সঞ্চয় প্রকল্পে লগ্নির টাকা যাতে শেয়ার বাজারে যায়, তা দেখতে কেন্দ্রীয় সরকার ‘রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি প্রকল্পের’ মতো নতুন পথ খুঁজছে। উদ্দেশ্য, সঞ্চয়ের টাকা সাধারণ প্রকল্পে পড়ে না থেকে, তা যেন শিল্পমুখী হয়ে দেশের বৃদ্ধির হার বাড়াতে সাহায্য করে।
আর এই যুক্তির উপর ভিত্তি করেই নিজেদের জন্য আলাদা আয়কর ছাড়ের ধারা তৈরির দাবি জানাচ্ছে বিমা ও মিউচুয়াল ফান্ড শিল্প। তাদের মতে, আয়কর আইনের ৮০সি ধারায় বিভিন্ন প্রকল্পঢুকিয়ে ছাড়ের সীমা এক লক্ষ টাকার মধ্যে বেঁধে রাখার ফলে কেন্দ্রের ওই লক্ষ্য ব্যাহত হচ্ছে। তাই তাদের দাবি, প্রকল্পগুলিতে আরও লগ্নি টানতে কর ছাড়ের সীমা বাড়ানো হোক। এবং তা তখনই সম্ভব, যখন মিউচুয়াল ফান্ড ও বিমা শিল্পে লগ্নিকে কর ছাড় দিতে ভিন্ন ধারা থাকবে।
অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম অবশ্য বিমা শিল্পের ব্যবসা কর ছাড়ের জন্য বাড়ছে না, এই যুক্তি উড়িয়ে দেন। বরং তাঁর অভিযোগ, ভুল বুঝিয়ে প্রকল্প বিক্রির প্রবণতা এবং বাজারে উপযুক্ত প্রকল্পের অভাবের কারণেই সাধারণ মানুষ বিমায় এখন লগ্নি করতে চাইছেন না।
এই চাপান উতোর যে মাত্রাই পাক না কেন মিউচুয়াল ফান্ড ও বিমা শিল্প কিন্তু আশাবাদী। তাঁদের দাবি, এখনও পর্যন্ত অর্থমন্ত্রকের সঙ্গে যে আলোচনা হয়ছে, তাতে এই দুই ধরনের সঞ্চয় প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য সাধারণ মানুষ আরও বেশি আয়কর রেহাই পেতে চলেছেন। বিমা শিল্পমহল জানিয়েছে, বছরে পেনশন প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকা ও জীবন বিমার প্রিমিয়াম বাবদ এক লক্ষ টাকার উপর কর ছাড় নিয়ে অর্থমন্ত্রকের সঙ্গে কথা হয়েছে তাদের। এবং এখনও পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, তাতে অর্থমন্ত্রক এ ব্যাপারে সহমত।
বজাজ অ্যালায়েন্স লাইফ ইনশিওরেন্সের এক কর্তা বলেন, “আমাদের বিশ্বাস, বিষয়টি চিদম্বরম গুরুত্ব দিয়ে ভাববেন। কারণ, বিমা ও পেনশন প্রকল্পের সিংহভাগ টাকাই পরিকাঠামো উন্নয়নে লগ্নি হয়। তাই ওই সব প্রকল্পে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে কর ছাড়ের জন্য পৃথক ধারার ব্যবস্থা বিশেষ কার্যকরী হবে।”
একই সুরে অ্যাসোসিয়েশন অফ মিউচুয়াল ফান্ডস ইন ইন্ডিয়া-র ডেপুটি চিফ এগ্জিকিউটিভ ভি রমেশ জানান, তাঁরা ইক্যুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম (ইএলএসএস)-এ কর ছাড় পাওয়ার বিষয়টি পৃথক ধারায় রাখার দাবি জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রীকে। কারণ মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পমহলের মতে, অর্থমন্ত্রী শিল্পে লগ্নি বাড়াতে আগ্রহী। আর ইএলএসএস-এ টাকা ঢালায় উৎসাহ দিলে পক্ষান্তরে তা শিল্পে লগ্নি বাড়াতেই সাহায্য করবে। এখন পেনশন প্রকল্পে লগ্নি ও জীবন বিমার প্রিমিয়াম, ইলএসএস, অন্য কর ছাড় যোগ্য লগ্নির সঙ্গে একই বন্ধনীতে যুক্ত।
এখন চিকিৎসা বিমা ও গৃহঋ ণের সুদে কর ছাড় দিতে শুধু আলাদা ধারা আছে। বাকি কর ছাড়যোগ্য সব লগ্নিই আয়কর আইনের ৮০সি, ৮০সিসিসি, ৮০সিসিডি ধারাভুক্ত। এর অসুবিধা হল, আয়কর হিসাবের সময় ওই সমস্ত প্রকল্প মিলে মোট এক লক্ষ টাকা পর্যন্তই শুধু মোট আয় থেকে বাদ যায়। অথচ বিভিন্ন প্রকল্প মিলে বহু লগ্নিকারীর মোট বিনিয়োগই এক লক্ষ টাকা ছাড়ায়। অর্থাৎ কর ছাড়যোগ্য প্রকল্পে বেশি বিনিয়োগ করেও সুবিধা পান না তিনি। তাই ইএলএসএস, জীবনবিমার প্রিমিয়াম ও পেনশন প্রকল্পে লগ্নিকে কর ছাড় দিতে ভিন্ন আয়কর ধারা তৈরিতে জোর দিচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ড ও জীবনবিমা শিল্প। |