবর্তী ছবি বিক্রম ভট্টের প্রযোজনায় ‘অঙ্কুর অরোরা মার্ডার কেস’। সহ-অভিনেতা কেকে, অর্জুন মাথুর আর টিসকা চোপড়া। সবাই দক্ষ।
টিসকা আর ঋতুপর্ণার স্টার স্টেটাসে একটু তফাত হয়ে যায় কি?
কিছু পছন্দ না হলে খোলাখুলি সেটা বলে দিতে পারি আমি। ডেটের অজুহাত লাগে না। একসঙ্গে দশটা ছবি করার অভ্যেস নেই। একটা শেষ করে অন্যটায় হাত দিই। ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’-এর ছোট চরিত্রের জন্য আজও প্রশংসা শুনি। বিরসা দাশগুপ্তের ছবিতে তো কত অভিনেতা। তবু করলাম। চরিত্রের স্ক্রিন লেন্থ নয়, গভীরতাই গুরুত্বপূর্ণ।
বলিউডে পাড়ি দিয়ে এখন বাংলা ছবি করার ক্রাইটেরিয়াটা পাল্টে গিয়েছে?
না। আমি গৌতমদা বা ঋতুদার সঙ্গে যেমন কাজ করতে চাই, তেমনই নতুন পরিচালকদের সঙ্গেও। তিনটে জিনিস দেখি পরিচালক, স্ক্রিপ্ট আর চরিত্র। ব্যানারটা সবার শেষে। |
পাওলি। ছবি: কৌশিক সরকার |
অনেকে তো ওটাই প্রথমে দেখেন...
প্রযোজক ভাল না হলে ছবিটা দাঁড় করাতে পারবেন না। তবে নতুন প্রযোজকের সঙ্গেও কাজ করি। স্নেহাশিস চক্রবর্তীর ছবি করছি। নাম ‘প্রোমোশন’। উনিই প্রযোজক। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি না। সিনেমা ‘টিম ওয়ার্ক’। ‘তলাশ’-এ নওয়াজউদ্দিন আর সুব্রত দত্তকে দেখুন। যেটুকু কাজ করেছেন, সেটুকুই কী ভাল!
মৈনাক ভৌমিকের পরের ছবি নিয়েও কোনও ক্ষোভ পুষে রেখেছেন?
জানি না কারা প্রচার করছেন যে ছবিটা আমার জীবনের উপর ভিত্তি করে বানানো হচ্ছে। ছবির নায়িকার একটি বাচ্চা আছে। সে মদ্যপ। হতাশায় ভোগে। আমার জীবনে এ সব কিছু নেই। খামোখা আমার নামটা জড়ানোর মানে কী? বিতর্ক তৈরি করে ছবি চালানোর চেষ্টা করাটা ভুল।
এ বিষয়ে আপনার মৈনাক বা স্বস্তিকার সঙ্গে কথা হয়েছে?
মৈনাক আমার বন্ধু। ওর ‘বেডরুম’ ছবিতে আমি কাজ করেছি। আমাদের একটা ছবি করারও কথা হচ্ছে। হয়তো লস অ্যাঞ্জেলেসে শ্যুটিং হবে। স্বস্তিকার সঙ্গে কথা হয়নি। ও পেশাদার অভিনেত্রী হিসেবে চরিত্রটা দেখছে নিশ্চয়ই।
সামনে প্রায় আধ ডজন ছবি। ডেট চাইলে কত দিন অপেক্ষা করতে হবে?
আফশোস হবে যদি ভাল ছবি ছেড়ে দিতে হয়। সামনে একটা বায়োপিক করার কথা চলছে। মিস শেফালির উপর ছবিটারও শ্যুটিং শুরু হবে। এখন অঞ্জন দাসের ‘অজানা বাতাস’ করছি। একটা হিন্দি ছবি। নাম ‘ইয়ারা সিলি সিলি’। সুভাষ সায়গল পরিচালক। গুলজার এর সম্পাদক ছিলেন। সতীশ কৌশিকের সঙ্গে একটা রোম্যান্টিক-কমেডি করার কথা চলছে। আর আছে মিঠুনদার সঙ্গে ‘হোয়াইট মিসচিফ’। সামনে ‘সুইটহার্ট’ আর ‘হইচই’ মুক্তি পাচ্ছে। একটা আন্তর্জাতিক ছবির কথা চলছে। মাসটা তিরিশ দিনের বদলে পঁয়তাল্লিশ দিনের হলে ভাল হত (হাসি)।
মাস তো বড় জোর একত্রিশ দিন হতে পারে। তা একত্রিশ দিনের মধ্যে প্রেম-বন্ধুত্বের সময় কোথায়?
ইচ্ছা করলে বার করা যায়।
আপনি কি বিক্রমের কথা বলছেন?
