স্কুলের অফিসঘরে সহ-শিক্ষক ও পড়ুয়াদের সামনে বাঁকুড়া প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের এক প্রতিবন্ধী শিক্ষককে চড় মারার অভিযোগ উঠল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি রিঙ্কু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। স্বরূপ কর্মকার নামে ওই শিক্ষক বাঁকুড়া থানায় রিঙ্কুদেবীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এই ঘটনাকে ঘিরে সিপিএম-তৃণমূল চাপানউতোর শুরু হয়েছে। |
স্কুলটিতে এখন ছাত্রছাত্রী ভর্তি চলছে। প্রধান শিক্ষিকা সুলেখা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সোমবার রিঙ্কুদেবী একটি মেয়েকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করানোর সুপারিশপত্র পাঠান। মেয়েটির বয়স সাত। শিশুশিক্ষা অধিকার আইন’২০০৯ অনুসারে সাত বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করা যায় না। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ মেয়েটির অভিভাবকদের তাকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করতে বলেন। সুলেখাদেবীর অভিযোগ, “অভিভাবকেরা আমাদের সঙ্গে বচসা শুরু করেন। তাঁদের মেয়েকে প্রথম শ্রেণিতেই ভর্তি নিতে হবে বলে দাবি করতে থাকেন।”
স্কুল কর্তৃপক্ষ তা মানতে রাজি না হলে মেয়েটির অভিভাবকেরা রিঙ্কুদেবীকে স্কুলে নিয়ে আসেন বলে জানা গিয়েছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষক স্বরূপবাবুর অভিযোগ, “রিঙ্কুদেবী উত্তেজিত হয়ে স্কুলে এসে মেয়েটিকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করতে হবে বলে জোর করতে থাকেন। আমি তাঁকে আইনটি বোঝাতে গেলে উনি রেগে আমার বাঁ গালে চড় মারেন। সভাপতি উপস্থিতি শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পড়ুয়াদের সামনেই আমাকে গালিগালাজও করেন।” |
পাল্টা মিছিল। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
ঘটনা নিয়ে মতবিরোধে জড়িয়েছেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দু’টি অংশ। একটি অংশ চড় মারার কথা বললেও অন্য পক্ষ তা মানতে চাননি। রিঙ্কুদেবীরও দাবি, সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, “ওই ছাত্রীর বাবা আমার কাছে ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে অসভ্য ব্যবহার করার অভিযোগ করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমি ওই স্কুলে যাই।” তাঁর সঙ্গেও স্বরূপবাবু-সহ কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা খারাপ ব্যবহার করেন বলে সভাপতির দাবি। ওই মেয়েটিকে ভর্তি নেওয়ার জন্য সুপারিশপত্র পাঠানোর কথা মেনে নিলেও রিঙ্কুদেবীর বক্তব্য, “অনৈতিক ভাবে মেয়েটিকে প্রথম শ্রেণিতেই ভর্তি করার জন্য আমি জোরাজুরি করিনি। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করার কথাই বলেছিলাম। ওরা ওই মেয়েটির পরিবারের কাছ থেকে স্কুলে ভর্তি হওয়ার টাকা নিয়ে ফেলেছে। তার পরেও ওকে ভর্তি করতে চাইছে না।” একই অভিযোগ করেছেন মেয়েটির বাবাও। প্রধান শিক্ষিকার পাল্টা দাবি, “কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। ওই মেয়েটিকে ভর্তির জন্য স্কুল কোনও টাকাও নেয়নি। অভিভাবক ও সভাপতি, দু’ পক্ষই মেয়েটিকে প্রথম শ্রেণিতেই ভর্তি নিতে চাপ দিচ্ছিলেন।”
শিক্ষককে চড় মারার অভিযোগে এ দিন বিকেলে বাঁকুড়া শহর জুড়ে প্রতিবাদ মিছিল বের করে নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। ঘটনাটিকে ‘সাজানো’ ও ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করে পাল্টা মিছিল করে তৃণমূল শিক্ষাসেলও। পুরো ঘটনাটি জেলা প্রশাসন ও রাজ্য শিক্ষা দফতরকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিঙ্কুদেবী। পুলিশও ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। |