সঙ্ঘের সঙ্গে মহাবৈঠক বিজেপির উন্নয়নের সঙ্গে নরম
হিন্দুত্বের কৌশল
গামী লোকসভা নির্বাচনে উন্নয়নের পাশাপাশি হিন্দুত্বকেও তাস করতে চাইছে সঙ্ঘ-বিজেপি।
আরএসএসের উদ্যোগে আজ দিল্লিতে এক ‘মহা-বৈঠক’ বসেছিল। বিরল এই বৈঠকে বিজেপির তরফে নতুন সভাপতি রাজনাথ সিংহ ছাড়াও লালকৃষ্ণ আডবাণী ও সুষমা স্বরাজ, আরএসএসের দুই শীর্ষ নেতা ভাইয়াজি জোশী ও সুরেশ সোনি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) অশোক সিঙ্ঘল ও প্রবীণ তোগাড়িয়া সামিল হন। এই মহা-আয়োজনের পিছনে সঙ্ঘের লক্ষ্য একটাই। লোকসভা নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণ করা। সঙ্ঘ নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, নরেন্দ্র মোদীকে দলের ‘মুখ’ করে উন্নয়নের এজেন্ডাকেই সামনে রেখে চলবে বিজেপি। কিন্তু গো-বলয়ে ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতে গেলে হিন্দুত্বকেও প্রয়োজন হবে দলের। সঙ্ঘ নেতৃত্বের মতে, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যে ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতে হলে হিন্দুত্ব ছাড়া গতি নেই। সে কারণেই রামমন্দির নির্মাণের মতো বিষয়কে আঁকড়ে ফের গ্রামে-গ্রামে প্রচার ছড়িয়ে দিতে চাইছেন তাঁরা।
আর সেই লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপও করতে চাইছে সঙ্ঘ। উত্তরপ্রদেশেরই ইলাহাবাদে চলছে মহা কুম্ভমেলা। চলবে আগামী মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত। তার মধ্যেই, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ইলাহাবাদে সম্মেলনের আয়োজন করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। ওই সম্মেলন থেকেই অশোক সিঙ্ঘল-প্রবীণ তোগাড়িয়ারা রামমন্দির নির্মাণের আন্দোলন ফের চাঙ্গা করার ডাক দেবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনের কাছাকাছি সময়েই সুপ্রিম কোর্টে রামমন্দির নিয়ে ফয়সালা হওয়ার কথা। তাই এখন থেকেই সে ব্যাপারে প্রচার অভিযান শুরু করে দেওয়া উচিত। সিঙ্ঘলরা বহু দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, রাজনৈতিক দল হিসাবে বিজেপি এখন রামমন্দিরের দাবি থেকে অনেকটাই সরে এসেছে। সঙ্ঘের উদ্যোগে তাই আজ যৌথ কৌশল রচনা হয়। সঙ্ঘ চাইছে, সম্প্রতি জয়পুরের চিন্তন বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে ‘গেরুয়া-সন্ত্রাস’ নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, রাজনৈতিক ভাবে সেটাও কাজে লাগাক বিজেপি। নরেন্দ্র মোদীও সম্প্রতি রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠক করতে এসে শিন্দের ওই মন্তব্যকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করার কথা জানিয়ে গিয়েছেন।
সঙ্ঘ এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা এ ভাবে পরিকল্পনা করলেও লালকৃষ্ণ আডবাণী বা অরুণ জেটলির মতো নেতাদের এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে। তাঁরা মনে করেন, হিন্দুত্ব নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করতে গেলে অহেতুক রাজনীতির মেরুকরণ হবে। তাতে এনডিএ-র বিস্তারের সম্ভাবনা ভেস্তে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, তাঁদের বক্তব্য, হিন্দুত্বের ভাবনা এতটা উস্কে দেওয়ার প্রয়োজন নেই, যাতে ফেরার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এমনিতেই মোদীকে ‘মুখ’ হিসেবে তুলে ধরা নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় জোট শরিক নীতীশ কুমার একলা-চলো-র ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন। ভোটের আগে বিজেপির সঙ্গত্যাগ করে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ লড়াইয়ের কৌশলও নিতে চাইছেন নীতীশ। তার উপর প্রধানমন্ত্রী পদ নিয়ে দলের মধ্যেও দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে। শিবসেনা সুষমা স্বরাজের নাম প্রস্তাব করে এখনই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণার দাবি জানাচ্ছে। আবার অন্য শরিক শিরোমণি অকালি দল মোদীর নামে সম্মতি জানিয়েছে। এনডিএ জোটের বিস্তার না হয়ে বিজেপির অন্দরেই এ নিয়ে উত্তেজনা বাড়ায় দলের অনেক শীর্ষ নেতাই উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় হিন্দুত্বের তাস খেলতে গিয়ে সমস্যা বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা অনেকের।
কিন্তু সঙ্ঘ নেতৃত্ব তো বটেই, রাজনাথ সিংহ-সহ অনেকে আবার মনে করছেন, মেরুকরণ হলেও ক্ষতি নেই। রামমন্দির আন্দোলনে সওয়ার হয়েই এক সময় বিজেপির উত্থান হয়েছিল। এখন সেই হিন্দুত্বের পথ থেকে সরে আসায় বিজেপির অনেক সমর্থকই দলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। গো-বলয়ে জনভিত্তি বাড়াতে তাঁদের আস্থা অর্জন করাও দরকার। তবে একই সঙ্গে উন্নয়নকেই মূল হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি।
ভারসাম্য বজায় রেখে দু’টো কৌশল নিয়েই কী ভাবে এগোনো যায়, তা নিয়েও কথা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ হিন্দুত্ব এবং বিজেপি উন্নয়ন নিয়ে এগোলে এই দুইয়ের ‘যুগলবন্দি’তে রাজনৈতিক ফায়দা দেখছেন রাজনাথরা। উন্নয়নের সঙ্গে নরম হিন্দুত্বের মিশেলের এই কৌশলেই ফের ক্ষমতায় ফেরার অঙ্ক কষছে বিজেপি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.