উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতির অঙ্গনে দীনেশ রায় সুপরিচিত নাম। গবেষক নন, প্রথাগত ভাবে রচনা করেননি লোক সংস্কৃতি বিষয়ক গ্রন্থও তাঁর অবদান উত্তরের শিল্পীসমাজে সর্বজনস্বীকৃত। সত্তরের দশক থেকে উত্তরের প্রান্তিক শিল্পীদের খুঁজেপেতে কলকাতার বিভিন্ন বিভিন্ন কোম্পানিকে দিয়ে রেকর্ড করিয়ে স্বদেশে ও বিদেশে প্রচারের যে সুযোগ তিনি করে দিয়েছেন, তা লোক-সংগীত শিল্পীরা আজও ভোলেননি। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত লোকগান সংস্থার মধ্য দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সি শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। এ রকম ৩০-৩৫ জন শিল্পী সিসিআরটি (সেন্টার ফর কালচারাল রিসোর্স ট্রেনিং সেন্টার) থেকে স্কলারশিপ পেয়েছে। ভারত সরকারের সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালনায় ১৮-২৫ বছর বয়সী প্রতিভাবানদের দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। সংগ্রাহকের ভূমিকাতেও ছুটে বেরিয়েছেন উত্তরবঙ্গের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। |
সত্য পির, মুথা খেলা, ভান্ডি খেলা, মেচেনি, তুক্ষা, বিষহরি, ময়নামতী এমনই বিভিন্ন আঙ্গিকের গান তাঁর সংগ্রহের তালিকায় একের পর এক যুক্ত হয়েছে। রাজবংশী ভাষার প্রথম সাহিত্য পত্রিকা ‘পোহাতী’ সহ-সম্পাদনার দায়িত্ব সামলেছেন। সত্তরের দশকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বাংলা আঞ্চলিক অভিধান’ প্রকল্পে সম্পাদনা-সাহায্যকারীর ভূমিকা পালন করেছেন। ৮০-র দশক থেকে জাপানের গবেষক মাসাউকি ওনিগি-র সঙ্গে যৌথ ভাবে লুপ্তপ্রায় লোক-সংস্কৃতির উপাদান সংগ্রহের উদ্যোগ নেন। কাজ করেছেন মস্কোর গবেষিকা শেতলানা রাইজাকোপা-র সঙ্গেও। ইতিমধ্যেই মাসান ও ভাওয়াইয়া গানের আঙ্গিকে তন্ত্র ও তুক্ষার গানের উপর তৈরি তাঁর তথ্যচিত্র মস্কো ও জাপানে প্রদর্শিত হয়েছে। লোকসংস্কৃতি যে আমাদের আত্মপরিচয়, তা বিভিন্ন তথ্যচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরার ব্যবস্থা করেন। এ ভাবে দেশজ সংস্কৃতির প্রতি কতখানি ভালবাসা ও মমত্ব রেখেই দেশের সেবা করা যায়, তার অন্যতম উদাহরণটির নামই দীনেশ রায়!
|
রাজবংশী ভাষার পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস |
দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে লেখা বই। উত্তরের আঞ্চলিক ভাষা রাজবংশী-র পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস। দেবেন্দ্রনাথ বর্মার লেখা ‘রাজবংশী ভাষার ইতিহাস’-এর পাতা উল্টোলে পাঠক খুঁজে পাবেন ভাষার ইতিহাসের অলিগলি। নয়টি অধ্যায়ে লেখক আলোচনা করেছেন রাজবংশী ভাষার শব্দ ভাণ্ডার, আধুনিক ভাষাতত্ত্ব প্রসঙ্গ, রাজবংশী রূপতত্ত্ব। রাজবংশী বাক্যরীতি এমন নানা বিষয়। সম্প্রতি এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আনন্দগোপাল ঘোষ। আগ্রহী পাঠক বইটি পেয়ে উপকৃত হবেন সন্দেহ নেই। প্রচ্ছদ, হরফ প্রশংসার যোগ্য। |
লেখা পাঠান নাম ও সম্পূর্ণ ঠিকানা লিখে। |
|