পশ্চিমবঙ্গকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার বিষয়টি নতুন করে খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অমিত মিত্রর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন পি চিদম্বরম। আগামী মঙ্গলবার দিল্লিতে আলোচনায় বসবেন কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনমোহন সিংহকে নানা ভাবে এমনকী ব্যক্তিগত আক্রমণ করলেও প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনও ভেদ রাখতে চান না। সে কারণেই রাজ্যকে আর্থিক সাহায্য করার পথ খুঁজে বের করতে তিনি চিদম্বরমকে ফের অমিতবাবুর সঙ্গে বৈঠকে বসার নির্দেশ দিয়েছেন।
মহাকরণ সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের বৈঠকের সলতে পাকানোর কাজটা অমিত মিত্রই কিছু দিন আগে দিল্লিতে এসে সেরে যান। মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রধানমন্ত্রীকে নিত্য আক্রমণ করছেন, তখন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করছেন, এমনটা বিসদৃশ লাগবে বলে দিল্লিতে এসে এক রকম গোপনেই মনমোহনের সঙ্গে সে সময় বৈঠক করেছিলেন অমিতবাবু। এবং তা করতে গিয়ে ফিকি-র মহাসচিব হিসেবে মনমোহনের সঙ্গে নিজের পুরনো সম্পর্ককে কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে মনমোহনের সঙ্গে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বৈঠক করেন অমিত। তার আগে বাজেট-প্রস্তুতি নিয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে চিদম্বরমের বৈঠকেও যোগ দেন তিনি। সেখানেও অমিতবাবু রাজ্যের জন্য আর্থিক সাহায্যের দাবি তোলেন। বৈঠকের ফাঁকেই আলাদা করে চিদম্বরমের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। মনমোহন-অমিত বৈঠকের পরেই পশ্চিমবঙ্গের জন্য আর্থিক সাহায্য নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। কী ভাবে রাজ্যকে সাহায্য করা যায়, তা দেখতে চিদম্বরম নিজেই অমিতবাবুর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে ঠিক হয়।
মনমোহন-সরকারের অবস্থান থেকে এটাও স্পষ্ট, মমতা ইউপিএ-র উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা-র অভিযোগ তুলে সুর চড়ালেও (বস্তুত আজও হুগলির দাদপুরে এক জনসভায় কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা বলেই কেন্দ্রকে আক্রমণ শানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী) ভবিষ্যতে তৃণমূলের সঙ্গে ফের রাজনৈতিক গাঁটছড়ার পথ খুলে রাখতে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। এ সবের পাশাপাশি চলতি মাসের ২১ তারিখ থেকে সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হবে। তার আগে তৃণমূলকে চটিয়ে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয় বলেই মনে করছে কংগ্রেস।
প্রশ্ন হল, কী ভাবে পশ্চিমবঙ্গকে সাহায্য করতে পারে অর্থ মন্ত্রক? প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জমানায় এ বিষয়ে কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের মতো ঋণগ্রস্ত রাজ্যগুলিকে সাহায্যের পথ খুঁজতে অর্থ মন্ত্রকের ব্যয় সচিব সুমিত বসুর নেতৃত্বে একটি কমিটিও গড়া হয়। অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন খাতে রাজ্যকে অর্থসাহায্যও করা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যের দাবি মেনে সুদ মকুব বা মোরাটোরিয়াম দেওয়া যে সম্ভব নয়, তা তখনই জানিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্র। পরবর্তী কালে জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের বৈঠকে অমিতবাবুও মোরাটোরিয়ামের প্রসঙ্গে যাননি। রাজ্যের ২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের কাঠামোর পুনর্বিন্যাসের দাবি তুলেছিলেন তিনি। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ঋণকাঠামোর পুনর্বিন্যাসও কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ঋণকাঠামোর পুনর্বিন্যাসের প্রধান উপায় হল, চড়া হারের সুদে যে সব ঋণ দেওয়া হয়েছে, সেখানে সুদের হার কমিয়ে দেওয়া। তাতে রাজ্যের ভার অনেকটাই লঘু হয়। কিন্তু সমস্যা হল, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নেওয়া বেশির ভাগ ঋণেই সুদের হার যথেষ্ট কম। যা আর কমানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই। রাজ্য দাবি তুলছে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিতে অনুদান বাড়াক কেন্দ্র। কিন্তু এই নিয়ম শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য করা অসম্ভব। এই অবস্থায় অনগ্রসর এলাকা উন্নয়নের মতো খাতেই মমতার সরকারকে সাহায্যের পথ খুঁজতে হবে বলে অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য। |