|
|
|
|
জংলি বিল্লির কাহিনি |
এখন শহুরে গায়িকা। নেটে তাঁর গানের ভিডিও দেখেছেন তেরো লক্ষ মানুষ।
প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার নতুন রূপের জাদু কী? জানাচ্ছেন ইন্দ্রনীল রায় |
বেরিলি থেকে রাঁচির দূরত্ব অনেকটাই। তাতে কী?
আধুনিক ভারতের এই দুই শহর থেকেই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক কালের সফলতার সব চেয়ে বড় দু’টি কাহিনি।
প্রিয়ঙ্কা চোপড়া ও মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।
“আমি তো প্রিয়ঙ্কাকে প্রায়ই বলি তুই আর মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এক রকম। তোদের নিজেদের কঠিন পরিশ্রম ছাড়া কিছুই ছিল না। সিস্টেমের সঙ্গে লড়াই ছিল। বড় শহরের নাক-উঁচু করা কটূক্তি ছিল। কিন্তু নিজের জেদে দু’জনেই কোথায় পৌঁছে গিয়েছে আজকে,” প্রিয়ঙ্কার প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করাতে ফোনের ও পার থেকে বলছিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক মধুর ভাণ্ডারকর।
প্রিয়ঙ্কার জীবনে মধুরের অবদান অনেকটাই। ‘ফ্যাশন’ ছবিটি করার পর থেকেই প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবতে শুরু করে বলিউড। তাই মধুরও খোলাখুলি বলেন, “প্রিয়ঙ্কার কাজের প্রতি নিষ্ঠা যে দেখেনি সে জানে না। ছোটখাটো খুঁটিনাটি জিনিসের উপর আশ্চর্য নজর আছে ওর, মাথাটা পরিষ্কার এবং অসম্ভব উচ্চাকাঙ্খী। কিন্তু সব চেয়ে বড় গুণ হল, আজও মধ্যবিত্ত।
তাই দর্শকের সঙ্গে ওর সংযোগটাও বেশি। আগে ওকে সিনেমায় নেও য়ার সময় দু’বার ভাবত সবাই। আজ ও সবার প্রথম পছন্দ ,” বলছিলেন মধুর।
সত্যিই আজকে প্রিয়ঙ্কা সবার প্রথম পছন্দ। শাহরুখ খান হোক কী রণবীর কপূর বা হৃতিক রোশন সব বড় হিরোর বিপরীতে প্রিয়ঙ্কা। “বিদ্যার বিয়ের পর হাতে শুধু দু’টো ছবি। শোনা যাচ্ছে ক্যাটরিনা কইফের ঝামেলা চলছে আদিত্য চোপড়ার সঙ্গে। করিনাও বিয়ের পরে কাজ কমিয়ে দিয়েছেন। আছেন শুধু অনুষ্কা শর্মা। কিন্তু প্রিয়ঙ্কার জায়গায় পৌঁছতে এখনও অনেক দেরি। আজকে প্রিয়ঙ্কা ডেট দিতে না পারলে তবেই বাকিদের কাছে যান প্রযোজক-পরিচালকেরা,” বলছিলেন সিনেমার বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ আমোদ মেহরা।
এবং গত কয়েক বছরে প্রিয়ঙ্কার স্ট্রাইক রেট প্রায় ধোনির মতোই। ‘দোস্তানা’, ‘ডন টু’, ‘অগ্নিপথ’, ‘বরফি’ সব সুপার হিট। হাতে ‘কৃশ থ্রি’, ‘চমকি চামেলি’, ‘জঞ্জির’-এর রিমেক। রয়েছে ‘দোস্তানা’ আর ‘রক অন’-এর সিকোয়েল। এর সঙ্গে যোগ করুন তাঁর গানের অ্যালবাম ‘ইন মাই সিটি’।
|
|
‘ইন মাই সিটি’ মিউজিক ভিডিওর এক দৃশ্যে প্রিয়ঙ্কা চোপড়া |
ইউ টিউবে এই অ্যালবামের ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর ১৩ লক্ষেরও বেশি ‘হিটস্’। গানের সিডি বিক্রিতেও সমানে টক্কর দিচ্ছে দুঁদে গায়কদের সঙ্গে তাঁর গান। আই টিউনস্ চার্ট লিস্টে ইতিমধ্যে প্রথম আশিতে। এমনকী ডিজেদেরও পছন্দের হয়ে উঠেছে এই গানের মিক্স।
গায়িকা প্রিয়ঙ্কা চোপড়া বিভিন্ন ইন্টারভিউতে নিজেকে ‘রেকর্ডিং আর্টিস্ট’ বলে উল্লেখ করে থাকেন। এই সব পরিভাষা কি একেবারেই প্রিয়ঙ্কার মধ্যে যে পাশ্চাত্য প্রভাব তৈরি হয়েছে তা থেকে আসছে? হতেও পারে। যে ভাবে চার্ট লিস্টে টক্কর দিচ্ছেন পশ্চিমী গায়ক-গায়িকাদের!
