অপহরণের প্রায় তিন সপ্তাহ পরে নেপালের বিরাটনগরের ব্যবসায়ী গঙ্গাবিষাণ রাঠি (৬৯) ও তাঁর সঙ্গী চন্দ্রপ্রকাশ চৌরেলের (৪৫) দেহ অবশেষে উদ্ধার করল পুলিশ।
শনিবার দুপুরে কার্শিয়ঙের সুকনা এলাকায় একটি পাহাড়ি খাদে পচা-গলা দেহ দুটির খোঁজ মেলে। ঘন্টা দুয়েকের চেষ্টায় ক্রেনের সাহায্যে খাদ থেকে তোলা হয় দেহ দু’টি। পুলিশের দাবি, ধৃত সুরেন্দ্র মিশ্র ও তাঁর স্ত্রী মণিকা এবং অন্য অভিযুক্ত অভিজিৎ বসুকে দফায় দফায় জেরার পরে এ দিন তারা ভেঙে পড়ে। কবুল করে খুনের কারণ ও দিনক্ষণ। তিন জনকে সঙ্গে নিয়েই পুলিশ ছোটে ওই পাহাড়ি এলাকায়। সুরেন্দ্রই দেখিয়ে দেয়, কোথায় কীভাবে ওই দু-জনকে খুন করে পাহাড়ের ঢালে গড়িয়ে দিয়েছিল তারা। এরপকেই ক্রেন এনে পুলিশ দেহ দু’টি উদ্ধার করে।
বিষয়টি ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রকে জানানো হয়েছে। নেপাল পুলিশও ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গঙ্গাবিষাণ রাঠি কাঠমাণ্ডু প্রথম সারির ব্যবসায়ী। চন্দ্রপ্রকাশ ছিলেন নেপালের শিবসেনা পার্টির সভাপতি। দুজনেরই বাড়ি নেপালের বিরাটনগরে। পুলিশ জানায়, গঙ্গাবিষাণবাবু নেপালের বড় মাপের ব্যবসায়ী। সেই সূত্রেই শিবসেনা পার্টির প্রধান চন্দ্রপ্রকাশবাবুর সঙ্গে তাঁর পরিচয়। |
চলছে মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক |
শিলিগুড়িতে ব্যবসার কাজে যাতায়াত ছিল দুজনেরই। ধৃত সুরেন্দ্রও বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। অভিজিৎ একটি বিমা কোম্পানির এজেন্ট হিসেব কাজ করে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, নিহত ও ধৃতেরা সকলেই পূর্ব পরিচিত। জেরায় পুলিশ জানতে পেরেছে, গঙ্গাবিষাণকে অপহরণের পরিকল্পনায় চন্দ্রপ্রকাশও ছিলেন। এক সঙ্গে বসেই সেই অপহরণের ছক কষা হয়েছিল। হাতে টাকা পাওয়া পরে মত বদলে চন্দ্রপ্রকাশকে সরিয়ে দেয় সুরেন্দ্র ও অভিজিৎ।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার বলেন, “অভিযুক্ত এবং নিহতেরা পরস্পরের পরিচিত। অপহরণের প্রাথমিক পরিকল্পনা কষেছিল সুরেন্দ্র, অভিজিৎ এবং চন্দ্রপ্রকাশ। পরে পুরো টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য চন্দ্রপ্রকাশকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এমনই দাবি করেছে ধৃতেরা। তবে, সুরেন্দ্রের স্ত্রীও অনেক কিছুই জানে বলে মনে হচ্ছে। ওই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
সুরেন্দ্র নিজের খুনের কথা স্বীকার করলেও এ দিন তার বাড়ি থেকে একটা পাসপোর্ট উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাতে দেখা যাচ্ছে ৪ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি সে বাংলাদেশে ছিল। কমিশনারের সন্দেহ, “অপরাধ করে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য ওই পাসপোর্ট করা হয়েছে।” ১১ জানুয়ারি নিহত গঙ্গাবিষাণের মোবাইল থেকেই তাঁর বাড়িতে ফোন করে সাড়ে ৩ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে দুষ্কৃতীরা। তার পরে বেশ কয়েক বার ফোনে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীর ছেলে হরিবংশের কথা হয়। দর কষাকষির পরে টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় ৫০ লক্ষে। সেই মতো ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মাটিগাড়ায় উত্তরায়ণে একটি রেস্তোরাঁর পিছনে দুষ্কৃতীদের ৫০ লক্ষ টাকা দেন হরিবংশ। তার পরেও গঙ্গাবিষান না ফেরায় শিলিগুড়ি পুলিশকে অভিযোগ জানান তিনি। ২৬ জানুয়ারি ভোরে গঙ্গাবিষাণের মোবাইলের সূত্রে বোলপুরের কাছে দার্জিলিং মেল থেকে ৫০ লক্ষ টাকা-সহ সুরেন্দ্র ও অভিজিৎকে ধরে পুলিশ। পরে সুরেন্দ্রের স্ত্রী মণিকাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। |