পালনিয়প্পন চিদম্বরমের মুখ ভার করিবার আর কারণ রহিল না। তিনি যাহা চাহিয়াছিলেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর দুব্বুরি সুব্বারাও তাহার ব্যবস্থা করিয়াছেন। তিনি ব্যাঙ্কের তৃতীয় ত্রৈমাসিক সমীক্ষায় সুদের হার ০.২৫ শতাংশ কমাইবার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিলেন। বস্তুত, চিদম্বরম যাহা চাহিয়াছিলেন, সুব্বারাও তাহার অধিক দিয়াছেন তিনি একই সঙ্গে ক্যাশ রিজার্ভ রেশিয়ো-ও ০.২৫ শতাংশ কমাইয়া দিয়াছেন। অবশ্য, নয়াদিল্লির কথাতেই মিন্ট রোডের এমন সিদ্ধান্ত, ভাবিলে ভুল হইবে। সুব্বারাও ইতিপূর্বে দুই বার প্রমাণ করিয়াছেন, অর্থমন্ত্রকের চাপে মাথা পাতিবার পথে তিনি হাঁটিবেন না। তাঁহার বর্তমান সিদ্ধান্তটি এক অর্থে প্রতিশ্রুতি পালন। তিনি পূর্বে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখিবার সময় বলিয়াছেন, তৃতীয় ত্রৈমাসিকের শেষে আর্থিক নীতি শিথিল করিবেন। আর্থিক বৎসরের শেষে আরও এক দফা সুদের হার কমাইবার ইঙ্গিতও তিনি দিয়া রাখিয়াছেন, তবে একই সঙ্গে বলিয়াছেন, সুদ কমিলেও সামান্যই কমিবে। নয়াদিল্লি তাহার সম্পূর্ণ ভ্রান্ত রাজস্ব নীতির মাধ্যমে পরিস্থিতি যে রকম জটিল করিয়া রাখিয়াছে, তাহার দায় স্বেচ্ছায় মাথায় তুলিয়া লওয়ার কোনও বাসনা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নাই। ব্যাঙ্কের কর্তব্য যতখানি, ব্যাঙ্ক তত পথ হাঁটিয়াছে। সমীক্ষায় বলা হইয়াছে, আপাতত মূল্যস্ফীতির হার একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই থাকিবে বলিয়া প্রত্যাশা। অতএব, আর্থিক বৃদ্ধির হারের উন্নতিকল্পে শিথিল আর্থিক নীতির প্রয়োজনটি ব্যাঙ্ক এখন পূরণ করিতেছে। অর্থাৎ, মূল্যস্ফীতির হারের বিরুদ্ধে লড়াইটি ব্যাঙ্ক সাময়িক ভাবে মুলতবি রাখিয়াছে মাত্র, ছাড়ে নাই।
যাহার যাহা কাজ, তাহার প্রতি একনিষ্ঠ থাকাই কর্তব্য। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নিজের কাজ ভুলে নাই। কেন্দ্রীয় সরকার ভুলিয়াছে। দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ভূলুণ্ঠিত হইয়াছে, তাহার প্রধান কারণ এই দেশে বিনিয়োগের ধারাটি কার্যত স্তব্ধ হইয়াছে। বিনিয়োগের প্রধান ভিত্তি বিশ্বাস সরকারের প্রতি বিশ্বাস। কেন্দ্রীয় সরকার যে আদৌ দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতিকল্পে উৎসাহী, তাহার কার্যত কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না। মাঝেমধ্যে সংস্কারের নামে হুঙ্কার দেওয়া হয় বটে, কিন্তু হুঙ্কারমাত্র সার। এলপিজি-র ভর্তুকি কমাইয়াও ফের বাড়াইয়া দেওয়া হইল, যাহাতে মধ্যবিত্ত আর না চটে। ডিজেলের দাম হইতে নিয়ন্ত্রণ তুলিয়া লওয়ার প্রকল্পটিও আধাখেঁচড়া। কংগ্রেসের যাহা চিরাচরিত ধর্ম, কংগ্রেস তাহাতে অটল মুখে সংস্কারের কথা বলিলেও মন অন্যত্র। মুখের কথায় ভোটার ভুলানো যাইতে পারে, বাজার ভুলে না। চলতি খাতে ঘাটতির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণেও সরকার যথেষ্ট মনোযোগী নহে, রাজকোষ ঘাটতির কথা তুলিবারই অবকাশ নাই। অর্থমন্ত্রী সম্ভবত আশা করেন, তাঁহারা যে ভুলগুলি করিবেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাহার দায় চুকাইবে। ভিত্তিহীন আশা। অন্যায়ও বটে। দেশের আর্থিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করিবার দায়িত্বটি যৌথ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যেমন অনুকূল আর্থিক নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব আছে, অর্থ মন্ত্রকেরও কর্তব্য, রাজস্ব নীতিকে ইতিবাচক করিয়া তোলা। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দায়িত্ব পালন করিয়াছে। এই বার অর্থ মন্ত্রকের পালা। |