ওপার বাংলার সিনেমা দেখার সুযোগ এ বার এপার বাংলার মানুষের কাছে। এই প্রথম মেদিনীপুরে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব। ফেডারেশন অফ ফিল্ম সোসাইটিজ অফ ইন্ডিয়ান (পূর্বাঞ্চল)-এর সহযোগিতায় মেদিনীপুর ফিল্ম সোসাইটির উদ্যোগে এই উৎসব শুরু হবে ৯ ফেব্রুয়ারি। চলবে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। উৎসবে বাংলাদেশের বাছাই করা পাঁচটি চলচ্চিত্র দেখানো হবে।
ফিল্ম সোসাইটির উদ্যোগে প্রতি বছর শহরে চলচ্চিত্র উৎসব হয়। তবে শুধুমাত্র বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে উৎসব এই প্রথম। কেন এমন উদ্যোগ? মেদিনীপুর ফিল্ম সোসাইটির প্রকাশনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিদ্ধার্থ সাঁতরা বলছিলেন, “বাংলাদেশের প্রতি বরাবর আমাদের আলাদা একটা টান রয়েছে। আমরা সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনদের ছবি দেখেছি। এঁদের মতো ওপার বাংলাতেও ভাল পরিচালক রয়েছেন। কয়েকটি ছবি দেখে আমাদের ভালও লেগে যায়। তখনই সিদ্ধান্ত হয়, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে মেদিনীপুরে এ বার উৎসব হবে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক কৌশিক নন্দী বলেন, “এটা ভাল উদ্যোগ। এর ফলে মেদিনীপুরের মানুষ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ পাবেন। এমন উৎসবের মধ্য দিয়েই তো এই সুযোগ মেলে।” ‘মনপুরা’, ‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার,’ ‘চিত্রা নদীর পারে,’ ‘অন্তর্যাত্রা’, ‘গেরিলা’এই পাঁচটি ছবি দেখানো হবে উৎসবে। মেদিনীপুর ফিল্ম সোসাইটির প্রেক্ষাগৃহেই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে জানা গেল, ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে তৈরি। পরিচালক নাসিরুদ্দিন ইউসুফ। এক মহিলা কী ভাবে মুক্তি সংগ্রামের গেরিলা বাহিনীতে যুক্ত হয়ে দেশের জন্য লড়াই করেন, তা-ই ছবির বিষয়। ‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার’ ছবিটি বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। পরিচালক মোস্তাফা সরয়ার ফারুকী। পুরুষসঙ্গী জেলে চলে যাওয়ার পরে একটি মেয়ের পক্ষে একা সমাজে থাকা কতটা কঠিন, তাই দেখানো হয়েছে এই চলচ্চিত্রে। পরে বাল্যবন্ধু তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালে নতুন করে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব-সংঘাত। ‘মনপুরা’ ছবিটি প্রেমের। সিদ্ধার্থবাবু বলছিলেন, “ওপার বাংলায় যে কত ভাল ভাল ছবি তৈরি হয়, তা এই ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যায়।”
বাংলাদেশের সঙ্গে মেদিনীপুরের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। অবিভক্ত বাংলার শেষ প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামি লিগের প্রতিষ্ঠাতা শহিদ হাসান সুরাবর্দ্দির জন্ম এই শহরেই। সুরাবর্দ্দি সাহেবের জন্মভিটে দেখতে গত বছর সপরিবার মেদিনীপুরে এসেছিলেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী দীপু মণি। এই শহরে দীপুদেবীর আত্মীয়রাও রয়েছেন। আর রয়েছে উরস উৎসব। যে উৎসবের জন্য সেই ১৯০২ সাল থেকে দু’দেশের মধ্যে বিশেষ ট্রেন চলাচল করে। স্বভাবতই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উৎসব নিয়ে শহরে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। শহরের যুবক অভিনন্দন মুখোপাধ্যায়, গৌতম মাহাতোরা বলছিলেন, “এমন উৎসব প্রতি বছর হলে ভাল। তা হলে আরও বেশি ছবি দেখার সুযোগ মিলবে। বিশেষ করে, যে ছবিগুলো ইতিমধ্যে প্রশংসিত।” |