নতুন ভবন তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে বছর দুয়েক। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে উন্নত করার পরিকল্পনা করা হয় তারও এক বছর আগে। তবুও পরিকাঠামোর অভাবে সালানপুর ব্লক প্রাথমিক হাসপাতাল পড়ে রয়েছে তিমিরেই। তিন বছর আগের পরিকল্পনা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে কেন? স্পষ্ট উত্তর নেই স্বাস্থ্য কর্তাদের কাছেও।
সালানপুর ব্লকের পিঠাকেয়ারি এলাকার এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ব্লকের প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের ভরসা। কিন্তু স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট নন মোটেই। তাঁদের অভিযোগ, বহু দিন ধরে হাসপাতালের উন্নতির দাবি জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। আসানসোল জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় তিন বছর আগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি উন্নত ভাবে গড়ে তোলার জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। স্বাস্থ্যকর্তারা সবদিক নিরীক্ষণ করে মতও দিয়েছিলেন যে পুরনো ভবনটিতে উন্নত পরিকাঠামোযুক্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়। প্রয়োজন নতুন ভবনের। স্বাস্থ্য দফতরের অনুরোধে প্রায় দুই বছর আগে নতুন একটি সুবিশাল ভবনও বানিয়ে দেয় আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)। প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যায়ে তৈরি ভবনটির দ্বারোদঘাটন করেছিলেন এডিডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান বংশগোপাল চৌধুরী। |
কিন্তু এরপরেও হাসপাতালের হাল বদলাল না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পাঞ্চলের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি চেয়ে আসানসোলকে স্বাস্থ্য জেলা বানানোর পরেও গুরুত্বপূর্ণ সালানপুর ব্লকের এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির উন্নয়ন অধরা। কেন? আসানসোল স্বাস্থ্য জেলার মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক অরিতা সেন চট্টরাজ বলেন, “আসলে পরিকাঠামোর অভাবেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে উন্নত করা যাচ্ছে না। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দ্রুত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।”
কী ধরনের উন্নত সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল সে বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে আসানসোল জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শয্যা সংখ্যা ১৫ থেকে ৩০ করার কথা হয়েছিল, কথা ছিল একটি উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রসূতী ও শল্য চিকিৎসা বিভাগ তৈরিরও। এছাড়া অন্তত পাঁচ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, কমপক্ষে ১৩ জন নার্স, ১৩ জন গ্রুপ ডি কর্মী, দু’জন ফার্মাসিস্ট ও এক জন অ্যানাস্থেসিস্ট নিয়োগ করার কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্র হল পরিকল্পনা গ্রহনের তিনবছর পেরোলেও কোনও পরিকাঠামোই নেই। বর্তমানে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিনজন চিকিৎসক রয়েছেন। তাঁদের একজন আয়ুর্বেদিক এবং অন্য দু’জন সাধারণ চিকিৎসক। কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। নার্স রয়েছেন মাত্র ছ’জন আর গ্রুপ ডি কর্মী চার জন। তবে মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক অরিতা সেন চট্টরাজ জানান, উন্নত পরিকাঠামো শুরু না হলেও হাসপাতালের নতুন ভবনটি থেকেই এখন চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। দিন কয়েক আগে হাসপাতালের পুরনো ভবনটি ফাঁকা করে নতুন ভবনে উঠে আসা হয়েছে।
ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা জানান, ন্যূনতম চিকিৎসা পেতেও সালানপুর ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের রোগীদের ছুটতে হয় আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে। এছাড়া শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ না থাকায় সমস্যা আরও বেশি। এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল মজুমদার। তাঁর অভিযোগ, সালানপুর ব্লকের পিঠাকেয়ারি ও বারাবনি ব্লকের কেলেজোড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র দুটিকে একইসঙ্গে উন্নত করার পরিকল্পনা করা হয়। কেলেজোড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে ইতিমধ্যেই উন্নত করা হলেও পিঠাকেয়ারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির দশা একই রয়ে গিয়েছে। শ্যামলবাবুর দাবি, “অনেকবার স্বাস্থ্য দফতরকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি উন্নত করার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কেউই আমাদের কথা কানে তুলছেন না।” পরিকাঠামো কবে বদলাবে তার ভরসা দিতে পারছেন না স্বাস্থ্যকর্তারাও। |