এপ্রিল মাসে সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা সি বি আইয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হইবে। প্রশাসনিক তদন্ত সংস্থা হিসাবে অর্ধ শতাব্দী ধরিয়া ইহাই প্রধান এবং প্রমুখ। বিভিন্ন রাজ্যে অথবা কেন্দ্রীয় স্তরে গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের তদন্তে সি বি আই নিযুক্ত হয়। অনেক সময়েই রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের উপর ভরসা করা যায় না বলিয়া সি বি আইয়ের ডাক পড়ে। ইহার কিছু বিশেষ মর্যাদা এখনও আছে। তবে প্রশ্নও বিস্তর। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এই সংস্থাটি সম্পর্কে প্রায়শই অভিযোগ শোনা যায়: সি বি আইকে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসক গোষ্ঠী আপন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করিবার উদ্দেশ্যে অপব্যবহার করিতেছে। অপব্যবহারের প্রবণতা জন্মায় ক্ষমতার নিজস্ব সূতিকাগারে। ইহার গূঢ় ক্রিয়া অন্য বিবিধ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রকট হইয়া থাকে। যথা, রাজ্যপাল। ভারতে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলিকে শাসক গোষ্ঠী রাজনৈতিক স্বার্থে কী ভাবে কাজে লাগাইয়া থাকেন, তাহার বহু নমুনা জনস্মৃতিতে প্রবল।
ক্ষমতার দুরাচার কেবল কেন্দ্রেই সীমিত থাকিবে, এমনটা তো হইতে পারে না। যথা দিল্লি, তথা কলিকাতা। সরকারি বা প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানকে দলীয় বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে ব্যবহার করিবার বিস্তর নমুনা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দেখিয়া আসিতেছেন। বামফ্রন্ট আমলেও দেখিয়াছেন, তৃণমূল কংগ্রেস আমলেও দেখিতেছেন। কিন্তু সম্প্রতি রাজ্য সরকার প্রশাসনিক তদন্তের উপর প্রভাব বিস্তার করিবার যে চেষ্টা করিয়াছে, তাহা কিঞ্চিৎ অভিনব। তাহারা নন্দীগ্রামে গুলিচালনার ঘটনার তদন্তে নিযুক্ত সি বি আইকে আবেদন জানাইয়াছে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে যেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অর্থাৎ সি বি আই তাহার তদন্ত কী ভাবে চালাইবে, রাজ্য সরকার তাহা ঠিক করিয়া দিতে চাহিতেছে! ইহা কেবল বিচিত্র নহে, উদ্বেগজনক।
উদ্বেগ এই কারণে যে এমন ঘটনা রাজ্য সরকার তথা শাসকদের মানসিকতার পরিচয় বহন করে। প্রতিশোধের মানসিকতা। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করিয়া দলীয় সুবিধা আদায়ের মানসিকতা। ভূতপূর্ব মুখ্যমন্ত্রীকে নন্দীগ্রাম কাণ্ডের তদন্তের প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হইবে কি না, তাহা সম্পূর্ণত তদন্তকারী সংস্থার বিবেচ্য। এই ধরনের তদন্তের একটি নিজস্ব ধারা আছে, রীতি আছে, তদুপরি সি বি আইয়ের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নিজস্ব বিচার-বিবেচনা আছে, সেই অনুসারে তাঁহারা আপন কর্তব্য নির্ধারণ করিবেন, যাঁহাকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন মনে করেন, আইন ও রীতি মানিয়া করিবেন। ইহাতে রাজ্য সরকারের কোনও স্বতঃপ্রণোদিত ভূমিকা থাকিতে পারে না। প্রশাসনের এই নিতান্ত প্রাথমিক শৃঙ্খলাটুকুও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মানিতে নারাজ, ইহা কেবল দৃষ্টিকটু নয়, অত্যন্ত আপত্তিকর। অশোভন আচরণের বহুবিধ নমুনা তাঁহারা দিনের পর দিন তৈয়ারি করিয়া চলিয়াছেন, আর নয়। এই বার ক্ষান্ত হউন। আইন এবং শৃঙ্খলা, দুইই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তৎসহ, ঈষৎ কাণ্ডজ্ঞান। |