তবে সবাই যে খুব সোনা মুখ করে তাঁর গানকে নিয়েছেন, সেটা কিন্তু বলা যাবে না। তাঁদের আক্রমণের তির প্রিয়ঙ্কার ‘অ্যাকসেন্ট’ নিয়ে। অভিযোগ এও যে ‘ইন মাই সিটি’র ভিডিওতে কোনও ভারতীয় শহর নেই কেন?
যদিও এ সব নিয়ে প্রিয়ঙ্কা আদৌ চিন্তিত নন। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তো জানিয়েই দিয়েছেন, “আমি এখনও আমার স্টাইল খুঁজে চলেছি। আমার মনে হয় স্টাইলটা একটা ‘ফিউশন’, যেটা এশিয়া হোক কী ইউরোপ সব জায়গাতেই সমান ভাবে গৃহীত হবে।”
আর গানের ব্যাপারে?
“পপ কালচার মানেই এন্টারটেনমেন্ট। ‘ইন মাই সিটিও’ তাই,”
লিখেছিলেন প্রিয়ঙ্কা।
|
প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার গানের ভিডিওটা দেখলাম। কোনও একটি বিশেষ ক্ষেত্রে তারকা হয়েও সম্পূর্ণ অন্য এক ক্ষেত্রে নিজেকে বেশ মেলে ধরেছেন প্রিয়ঙ্কা। এটা খুবই প্রশংসনীয় @chetan_bhagat |
|
সমালোচকদের কথা তো থাকবেই। তবে ‘ইন মাই সিটি’ ভাল লাগার তালিকায় কিন্তু এর মধ্যেই ঢুকে গিয়েছে বেশ কয়েকজন ‘সেলিব্রিটি’র নাম। লেখক চেতন ভগত থেকে ‘ইনসেপশন’, ‘ডার্ক নাইট রাইজেস্’ অভিনেতা জোসেফ গর্ডন লেভিটও আছেন প্রিয়ঙ্কার গান অনুরাগীদের তালিকায়।
প্রিয়ঙ্কার ব্যাপারস্যাপার দেখে পশ্চিমী গান গাওয়া নিয়ে তিনি যে রীতিমতো উৎসাহী হয়ে পড়েছেন তা বোঝাই যায়।
সেপ্টেম্বর মাসে ‘বরফি’ ছবির প্রচারের সময় যখন কলকাতায় এসেছিলেন, তখন নিজেই বলেছিলেন গানের ব্যাপারে তিনি এতটাই সিরিয়াস যে লস অ্যাঞ্জেলেসে বাড়ি কেনার কথাও ভাবছেন। “প্রিয়ঙ্কা এরকমই। যদি কোনও কাজে মন দেয় ও সেটা হাসিল করবেই। গান সম্বন্ধেও ও অসম্ভব সিরিয়াস। ওর একটা অদ্ভুত জেদ আছে,” বলছিলেন ‘বরফি’র পরিচালক অনুরাগ বসু।
একই কথা বললেন পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকরও। প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে ‘হোয়াটস ইওর রাশি’ ছবি বানিয়েছিলেন আশুতোষ। তিনি বললেন, “কাজের প্রতি প্রিয়ঙ্কার অসাধারণ একাগ্রতা। প্রত্যেকটা ব্যাপারে ওর নজর থাকে ছবি বানানোর সময় এবং সব চেয়ে বড় কথা প্রিয়ঙ্কা অত্যন্ত পেশাদার এক অভিনেত্রী।”
কিন্তু সাফল্যের এই রাস্তা মোটেই সহজ ছিল না বেরিলির এই কন্যার।
গৌরী খান ও তাঁর বন্ধুরা প্রকাশ্যে প্রিয়ঙ্কাকে অবজ্ঞা করতে ছাড়েননি শাহরুখ খানের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার খবর পাওয়ার পর। কর্ণ জোহরের মতো পরিচালকও ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে আর কাজ করবেন না। তবে প্রিয়ঙ্কা-বিরোধী এই অপপ্রচার শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি।
