বাবা জ্ঞান দিয়ো না
সফরেই মধু
হানিমুনটা ঠিক জমব জমব করেও জমল না। অনিরুদ্ধ ছুটিটা পেল না যে! আর কী করা! মৌ-এর আফশোস যেন কিছুতেই আর যাচ্ছে না। এমন সময় মেলটা ঢুকল ওর ইনবক্সে। ‘যা গোছগাছ করার আছে করে নাও মৌ। পরশু রাতের ট্রেন। আপ যোধপুর এক্সপ্রেস। স্ট্রেট টু জয়পুর। কার্টসি অনি।’ উত্তেজনায় নেচে উঠল মৌ। সত্যিই হল তা হলে!
সেই দিন আর নেই যখন লজ্জাবনত কনে-বৌ ফুল বিছানো শয্যায় বরের সঙ্গে মিষ্টি-মধুর প্রেমালাপে মধুচন্দ্রিমার মধু সন্ধান করত। বর-বাবাজিও এ কথা ও কথায় বেড়াতে যাওয়ার অনুরোধ চেপেচুপে রেখে মন ভোলাত বৌয়ের। নয়তো শুধুই আটকে থাকার রেওয়াজ ছিল পুরী বা দিঘার পরিচিত চৌহদ্দিতে। সে দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে এখনকার প্রজন্ম। অনিরুদ্ধর কথাতেই বোঝা গেল সেটা। “আগে ছিল একান্নবর্তী পরিবার। বাড়িতে কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ প্রায় পাওয়াই যেত না। এখন ইটস মোর অফ এনজয়িং আ লং হলিডে টুগেদার। হানিমুন একটা অজুহাত মাত্র। আমি আর মৌ ঘুরতে ভালবাসি। রাজস্থান ট্রিপটা বিয়ের আগে থেকেই প্ল্যান করেছিলাম। চলো, এই সুযোগে হয়ে যাবে।”
কিন্তু হানিমুনটা কী করে অজুহাত হতে পারে? এর চার্মটাই যে অন্য রকম। তা হলে কি এখনকার জেনারেশনের কাছে এই মন ভেজানো সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো মর্যাদা হারিয়ে ফেলছে?
সৌরভ একটা খুব ‘ইন্টারেস্টিং’ কথা বললেন এই সুযোগে। “এখন তো বিয়ের আগেই হানিমুন সেরে ফেলে অনেকে। তাই বিয়ের পর হানিমুনে গিয়ে বেড়ানোর মজাটাই পেতে চায় আমাদের জেনারেশন।”

শান্তনু-পৃথা কাজ করেন আই টি সেক্টরে। শোনালেন ওঁদের সদ্য কাটানো হানিমুনের কথা। ‘‘দূর দিগন্তে নীলচে সবুজ পাহাড়ের হাতছানি, ভিজে ওঠা জানলার কাচে টুপটাপ ঝরে পড়া শিশিরের শব্দ। গলানো সোনা-রোদ পিছলে যাচ্ছিল ওই নীল-সবুজ গালিচার উপর। আর আমরা হাতে হাত রেখে চুপ করে এনজয় করছিলাম রহস্যময়ী মুন্নারকে।”
এ তো পুরো কবিতা!
