• তেল আভিভ প্রতিবেশী দেশে এত কাল ধরে ব্যাপক বিদ্রোহ, এবং সেই বিদ্রোহ দমন করতে ব্যাপক রাষ্ট্রীয় হিংসা: এত কিছু দেখে সাধারণত প্রতিবেশী দেশের প্রবল দুশ্চিন্তায় পড়ার কথা। অথচ কী কাণ্ড, ইজরায়েলে কিন্তু এত দিন এক ছটাকও প্রভাব চোখে পড়েনি। ভাবটা যেন, সিরিয়ায় কী চলছে, তাতে বয়েই গেল! হঠাৎই নাটকীয় পালাবদল: ঝাঁকে ঝাঁকে ইজরায়েলি যুদ্ধবিমান গিয়ে সিরিয়ার উপর বোমাবর্ষণ করে এল!
সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যাকফুটে, ‘নিশ্চয়ই কোনও উশকানি ছিল’! রাশিয়ার সরাসরি ধিক্কার, ‘অন্যায় অনৈতিক আক্রমণ’। সিরিয়ার হুমকি, ‘আমাদের পাল্টা আক্রমণের অধিকার রইল’। কিন্তু কেন? ব্যাপারটা কী? কেউ জানে না, শুধু জল্পনা আর গুজব। গুজবে এও শোনা গেল, এটা নাকি নেহাত স্টেজ রিহার্সাল, আসল হানা আসছে এর পর!
গুজব এখানেই শেষ নয়। ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহু দেশের অভ্যন্তরে নিজের রাজনৈতিক ‘পরাজয়’ থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্যই নাকি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সিরিয়ার উপর। কেউ বলছেন, নতুন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়ার লাপিদকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী হইচই বন্ধ করার ছল। বিশেষ করে লাপিদের বিদেশনীতি ঠিক কী রকম, এখনও সেটা যখন তত স্পষ্ট হয়নি। কে এই লাপিদ (ছবি)? ইনি প্রাক্তন টিভি-সাংবাদিক, এক বছর আগে হঠাৎই রাজনীতিতে নেমেছেন। এর মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিরাট সাফল্য! রাজনৈতিক আদর্শের হিসেবে ইনি মধ্যপন্থী, ইজরায়েলের প্রেক্ষিতে বাম-ঘেঁষাই বলা চলে। অর্থনৈতিক প্রশ্নে কট্টরপন্থী নেতানিয়াহু এবং লিবারমানের থেকে অনেকটা দূরত্বে লাপিদের অবস্থান। নির্বাচনের ফল যা দাঁড়িয়েছে, তাতে লাপিদের সহায়তা না নিয়ে নেতানিয়াহু পরবর্তী সরকার গঠন করতে পারবেন না। এর অর্থ, নেতানিয়াহুই যদি আবার প্রেসিডেন্ট হন, আগের মতো আক্রমণাত্মক এবং রক্ষণশীল রাজনীতির খেলা তিনি আর খেলতে পারবেন না, লাপিদের খাতিরে মধ্যপন্থী হতেই হবে এ বার। কিন্তু সত্যিই কি এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক যুদ্ধাভিযান? সিরিয়ায় হানার কারণটা ঠিক কী?
|
• টোকিয়ো ধনী দেশগুলিতে বার্ধক্যের বোঝা বাড়ছে। জাপান তাদের প্রথম সারিতে। এখনই সে দেশের তেরো কোটি মানুষের সিকিভাগের বয়স ষাটের বেশি, আগামী পঞ্চাশ বছরে সেটা চল্লিশ শতাংশে পৌঁছবে। পেনশন থেকে শুরু করে চিকিৎসা পর্যন্ত হাজার খরচ তাঁদের জন্য, আর ও সব দেশে সেই খরচের একটা বড় অংশের বোঝা বইতে হয় সরকারকে। অর্থনীতিবিদ থেকে রাষ্ট্রনীতিকার পর্যন্ত সবাই চিন্তিত। জাপানের অর্থমন্ত্রী তারো আসো (ছবি) মুশকিল আসান করে দিয়েছেন। তাঁর ফরমান: বয়স হলে চটপট পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়া উচিত, তা হলেই আর গোল থাকে না। নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে এক মাস আগে, গদি খুব শক্ত নয়, তার অর্থমন্ত্রীর মুখে এমন কথা, স্বভাবতই দেশ জুড়ে প্রবল প্রতিবাদ উঠেছে। মন্ত্রিবরের বয়স বাহাত্তর।
|
তিব্বতের রাশ আলগা করছে না বেজিং। প্রমাণ ৫৫ বছর বয়সি লোসাং গ্যালৎসেন, তিব্বতের নতুন গভর্নর। পার্টির মধ্যে বেশ কড়া চরিত্র হিসেবে পরিচিত তিনি। তিব্বতের রাজধানী লাসার মেয়র ছিলেন, মার্কসবাদী তত্ত্বের অধ্যাপকও বটে। পদ্মা চোলিং-এর পর তাঁকে তিব্বতের গভর্নর করার সিদ্ধান্তে পার্টির বার্তা স্পষ্ট যতই ২০০৯ সাল থেকে শ’খানেক তিব্বতি বেজিংয়ের দমননীতির প্রতিবাদে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করুক, যতই আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলোড়ন তুলুক সেই ঘটনা, বেজিং অবস্থান বদলাচ্ছে না। বরং, মার্চ মাসে জি জিনপিং দেশের প্রেসিডেন্ট হলে আরও কঠোর হবেন তিনি, এমন আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। লোসাং জানিয়েছেন, দলাই লামার নেতৃত্বে প্রবাসী তিব্বতিরা যে ‘হিংসাত্মক বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ’ চালিয়ে চলেছেন, তিনি তা ঠেকাবেনই। ‘মাতৃভূমির অখণ্ডতা এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখাই হবে প্রধান কাজ। সম্প্রীতি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারলেই তিব্বতের উন্নয়ন এং সমৃদ্ধির পথে হাঁটা সম্ভব হবে’ বলেছেন লোসাং। অর্থাৎ, বেজিং যা শুনতে চায়, তিনি সেই সুরেই বেঁধেছেন নিজেকে। এবং, কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরে নিজের উত্থানের পথটিও সুগম করছেন, মত অনেকেরই। এমনিতে তিব্বতের গভর্নরের প্রধান দায়িত্ব বেজিংয়ের রবার স্ট্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া। কিন্তু সেই কাজটিও সহজ নয়। তিব্বতের গভর্নরের পদটি আসলে উন্নতির অ্যাডমিশন টেস্ট। ভাল ভাবে পাশ করলে পার্টির ভিতরে উন্নতির সুযোগ যথেষ্ট। উদাহরণ চাই? প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও ১৯৮৮ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। হু চুনহুয়া বর্তমানে গুয়াংডং প্রদেশের পার্টি প্রধান এবং পার্টির উঠতি তারকা প্রায় কুড়ি বছর তিব্বতে কাজ করেছেন। বোঝাই যাচ্ছে, ডায়মন্ডহারবার আর রানাঘাট হয়ে না গেলেও বেজিংয়ের শীর্ষাসনের পথটি তিব্বত দিয়ে যায়। অতএব, লোসাং গ্যালৎসেন-এর দিকে নজর রাখা ভাল। তবে, কমিউনিস্ট পার্টিতে কখন কী ঘটে যায়, কিচ্ছু বলা যায় না! |