আনন্দ প্লাস-এর ক্যুইজের দিন দেখলাম ও আপনার ট্রফিটা গাড়িতে গিয়ে রাখল...
বিক্রম খুব কেয়ারিং। আমার সত্যিই ভাল বন্ধু।
তারকা হয়ে কি বন্ধু পাওয়া সম্ভব?
আমি ও ভাবে ভাবিই না। প্রথম প্রথম ইন্ডাস্ট্রিতে এসে অন্তর্মুখী ছিলাম। কথা বলতে পারতাম না। বুম্বাদা আমাকে একবার বলেছিলেন, “এত কম কথা বলিস কেন? আমি ভাবতাম তুই হয় বোবা নয়তো অ্যারোগ্যান্ট। এখন বুঝছি তুই তো কোনওটাই নোস।” মুম্বইতে গিয়ে সব পাল্টে গেছে।
শিলাদিত্য পত্রনবীশ-এর সঙ্গে কাটানো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে?
প্যাট চলে যাওয়ার পর আমার জীবনটা একদম পাল্টে যায়। দুঃখটা নিজের মধ্যে চেপে রেখে দিই। আর নিজেকে কাজের মধ্যে ডুবিয়ে ফেলি। |
অঞ্জন দাসের ‘অজানা বাতাস’ ছবির শ্যুটিং-এ শঙ্কর চক্রবর্তী ও পাওলি |
প্যাট থাকলে এত সব করা যেত?
প্যাট বেঁচে থাকতেই ‘কালবেলা’ করি। আমি কাজ চাইতে পারিনি কোনও দিন। আমি একশো শতাংশ দিয়েছিলাম প্যাট আর আমার সম্পর্কে। প্যাটকে বাঁচাতে পারিনি। এক দিকে কাজের ক্ষেত্রে স্ট্রাগল, অন্য দিকে ব্যক্তিগত জীবনটাও কেমন হয়ে গেল। প্যাট মারা যাওয়ার আগে আমার কেরিয়ারের জন্য অনেক শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। যে করেই হোক সেটার সম্মান রাখতেই হবে।
সহজ নয় নিশ্চয়ই...
আমার তো ইন্ডাস্ট্রির ব্লু ব্লাডটা নেই। মা বাবা তো কাউকে চিনতেনই না। মা ওয়াইন পার্টি দেন না। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের। কোনও স্টারের কোলে আমি মানুষও হইনি। খেটে আজ নিজের জায়গা তৈরি করেছি। শ্রদ্ধা পেয়েছি। মুম্বইতে বাড়ি ভাড়া করে থাকি। আনন্দ প্লাসের ক্যুইজে মিঠুনদা যখন দেবকে বলছিলেন যে ওঁরা স্টার চিলড্রেন নয় বলে ওঁদের পরিবার নিয়ে প্রশ্ন হচ্ছে না, আমি বললাম আমাকেও যেন ওঁদের দলে নেওয়া হয়।
অনেকেরই তো ‘মিউজ’ হয়ে উঠেছেন আপনি...
(লজ্জা পেয়ে) মাঝে মধ্যে কেউ কেউ সেটা বলে থাকেন। কিছু সাহিত্যিক লেখা দেখিয়ে বলেছেন যে আমাকে ভেবেই সেটা লেখা। একবার এক চিত্রশিল্পী বলেন, শ্যুটিং চলাকালীন আমার অভিনয় করা দেখে ছবি আঁকবেন। ক্যামেরার সামনে অভিনয় করা এক রকম। তবে একজন শিল্পীর সামনে... কী জানি হয়তো অস্বস্তি হত। রাজি হতে পারিনি।
ইন্ডাস্ট্রি এত দিনে কী কী শিখিয়েছে?
কে কী বলছে তাতে কান দিও না। পেশাদার আর ব্যক্তিগত জীবন আলাদা রাখতে শেখো। সংবেদনশীল হয়ে নিজের আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখো। পরিমিতি বোধটা দরকার।
তাই কি বিক্রম আর আপনার সম্পর্ককে কোনও নাম দিতে চান না?
বিক্রম স্পেশাল। ভাল মানুষ।
মুম্বইতে বিক্রমের সঙ্গ পান না। একা লাগলে কী করেন?
গান শুনি। গুনগুন করি। তবে এখন আর একাকীত্বে নিজেকে ভুগতে দিই না। লাইফ এনজয় করতেই ভালবাসি।
সম্পর্কের দায়বদ্ধতাতে বিশ্বাস করেন?
হ্যাঁ। তাই হয়তো ব্যক্তিগত জীবনে হুট করে কারও সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি না।
‘টয় বয়’ আর ‘ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিটস’? এ সবে বিশ্বাস রাখেন?
না। ও সব একদম মেনে নিতে পারি না। |
মেক আপ: অনিরুদ্ধ চাকলাদার
স্টাইলিং: স্যান্ডি |
|