হিংসা বন্ধের দাওয়াই
ভোটের মুখে বন্ধ কর্মী নিয়োগ, বিপাকে পঞ্চায়েত
ঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে রাজনৈতিক হিংসা বাড়তে থাকায় ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে কর্মী নিয়োগে স্থগিতাদেশ জারি করল রাজ্য সরকার। দেড় বছর আগেও এমনই নির্দেশ দিয়ে সাত মাস ধরে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছিল তারা। ফলে কর্মী-শূন্যতায় ভুগতে থাকা জেলাগুলিতে আখেরে গ্রামোন্নয়নের কাজ আরও বাধাপ্রাপ্ত হবে বলেই মত প্রশাসনের একাংশের। পাশাপাশি সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন বেকার তরুণ-তরুণীরাও।
পঞ্চায়েত দফতরের উপসচিব সৌম্য পুরকাইত সম্প্রতি জেলাগুলিতে নির্দেশ পাঠিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিয়োগ বন্ধ রাখতে বলেছেন। নির্দেশে বলা হয়েছে, কিছু জায়গায় পঞ্চায়েতে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সংঘাত ক্রমশ বাড়ছে। এ ছাড়া, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন জেলায় আইন-শৃঙ্খলার সমস্যাও হচ্ছে। তাই আপাতত কর্মী নিয়োগ স্থগিত করা হচ্ছে। পঞ্চায়েতমন্ত্রীও এই নির্দেশে স্বাক্ষর করেছেন। বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, ভোটের আগে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রুখতেই এই ব্যবস্থা।
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, পঞ্চায়েত স্তরে কর্মী নিয়োগে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠছে অনেক জায়গায়। কয়েক মাস আগে জলপাইগুড়ি জেলায় চাকরি প্রার্থীদের পরীক্ষার খাতা দেখার পরে কয়েক জনের নম্বর কারচুপি করে বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল কিছু সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধে। তাঁরা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থক। পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছে। মালদহ জেলায় পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে বেনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন কিছু চাকরি প্রার্থী।

রাজ্য প্রশাসনের কাছে তাঁরা অভিযোগও জানিয়েছেন। তার উপর সম্প্রতি জেলায় জেলায় রাজনৈতিক গোলমাল বেড়ে গিয়েছে। নির্বাচনের মুখে এই পরীক্ষা নিয়ে যাতে নতুন করে উত্তেজনা না-ছড়ায়, তার জন্য প্রশাসন ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যে সব পদে লোক নিয়োগ করা যাবে, সে ক্ষেত্রে নির্দেশে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
২০১১ সালে দুর্গাপুজোর আগে পঞ্চায়েতে কর্মী নিয়োগে স্থগিতাদেশ জারি করেছিল রাজ্য সরকার। গত এপ্রিল মাসে সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। কিন্তু তার পর গত আট মাসে অনেক জেলাই শূন্য পদগুলিতে কর্মী নিয়োগ করে উঠতে পারেনি। পঞ্চায়েত দফতরের এক কর্তা জানান, গত এপ্রিল মাসে রাজ্যের ৩৩৫১টি পঞ্চায়েতে এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট, সহায়ক, পঞ্চায়েত সচিব, নির্মাণ সহায়ক ও পঞ্চায়েত কর্মীর শূন্য পদ ছিল প্রায় ২৫ শতাংশ।
কর্মীর অভাব বেশি ছিল পুরুলিয়া, মালদহ, হুগলি, বীরভূম ও দুই ২৪ পরগনা জেলায়। তাঁর মতে, “স্থগিতাদেশ ওঠার পর ওই শূন্য পদের অল্প কিছু পূরণ হয়ে থাকতে পারে। কর্মীর অভাব তাই মেটেনি।” উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অলোকেশ প্রসাদ রায়ের কথায়, “এক একটি পদের জন্য বহু আবেদন জমা পড়েছে। তা বাছাই করার পরেও আদালতের মামলা, নানা বাধা ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণেই এত দিন নিয়োগ করা যায়নি। শূন্যপদ বাড়তে বাড়তে এখন ১৬০টিতে দাঁড়িয়েছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৩৪৮টি শূন্যপদের জন্য আবেদন করেছিলেন ১ লক্ষ ৮৫ হাজার জন। লিখিত পরীক্ষা হয়ে যাওয়া তিনটি পদ ছাড়া বাকি পদে নিয়োগের কাজ বন্ধ রাখছে তারা। বাঁকুড়া জেলায় ১৫৪টি পদ শূন্য থাকলেও গত আট মাসে কাউকে নিয়োগ করা যায়নি।
হুগলি জেলায় শূন্য পদের সংখ্যা প্রায় ৫০০টি। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, নিয়োগের কাজ চললেও ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১০০ জনের বেশি লোক নেওয়া যাবে না। চণ্ডীতলা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সনৎ সানকী বলেন, “কর্মীর অভাবে অন্য পঞ্চায়েত থেকে লোক আনিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে।”
পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রায় এসে গিয়েছে। এই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তাই কোনও বিতর্ক ওঠার মানে হয় না।” প্রাক্তন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রশ্ন, “পঞ্চায়েত ভোটের দিনই তো ঘোষণাই হয়নি। তা হলে এখনই স্থগিতাদেশ কেন? আমাদের আমলে কখনও এমন স্থগিতাদেশ জারি করতে হয়নি।” তাঁর কটাক্ষ, “তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব ঠেকানোই এই সরকারের প্রধান সমস্যা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.