ইটভাটায় মাটি চাপা পড়ে মৃত্যু হল দুই নাবালিকা সহ তিন শ্রমিকের। ইটভাটাতে যে নাবালিকাদের কাজে লাগানো হচ্ছে, ওই দুই কিশোরীর মৃত্যুতে ফের তা প্রকাশ্যে চলে এল।
পুরুলিয়ার বোরো থানার তেলিকোচা গ্রামের কাছে রবিবার দুপুরে এই ঘটনার পরে প্রশাসনের তরফে নির্লিপ্তি কিন্তু কাটেনি। শিশুশ্রম বিরোধী আইনে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের কম বয়েসীদের ইটভাটায় কাজ করানো যাবে না। সোনামণি মাহাতো (১৫) এবং সোনালি মাহাতো (১৫) নামে ওই দুই নাবালিকা কী করে ওই ইটভাটায় কাজ করছিল, কেন এত দিন প্রশাসনের কাছে সে বিষয়ে কোনও খবরও ছিল না, তার কোনও উত্তর মেলেনি। ওই ইটভাটাটির তিন জন মালিক। তাদের অন্যতম সুধীর মাহাতো বলেন, “ইটভাটায় কোনও কম বয়সী ছেলে বা মেয়েকে আমরা কাজ দিইনি। তবে অনেক সময় স্থানীয় বাসিন্দারাই জোর করে তাদের কম বয়সী ছেলে বা মেয়েকে কাজ করতে পাঠান। তখন না করা যায় না।”
কিন্তু প্রশাসন কেন নীরব? মানবাজার ২ বিডিও পার্থ কর্মকার বলেন, “দুর্ঘটনার খবর শুনেছি। ওই ইটভাটা ও এলাকার অন্য ইটভাটাগুলিতে শিশুশ্রমিকদের কাজ করানো হয় কি না, তার খোঁজ নেব।”
ওই দুর্ঘটনায় ভানুবালা মাহাতো (২৫) নামে এক তরুণীও মারা গিয়েছেন। সোনামণি ও ভানুবালার বাড়ি ডাহা গ্রামে, সোনালি জরগড়িয়ার বাসিন্দা। মাটি চাপা পড়ে জখম হয়েছেন আরও তিন জন। স্থানীয় বাসিন্দারাই শ্রমিকদের সঙ্গে মাটি সরিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেন। আহতদের স্থানীয় বারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। সোনামণির বাবা ফেলারাম মাহাতো বলেন, “বয়সের ভারে কাজ করতে পারি না। মেয়েটা কাশিডি হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। কিন্তু পেটের দায়ে ওকে কাজে পাঠাতে হত। এমন ঘটবে ভাবতে পারিনি।” একই আক্ষেপ সোনালির কাকা প্রফুল্ল মাহালিরও।
পুরুলিয়ার মানবাজার, বান্দোয়ান, বোরো, কাশীপুর, বলরামপুর, কেন্দা, আড়শা প্রভৃতি এলাকার ইটভাটাগুলিতে দেখা যায় মা বা বাবাদের সঙ্গে এই রকম বেশ কয়েকজন নাবালক-নাবালিকা কাজ করছে। কিন্তু তা বন্ধে প্রশাসনের উদ্যোগ কই? পুরুলিয়া জেলা শ্রম দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “ইটভাটায় শিশু শ্রমিকদের কাজে নেওয়া হয় কি না, আমাদের কাছে তার কোনও তথ্য নেই। সমীক্ষাও আগে হয়নি।” পরিদর্শন করেন না? সদুত্তর মেলেনি।
ইটভাটাটির তিন মালিকের মধ্যে এক জন প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সাম্যপ্যারী মাহাতোর ছেলে অরিন্দম মাহাতো। অরিন্দমের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তাঁর বাবা যামিনীকান্ত মাহাতো বলেন, “ছেলে বাইরে রয়েছে। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
অন্য মালিক সুধীর মাহাতো বলেন, “অশান্তির আশঙ্কায় ইটভাটায় যাইনি। তবে ফোন করে পুলিশ ও অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।” পুলিশ জানিয়েছে, ইটভাটার লাইসেন্স ও অন্য নথিপত্র পরীক্ষা করে দেখা হবে। |