|
|
|
|
খাদ্য সুরক্ষার পরিধি বাড়াতে নির্দেশ সনিয়ার |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
ভর্তুকির বোঝা বাড়ার আশঙ্কায় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার যতই আপত্তি করুন, সনিয়া গাঁধী কিন্তু নাছোড়! সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশনের প্রথমার্ধ্বেই খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ করানোর জন্য আগেই নির্দেশ দিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। শেষ মুহূর্তে তাঁর নতুন দাবি, দেশের পিছিয়ে পড়া এলাকার আরও বেশি মানুষকে খাদ্য সুরক্ষা দিতে হবে। জম্মু-কাশ্মীর এবং উত্তর পূর্বের সাত রাজ্য-সহ ১৩টি রাজ্যের ৯০ শতাংশ মানুষের খাদ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য সরকারকে বলেছেন সনিয়া।
জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের সভানেত্রীর বক্তব্য, পিছিয়ে পড়া এলাকায় এই প্রকল্পের সুবিধা দিতে দিয়ে গ্রাম ও শহরের মধ্যে কোনও ফারাক করা চলবে না। প্রকল্পের প্রথম দফায় পিছিয়ে পড়া দেশের আড়াইশো জেলার অন্তত ৭৫ শতাংশ মানুষকে খাদ্য সুরক্ষা দিতে হবে।
আম-আদমির কথা বলে ক্ষমতায় আসা কংগ্রেসের এই সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার দায় রয়েছে বলেই দলের অনেক নেতার মত। কিন্তু একই সঙ্গে নতুন ভারতের নতুন প্রজন্মের চাহিদা মেটানোও যে প্রয়োজন, তা-ও স্বীকার করছেন তাঁরা। বস্তুত, সংস্কার আর সামাজিক সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই কংগ্রেসের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের যুক্তি মেনে সনিয়া যেমন এক দিকে ভর্তুকি কমানোর ব্যাপারে সায় দিয়েছেন, তেমনই সামাজিক সুরক্ষার পরিধি বিস্তৃত করে দলের রাজনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করতে চাইছেন।
খাদ্য মন্ত্রকের এক আমলা জানান, সনিয়ার পরামর্শ বিবেচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। কারণ, সংসদের বাজেট অধিবেশন বসার আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে আলোচনার জন্য সব রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীকে দিল্লিতে ডাকা হয়েছে। সব মুখ্যমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে চিঠিও লিখবেন টমাস। এর আগেই ঠিক করতে হবে সরকার শেষমেশ কত মানুষকে খাদ্য সুরক্ষার আওতায় আনতে চায়।
প্রসঙ্গত, বিলের বর্তমান খসড়ায় বলা হয়েছে, গ্রামে ৭৫ শতাংশ ও শহরের ৫০ শতাংশ মানুষকে ভর্তুকি মূল্যে মাথাপিছু মাসে ৫ কেজি করে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, খাদ্য সুরক্ষা বিল এবং একশো দিনের কাজকে আগামী লোকসভা ভোটে প্রচারে হাতিয়ার করতে চান সনিয়া। কংগ্রেসের স্লোগানই হবে, ‘প্রতি হাতে কাজ, প্রতি মুখে খাবার’। খাদ্য সুরক্ষা বিলের পাশাপাশি একশো দিন কাজের প্রকল্পেও যে তিনি পরিবর্তন চাইছেন, তা শুক্রবারই এক অনুষ্ঠানে স্পষ্ট করে দেন সনিয়া। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, সনিয়ার পরামর্শ মেনে একশো দিন কাজের প্রকল্পকে ব্যবহার করে গ্রামে স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতো স্থায়ী সম্পত্তি গড়ে তোলায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে কৃষি প্রযুক্তিকেও এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা হতে পারে বাজেট অধিবেশনে, যাতে কৃষিপণ্যের উৎপাদন আরও বাড়ানো যায়। তা ছাড়া, পিছিয়ে পড়া এলাকায় দেড়শো থেকে দু’শো দিন কাজ দেওয়ার প্রস্তাবও রয়েছে।
কৃষি ক্ষেত্রে একশো দিনের প্রকল্পকে আরও বেশি করে কাজে লাগানোর ব্যাপারে সনিয়ার সঙ্গে এক মত হলেও খাদ্য সুরক্ষা বিলের আওতায় আরও বেশি মানুষকে আনার ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে শরদ পওয়ারের। তাঁর বক্তব্য, “দেশের আশি কোটি মানুষকে খাদ্য সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি ফের বিবেচনা করে দেখা উচিত। কারণ, প্রকল্পের পরিধি যে ভাবে বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে, তাতে ভর্তুকির বোঝা দাঁড়াবে প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা। দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের খাদ্য সঙ্কট রয়েছে বলে তুলে ধরলে এটাই প্রমাণিত হবে যে, গত ৬৫ বছর ধরে দারিদ্র দূরীকরণে কিছুই করিনি।”
তবে কংগ্রেস নেতৃত্ব পওয়ারের যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, ভর্তুকির বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে মাথা ঘামিয়েছেন। সামাজিক সুরক্ষা খাতে টাকা ঢালার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে নিয়ে তিনি ভর্তুকি কমানোর ব্যাপারেও সনিয়ার সম্মতি আদায় করে নিয়েছেন। সনিয়াকে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টই বলেছিলেন যে, ভর্তুকি না-কমালে সামাজিক সুরক্ষা খাতে টাকা বরাদ্দ করা সম্ভব নয়। ভর্তুকি হ্রাসের রাজনৈতিক ঝুঁকি সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে পুষিয়ে নিতে চায় কংগ্রেস।
দ্বিগ্বিজয় সিংহের কথায়, “দলের চিন্তন শিবিরে ফের স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, সামাজিক সুরক্ষায় নতুন প্রকল্প নেবে সরকার। খাদ্য সুরক্ষা তার অন্যতম। তা ছাড়া, খাদ্য সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে ধনী-গরিব বৈষম্যের পক্ষে নয় কংগ্রেস।” আর নেতার কথায়, “কংগ্রেসের এ বার মরণ বাঁচন লড়াই। তাই পওয়ারের কথা শোনার সময় নেই সনিয়ার। বরং যতটা আগ্রাসী হয়ে সরকার সংস্কারের পথে হাঁটছে, ততটাই আগ্রাসী হয়ে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প ঘোষণা ও রূপায়ণ করতে চায় কংগ্রেস। তাই একশো দিন কাজের প্রকল্প শুরু করার সময় যতটা সক্রিয় ছিলেন, এখনও ততটাই সক্রিয় সনিয়া। |
|
|
|
|
|