সম্পাদকীয় ১...
আগে নীতি স্থির করুন
শ্চিমবঙ্গের সব ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের (বি ডি ও) ফোনবুকে একটি নূতন নম্বর যোগ হইয়াছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর। তাঁহারা মুখ্যমন্ত্রীর ই মেল ঠিকানাও পাইয়াছেন। অস্যার্থ, যে কোনও প্রয়োজনে তাঁহারা অতঃপর মুখ্যমন্ত্রীর সহিত সরাসরি যোগাযোগ করিতে পারিবেন। মমতাদেবী ক্ষমতায় আসিবার পরই পঞ্চায়েতকে এড়াইয়া সরাসরি বি ডি ও-দের মাধ্যমে প্রশাসনিক কাজ চালাইবার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছিলেন। তাঁহার বর্তমান সিদ্ধান্তটিকে সেই ইচ্ছার সম্প্রসারণ রূপে দেখা যাইতে পারে। ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রেক্ষিতে ইচ্ছাটি ঐতিহাসিক হইতে পারে। পঞ্চায়েত স্তরে কেন নির্বাচন হইবে, কেন সেই স্তরে নির্বাচিত প্রতিনিধিসভার মাধ্যমে উন্নয়নের কাজ করিতে হইবে, এই প্রশ্নগুলি গুরুতর। নির্বাচনী গণতন্ত্রের চর্চার জন্য লোকসভা নির্বাচন আছে, বিধানসভা নির্বাচন আছে। তাহার নীচের স্তরে আর নির্বাচনের প্রয়োজন নাই। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পক্ষে একটি বহুলব্যবহৃত যুক্তি হইল, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা স্থানীয় মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার খবর রাখিবেন, উন্নয়নকে সেই পথে চালনা করিবেন। এই কাজটি নির্বাচিত বিধায়করা কেন করিতে পারিবেন না? তাহার জন্য পঞ্চায়েতের প্রতিনিধির প্রয়োজন নাই। উন্নয়নের কাজ প্রশাসনের মাধ্যমেই করা সম্ভব। বস্তুত, নির্বাচিত পঞ্চায়েত তাহার সংকীর্ণ রাজনীতি এবং মজ্জাগত অদক্ষতার কারণে এ যাবৎ কাল উন্নয়নের পথে বাধাই হইয়াছে। ফলে মুখ্যমন্ত্রী যে পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে এড়াইয়া প্রশাসনের মাধ্যমে উন্নয়নের কথা ভাবিতেছেন, সেই ভাবনাটি যথেষ্ট গুরুত্ব পাইবার যোগ্য।
কিন্তু আর পাঁচটি বিষয়ের ন্যায় এই ক্ষেত্রেও নীতির প্রশ্নটিকে ছাপাইয়া গিয়াছে ব্যক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছটা তাঁহার ‘কাজ করিবার’ ভঙ্গিমা। প্রথমত, তাঁহার এবং ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকদের মধ্যে দুইটি স্পষ্ট স্তর রহিয়াছে: মুখ্যসচিব এবং বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক। প্রশাসনের মাধ্যমেই উন্নয়নের কাজ করিবার জন্য প্রশাসনের উপরিতলকেও এড়াইয়া যাইতে হইবে কেন? মুখ্যমন্ত্রীর পৌনে দুই বৎসরব্যাপী শাসনকালের অভিজ্ঞতায় দুইটি বিষয় স্পষ্ট: এক, তিনি রীতিনীতিতে বিশ্বাসী নহেন; দুই, রাজ্য জুড়িয়া যাহা করিবার, সব তিনি একাই করিতে চাহেন। তাঁহার স্বভাবের এই জোড়া ফলা তাঁহার পক্ষে ক্ষতিকর হইয়াছে, পশ্চিমবঙ্গের পক্ষেও। প্রশাসন তাহার কাঠামো মানিয়া চলিবে। পদ্ধতি অনুসারে চলা এবং দীর্ঘসূত্রতা এক কথা নহে। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান যদি চাহেন, তবে মুখ্যসচিব, জেলাশাসকের পথ বাহিয়াই উন্নয়নের কাজ অতি দ্রুত গতিতে হইতে পারে। তাহার জন্য কোনও বি ডি ও-র মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করিবার প্রয়োজন হইবে কেন? বস্তুত, নিছক মুখ্যমন্ত্রীর সময়ের অভাবের ফলেই, এই প্রত্যক্ষ যোগাযোগের মডেলটি মুখ থুবড়াইয়া পড়িবে তেমন আশঙ্কা যথেষ্ট। মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনের কাঠামোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হউন। এবং, তিনি যখন কোনও বিষয়ের নৈতিকতাকে প্রশ্ন করিবেন, তখন যথার্থ পদ্ধতি মানিয়া করুন, যাহাতে পদ্ধতিগত ভ্রান্তির কারণে নীতিগত প্রশ্নটি হারাইয়া না যায়। তাঁহার তোলা প্রশ্নগুলি জরুরি, কিন্তু পদ্ধতিটি বিপজ্জনক।
গভীরতর প্রশ্ন: নির্বাচিত পঞ্চায়েতকে এড়াইয়া সরাসরি প্রশাসনের মাধ্যমে উন্নয়নের পথে হাঁটিবার সিদ্ধান্তটি কতখানি নীতিসম্মত? মমতাদেবী তো পঞ্চায়েত ব্যবস্থার বিরোধী নহেন। তিনি পঞ্চায়েত নির্বাচন লইয়া যথেষ্ট আগ্রহী, আসন্ন নির্বাচনে তাঁহার দল যাহাতে ‘বিপুল জনসমর্থনসহ নির্বাচনে জয়ী হয়’, তাহা সুনিশ্চিত করিতে তাঁহার চেষ্টার অভাব হইবে না বলিয়াই অনুমান করা চলে। তবে তিনি পঞ্চায়েতকে এড়াইতে চাহেন কেন? বিরোধীরা যে সংশয় প্রকাশ করিয়াছেন, তাহাই সত্য নহে তো? তিনি যদি প্রকৃতই পঞ্চায়েত স্তরে নির্বাচিত প্রতিনিধিসভার বিরোধী হন, তবে তিনি একটি গঠনমূলক রাজনীতি তৈরি করুন। সংবিধান সংশোধনের জন্য চাপ সৃষ্টি করুন। তাঁহার বিরোধিতাকে তিনি নীতিগত স্তরে প্রতিষ্ঠা করুন। নচেৎ বোঝা যাইবে, বিরোধীদের দখলে থাকা পঞ্চায়েতের হাত হইতে ক্ষমতা কাড়াই তাঁহার একমাত্র উদ্দেশ্য। বার্তাটি তাঁহার প্রশাসক ভাবমূর্তির পক্ষে ইতিবাচক নহে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.