আজও শাহরুখ খান প্রকাশ্যে বলেন প্রিয়ঙ্কা তাঁর ‘ফেভারিট’। কর্ণ জোহরকেও নিজে ফোন করে মিটমাট করতে হয়েছে প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে। “হ্যাঁ, আমি খারাপ ভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলাম। তার পর আমি নিজেই ফোন করে প্রিয়ঙ্কাকে বলি আমার চল্লিশ বছরের জন্মদিনে আসতে। আমার সঙ্গে ওর একটা মানসিক যোগাযোগ আছে,” প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে ঝামেলার প্রসঙ্গে বলেছিলেন কর্ণ।
এ সবের পেছনে ‘থিয়োরি’ কিন্তু একটাই। আজকের বলিউডের পৃথিবীতে প্রিয়ঙ্কাকে আর অবজ্ঞা করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই অনেকের মতে এখনকার বলিউডে প্রিয়ঙ্কা চোপড়া আর শুধু মাত্র হিরোইন নন। ২০০৯ সালের একটি বিজ্ঞাপনী সমীক্ষায় জানা যায়, প্রিয়ঙ্কা বিজ্ঞাপনে প্রচারিত পাঁচ জন সব চেয়ে জনপ্রিয় ‘সেলিব্রিটি’ তারকাদের এক জন। সেই সমীক্ষাতে বাকি নামগুলো ছিল এম এস ধোনি, শাহরুখ খান আর অমিতাভ বচ্চনের।
বিজ্ঞাপন প্রতি যিনি তিন থেকে পাঁচ কোটি নেন তাঁর মাত্রাটাই অন্য, মনে করেন মুম্বইয়ের বিজ্ঞাপন জগতের লোকজন। “প্রিয়ঙ্কার হাতে সব বড় বড় ব্র্যান্ড। ভারতের ছোট ছোট শহরে প্রিয়ঙ্কার অদ্ভুত আবেদন। হিন্দি বলয়ে তো নায়িকা হিসেবে প্রিয়ঙ্কা সব থেকে জনপ্রিয়,” বললেন মুম্বইয়ের বিজ্ঞাপনী সংস্থার বড় কর্তা অবিনাশ মন্ত্রী।
তবে এই সবের মাঝখানে ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা তাঁর পেছনে লাগতেও ছাড়ছেন না এমনটাই খবর। তাঁদের কথায় বিদ্যা বালনকে সহজে ভুলতে পারবেন না প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। গত বছর ‘বরফি’তে তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা অভিনয় করেছেন প্রিয়ঙ্কা। কিন্তু তা সত্ত্বেও ‘কহানি’র ‘বিদ্যা বাগচি’ প্রায় প্রত্যেকটা পুরস্কার উৎসবেই হারিয়ে দিল ‘বরফি’র ‘ঝিলমিল’কে।
বলিউডের অনেকেই বলছেন যদি ‘কহানি’ না থাকত তা হলে সব পুরস্কারই পেতেন বেরিলির প্রিয়ঙ্কা।
“তবে প্রিয়ঙ্কার তাতে কিছু যায় আসে না। ও শুধু নিজের কাজটাই করে যাবে। পুরস্কার আসবে-যাবে, কিন্তু প্রিয়ঙ্কাকে ওর লক্ষ্য থেকে সরানো যাবে না,” তাঁর সম্বন্ধে শেষ কথাটা বলেই দিলেন মধুর। |
|
|
|
|
|