মঞ্চে মন্তব্য করে বিতর্কে শিক্ষামন্ত্রী
বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়ার অভিভাবকদের ‘তথাকথিত ভদ্রলোক’ বলে বিতর্কে জড়ালেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বৃহস্পতিবার কোচবিহার রাজবাড়ি স্টেডিয়াম চত্বরে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের ফারাক ঘোচানোর ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “তথাকথিত ভদ্রলোকের ছেলেরা পড়বে নাকি বেসরকারি স্কুলে! তথাকথিত ভদ্রলোক যারা নন, তাদের ছেলেমেয়েরা পড়বে সরকারি স্কুলে। ওই ধারা ঘোচাতে আমরা বদ্ধ পরিকর। আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে সরকারি স্কুলগুলিকে উৎকর্ষের জায়গা থেকে, পড়ানোর জায়গা থেকে- এমন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে যাতে শিক্ষার মানচিত্রটা পাল্টে যায়।”
ওই বক্তব্যের পর অভিভাবকদের মধ্যে তো বটেই শিক্ষক মহলেও আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ‘তথাকথিত ভদ্রলোক’ বলতে কি বোঝাতে চেয়েছেন জল্পনা শুরু হয়েছে। কোচবিহারের একটি বেসরকারি স্কুলের অন্যতম কর্তা চঞ্চল রঞ্জন দাস বলেন, “ভদ্রলোকের সংজ্ঞা ওরকম হওয়া উচিত নয়। জেলায় গ্রাম-শহর মিলিয়ে আমাদের ৪৭ টি স্কুল রয়েছে। সেখানে দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি শিক্ষক, অধ্যাপক, চিকিৎসক, বিত্তবান পরিবারের ছাত্রছাত্রীরাও আছে। বিবেকানন্দের আদর্শ মেনে আমরা স্কুল চালাচ্ছি।” দিনহাটার বাসিন্দা এক অভিভাবক রাণা গোস্বামী বলেন, “আমার ছেলে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ছে। সরকারি স্কুলের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম বেতনে শিক্ষকরা সেখানে ভাল পড়াচ্ছেন। আস্থা থেকেই ওখানে ভর্তি করা হয়। এরসঙ্গে তথাকথিত ভদ্রলোকের বিশেষণ কেন আসছে তা সবিনয়ে মন্ত্রীর কাছে জানতে চাই।”
ওয়েবকুটার নেতা দিনহাটা কলেজের শিক্ষক সাধন কর দাবি করেন, মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের বহু ছেলেমেয়ে বেসরকারি স্কুলে পড়ছে। তিনি বলেন, “সরকারি স্কুলে যেসব পড়ুয়া রয়েছে তাঁদের অভিভাবকরা ভদ্রলোক নন সে প্রশ্নও মন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসছে। এভাবে ভদ্র, অভদ্রের বিভাজন করা যায় না।” তৃণমূল নেতা আব্দুল জলিল আহমেদের ছেলে বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। তিনি শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য শোনেননি দাবি করে ওই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক তৃণমূল নেতা অবশ্য বলেন, “প্রতিযোগিতার যুগে সন্তানকে ভাল স্কুলে দেওয়ার মানে তথাকথিত ভদ্রলোক হওয়া নয়।”
কংগ্রেস, সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতারা অবশ্য মন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেছেন। কোচবিহার পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহা। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে বেসরকারি স্কুলে পড়ে। শিক্ষামন্ত্রী সরকারি, বেসরকারি স্কুলের ছাত্র সংখ্যা কত সেই তথ্য জানলে এটা বলতেন না। উনি কৌশলে সরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের অভদ্র বলেছেন বলে আমরা মনে করছি। এজন্য শিক্ষামন্ত্রীর কোচবিহারের মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।” সিপিএম নেতা তথা আইনজীবী পার্থপ্রতিম সেনগুপ্তের দাবি, তথাকথিত ভদ্রলোক কথাটাই আপত্তিকর। কোচবিহারের ক্ষেত্রে সুনীতি, জেনকিন্সের মত সরকারি স্কুলের মান ভাল হলেও তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তির আসন কম। সে কারণে অনেককেই বেসরকারি স্কুলে যেতে হয়। তিনি বলেন, “ভদ্রলোক মানে ধনী অভদ্র মানে গরিব, এমন ধারণা ঠিক নয়।”
কোচবিহারের জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী বলেন, “মন্ত্রিসভার তথাকথিত কিছু মন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখতে না পেরেই তাঁর ভাষায় তথাকথিত অভিভাবকরা বেসরকারি স্কুলে ঝুঁকতে বাধ্য হয়েছেন।” ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহের কথায়, “আমার ছেলে বেসরকারি স্কুলে পড়েছে। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে এটা করতে হয়েছে। মন্ত্রী বরং তাঁদের পরিবারের ছেলে মেয়েরা কে কোথায় পড়ছেন সেই হিসেব নিন। তাতেই ভদ্রলোক ও তথাকথিত ভদ্রলোকের হিসাব উনি পেয়ে যাবেন।”
শিক্ষামন্ত্রী এদিন স্কুল পরিদর্শনে ডিআইরা যান না অভিযোগ করে প্রতি জেলায় ডিআইয়ের প্রতিনিধি সহ ১৫ শিক্ষকের দল গড়ার কথাও ঘোষণা করেন। ২০১৩ সালে কোচবিহারে মনীষী পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চালুর কথাও ঘোষণা করেন। শিক্ষকদের একাংশের ফাঁকিবাজির প্রবণতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.