সীমান্ত-বাণিজ্যে মধ্যপন্থার খোঁজ আজ |
নির্মল বসু • ঘোজাডাঙা (ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত) |
অবশেষে ঘুম ভাঙল প্রশাসনের।
টানা ১৭ দিন বাণিজ্য বন্ধ থাকার পরে ঘোজাডাঙা সীমান্তের অচলাবস্থা কাটাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বসিরহাটের মহকুমাশাসককে অবিলম্বে বৈঠক ডাকার নির্দেশ দিলেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক। আজ, মঙ্গলবার বসিরহাটের মহকুমাশাসকের দফতরে ওই বৈঠক হবে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। ওই বৈঠকে স্থানীয় বিধায়ক এবং সাংসদকেও ডাকা হয়েছে।
মূল বিরোধ ১০ চাকা বা তার চেয়ে বড় লরিতে সরাসরি বাংলাদেশে পণ্য পাঠানোকে ঘিরেই। শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, বড় লরির পণ্য ভারতীয় ভূখণ্ডে নামিয়ে ছোট ছোট লরিতে তা ও-পারে পাঠানোর ব্যবস্থা বহাল রাখতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের তরফে সোমবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আন্তর্জাতিক নিয়ম না-মেনে বাণিজ্য শুরু করা সম্ভব নয়। সেই নিয়ম মানলে ১০ চাকার লরিকে সোজাসুজি বাংলাদেশের সীমান্ত পেরিয়ে যেতে হবে। সীমান্তের আগে ভারতীয় ভূখণ্ডে কোনও পণ্য ওঠানো বা নামানো চলবে না। |
পণ্য খালাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে লরি। ঘোজাডাঙা সীমান্তে।—নিজস্ব চিত্র |
সমস্যা মেটানোর প্রশাসনিক উদ্যোগের মধ্যেই লরি সমিতি, ট্রান্সপোর্ট ইউনিয়ন, ঘোজাডাঙা ক্লিয়ারিং ফরোয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ ইন্দো-বাংলা বৈদেশিক বাণিজ্য সমন্বয় কমিটি হুঁশিয়ারি দিয়েছে, মঙ্গলবারের বৈঠকে কোনও সমাধানসূত্র না-বেরোলে তারা আন্দোলনে নামবে। তাদের বক্তব্য, ভারতীয় ভূখণ্ডে মালপত্র ওঠানো-নামানো বন্ধ হলে বহু মানুষ কাজ হারাবেন। তাই সেই ব্যবস্থা চালু রাখতেই হবে।
বসিরহাটের মহকুমাশাসক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “সীমান্ত বাণিজ্যের সঙ্গে এলাকার অর্থনীতি জড়িয়ে আছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ব্যবসার সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িত। যুক্ত রয়েছেন প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক। আইনশৃঙ্খলার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। তাই সব দিক বিবেচনা করে ফের ব্যবসা চালু করার জন্য সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান দরকার।” তিনি জানান, সাংসদ, বিধায়ক, শুল্ক দফতর, পুলিশ, বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, ইন্দো-বাংলা বৈদেশিক বাণিজ্য সমন্বয় কমিটি, লরি ও শ্রমিক সংগঠন, রাজনৈতিক দলের নেতাদের আলোচনায় ডাকা হয়েছে। কোনও মধ্যপন্থা বার করা যায় কি না, তার চেষ্টা করা হবে বৈঠকে।
বাংলাদেশের দাবি মানতে গেলে সীমান্ত অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা দিতে পারে, মেনে নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। প্রশ্ন উঠেছে, সমস্যা মেটাতে প্রশাসন আগেই উদ্যোগী হয়নি কেন? মহকুমাশাসকের দাবি, গত ২৫ জানুয়ারি সব পক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছিল। তবে সেখানে কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। ব্যবসা বন্ধ থাকায় ক্ষতির পরিমাণ যে বাড়ছে, তা-ও অস্বীকার করতে পারছেন না প্রশাসনিক কর্তারা। ঘোজাডাঙা শুল্ক দফতরের সুপার সুজিতনারায়ণ সরকার বলেন, “এই স্থল-বন্দর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ গাড়ি পণ্য আমদানি ও রফতানি হয়। ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর মধ্যেই আমদানি শুল্কের ক্ষেত্রে ৫১ কোটি টাকা এবং রফতানির ক্ষেত্রে ৬৪ কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।”
এই স্থলবন্দরের উন্নয়নে যত পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে কিছুটা মুশকিল আসান হতে পারত। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পাঁচ বছর আগে ঘোজাডাঙাকে আন্তর্জাতিক স্থল-বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করে বলা হয়েছিল, চার লেনের রাস্তা, যাত্রী ও লরি যাওয়ার জন্য আলাদা সেতু, ঘোজাডাঙা এবং মেরুদণ্ডী সেতুর উন্নয়ন ঘটানো হবে। গড়া হবে সেন্ট্রাল ওয়ারহাউস। ব্যাঙ্ক, ডাকঘর, এটিএম কাউন্টার, নৈশাবাস, হোটেল, গাড়ি পার্কিং, বিদেশ থেকে আসা পণ্য রাখার জন্য আমদানি জোনের ব্যবস্থাও হবে। আনা হবে স্ক্যানার। এ-সবের জন্য ঘোজাডাঙায় জমি চিহ্নিত করা হয়।
কিন্তু ওই পর্যন্তই। ঘোজাডাঙা যাওয়ার রাস্তা এবং ঘোজাডাঙা সেতুর সংস্কার ছাড়া কিছুই হয়নি। সব ক’টি প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হলে কাজ হারানো শ্রমিকেরা বিকল্প কাজও পেয়ে যেতেন বলে মনে করেন প্রশাসনের একাংশ। রাজ্য এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। পরিকাঠানো উন্নয়নের কাজ করার কথা কেন্দ্রেরই। |