“হ্যাঁ। কিন্তু দেয়ার’স দ্য ফিল। কে বলেছে হানিমুনের চার্ম আর নেই?” বললেন শান্তনু। “আমরা প্রচুর ঘুরেছি। মুন্নার এত সুন্দর! পশ্চিমঘাট পর্বতমালার সব চেয়ে জনপ্রিয় হিল স্টেশন। তিনটে নদী মিলেছে এখানে এসে। রোম্যান্টিক! পাহাড়ের আঁকেবাঁকে চা বাগান, নদী, ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি। কী নেই!” পৃথা বলে। “তবে আমরা এত বেশি ঘুরেছি যে হানিমুন বেচারা একদম মাঠে মারা গিয়েছে।” পৃথা আবারও বললেন। তবে শান্তনু যে এত কবিতা আওড়ালেন? “ঠিকই তো। ঘরে বসে নিজেদের আবিষ্কার করার সুযোগ অনেক পাওয়া যায়। কিন্তু বিয়ের পর একসঙ্গে কোনও বিশেষ জায়গা এক্সপ্লোর করার মজাটাই যে আলাদা।” সমস্বরে বলেন ওঁরা। “হানিমুন ট্রিপটা মনে হয় সো ফার দ্য বেস্ট ট্রিপ। ডুয়ার্সের আনাচে কানাচে ঘুরেছি। বাদ দিইনি কিছু। এক একদিনে প্রায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি ঘুরে বেরিয়েছি,” জানালেন আর এক নতুন দম্পতি। “ডুয়ার্স যে এত মোহময়ী জানতাম না। সবাই তো পাহাড়ে বেড়াতে যায় বেশি। আমরা বেস করেছিলাম জলপাইগুড়িকে। সেখান থেকে সামসিং, সুনতালেখোলা, মাল, চিলাপাতা জঙ্গল কোথায় না গিয়েছি! এত সুন্দর লেগেছিল যে দার্জিলিং না যেতে পারার কষ্টটা টেরই পাইনি,” উত্তেজিত গলায় বললেন মৈনাক। বিয়ে করেছেন সবে দু’মাস। তালে তাল মেলালেন ওঁর বৌ রেশমিও। “কী দারুণ লাগছিল সেবক ব্রীজের ওপর দিয়ে যেতে। ওই হাই অলটিটিউডে কুয়াশামাখা শীতের ভোরবেলায় আমাদের গাড়ি চিরে যাচ্ছিল ভেজা পিচ রাস্তা। দু’ধারে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে পাইন-ফারের দল। আর কিছুটা দূরে দূরে জঙ্গলে ঢাকা মিলিটারি বেস ক্যাম্প। সঙ্গে মৈনাক,” রেশমির হাসিতে মজাদার রহস্যের ইঙ্গিত।
টিপস
• থাকার চেষ্টা করুন ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায়। নির্জন জায়গা এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।
• থাকার আগে খোঁজখবর নিয়ে রাখতে হবে জায়গাটা সম্পর্কে। হোটেল হোক কী রিসর্ট, বিপদ আসতে পারে নানা ভাবে।
• লোকাল পুলিশ স্টেশনের নম্বর নিয়ে রাখুন। বেড়ানোর আনন্দে অনেকেই ভুলে যান এই অত্যন্ত জরুরি জিনিসটা।
• সঙ্গে রাখুন প্রয়োজনীয় ওষুধ, শুকনো খাবার। জঙ্গলে গেলে কাজে লাগে খুব।
• রাত নামার আগেই হোটেলে ফেরা উচিত। অপরিচিত জায়গায় গাড়ির অচেনা ড্রাইভারও বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
সবই তো হল। মধুচন্দ্রিমাটাই তো শেষমেশ বাদ পড়ে গেল তাই না? ঘোরাটাই যদি উদ্দেশ্য হয়, বন্ধুবান্ধবরাই তো আছে!
‘‘কে বলেছে? দু’জন একসঙ্গে বাইরে ঘুরতে বেরোলেই না বোঝা যায় কার সহ্যক্ষমতা কত বেশি? ট্র্যাভেল করার বিস্তর হ্যাপা। দু’জনের মানসিকতা মিলছে কিনা এ সবই কিন্তু এই সময় বুঝে নেওয়া যায়,” বললেন কলেজ পড়ুয়া অনামিকা। অয়নের কথাতেও একই সুর।
“আমি আর শাল্মী হানিমুন থেকে ফেরার সময় একটাই বার্থ পেয়েছিলাম এসি টু টিয়ারে। ফেরাটা কনফার্ম ছিল না বলেই এই দুর্ভোগ। শাল্মী কিন্তু ভাল ম্যানেজ করেছিল। কোনও অভিযোগ জানায়নি। তা ছাড়া ঘোরার সময়েও অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। সবটাই উতরে গিয়েছি। ঘুরতে বেরিয়েই সব চেয়ে ভাল বোঝা যায় দু’জনের টিউনিংটা ঠিক কেমন,” বললেন অয়ন।
স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের পরিধির বিশালতা হানিমুনের একটা বেড়ানো দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়। তাই বেড়ানোটাকেই যে পুরোদস্তুর উপভোগ করতে চাইছেন এখনকার বিবাহিত দম্পতিরা তা কিন্তু তাঁদের কথাতেই পরিস্কার। তাই সঙ্গে থাকুক সব থেকে কাছের জন আর চলুক চুটিয়ে ভ্রমণ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.