টানা দু’দিনের ধর্মঘট কেন,
ব্যতিক্রমী বিতর্ক সিপিএমে

সিপিএমের মস্তিষ্কেও পরিবর্তন! নাকি চাপের মুখে পড়ে বাস্তবকে চেনার চেষ্টা!
টানা দু’দিন সাধারণ ধর্মঘট কেন, তা নিয়ে এ বার প্রশ্ন উঠল সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে। উত্তর, দক্ষিণ এবং রাঢ়বঙ্গের জেলার প্রতিনিধিরা এক সুরে সরব। যে গরিবের স্বার্থের কথা বলে বামেদের রাজনীতি, ২০-২১ ফেব্রুয়ারি টানা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকে সেই প্রান্তিক মানুষের রুটি-রুজিরই ক্ষতি করা কেন প্রশ্ন তাঁদের। আরও প্রশ্ন, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান করতে না-পেরে রাজ্য সরকার যখন জনতার কাঠগড়ায় উঠছে, তখন দু’দিন ধর্মঘট করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ফের অস্ত্র তুলে দেওয়াই বা কেন? ভাষা দিবসকে সামনে রেখে অন্তত পশ্চিমবঙ্গে ধর্মঘট এক দিনে নামিয়ে আনতে রাজ্য নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন রাজ্য কমিটির একাধিক সদস্য।
এফডিআই-প্রশ্নে গত বছর এনডিএ-র সঙ্গে একই দিনে ১২ ঘণ্টার ভারত বন্ধ ডেকেছিল বামেরা। তখন প্রশ্ন উঠেছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মঘট করে তৃণমূল নেত্রীরই কি হাত শক্ত করছে বামেরা? রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করার বদলে সর্বভারতীয় বিষয়কে সামনে রেখে ধর্মঘট করতে গিয়ে প্রকৃতপক্ষে নিশানা গুলিয়ে ফেলছেন বামেরা, এমনটাই বলেছিলেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। ঘুরপথে সেই বিতর্কটাই যেন এ বার এসে পড়েছে সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে!
রাজ্য কমিটির বৈঠকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।
ধর্মঘট বস্তুটিই যে ক্ষতিকারক, এই উপলব্ধিতে অবশ্য এখনও বামেরা পৌঁছননি। দু’দিন তো বটেই, এক দিনই বা ধর্মঘট করতে হবে কেন এই প্রশ্ন এখনও সিপিএমের অন্দরে সে ভাবে ওঠেনি। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই বন্ধ-অবরোধের রাজনীতি থেকে সরে আসার ঘোষণা করেছেন তৃণমূল নেত্রী। সম্প্রতি কিছু ধর্মঘটের কড়া মোকাবিলাও করেছে তাঁর প্রশাসন। রাজ্যে যখন শিল্পের পরিবেশের দফারফা, তখন প্রধান বিরোধী দলও ধর্মঘট-বিরোধী অবস্থান নিলে রাজ্যের ভাল হত বলে মনে করে শিল্প ও বণিক মহল। এই প্রশ্নে সিপিএমের ভিতরকার দ্বিধা কেন ঝেড়ে ফেলা যাচ্ছে না, তা নিয়েও নানা মহলে অসন্তোষ রয়েছে। কিন্তু সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, ধর্মঘটের যে নেতিবাচক প্রভাব আছে, দলের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় তা অন্তত স্বীকার করা হচ্ছে। যার জেরে ধর্মঘটের মেয়াদ নিয়ে বিতর্ক উঠছে রাজ্য কমিটিতে। বাম রাজনীতির বিচারে এর তাৎপর্যও কম নয় বলেই সিপিএম সূত্রের অভিমত।
আলিমুদ্দিনে দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকের প্রথম দিন, বৃহস্পতিবার বেশ কয়েক জন দোর্দণ্ডপ্রতাপ জেলা সম্পাদক ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের বিরুদ্ধে সওয়াল করেছেন। প্রশ্নকর্তাদের মধ্যে এমন নেতারাও আছেন, যাঁরা দলীয় রাজনীতিতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত নন। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এক সময় ধর্মঘটের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। দলের কট্টরপন্থীরা অবশ্য তাঁর রাশ টানার চেষ্টা করেছিলেন। ক্ষমতা হারানোর পরে গত বছর সিপিএমের প্রথম রাজ্য সম্মেলনের রুদ্ধকক্ষ অধিবেশনে ধর্মঘট সংক্রান্ত তাঁর মন্তব্যের জন্য ভুল স্বীকার করতে হয়েছিল বুদ্ধবাবুকে।
সিপিএম সূত্রের খবর, দলের ভিতরেই এ বার ধর্মঘটের বিরুদ্ধে স্বর ফুটতে শুরু করায় ফের হাত শক্ত হচ্ছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। এ দিন রাতে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে তিনি বলেন, দলের অন্দর থেকে উঠে আসা যুক্তি মাথায় রাখা উচিত। বৈঠকের শেষ দিনে আজ, শুক্রবার রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর জবাবি ভাষণের পাশাপাশি বুদ্ধবাবুও মুখ খুলতে পারেন বলে সিপিএম সূত্রে ইঙ্গিত।
রাজ্য কমিটির বৈঠকে এ দিন একাধিক সদস্য বলেছেন, ধর্মঘট ডাকার আগে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের কথা মাথায় রাখা উচিত ছিল। অসংগঠিত শ্রমিক-সহ বিরাট অংশের মানুষ পরপর দু’দিন মজুরি হারাবেন, এটা কী ভাবে চাপিয়ে দেওয়া যায়। তা ছাড়া, ধর্মঘট যখন পশ্চিমবঙ্গের বিষয় নিয়েই নয়, তখন টানা দু’দিন জনজীবন স্তব্ধ রাখলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যার ফায়দা নিতে পারে শাসক দল। ২৩ ফেব্রুয়ারি তিন কেন্দ্রে বিধানসভা উপনির্বাচন। ধর্মঘট তার প্রচারেও প্রভাব ফেলবে।
অন্তত দু’জন সদস্য অবশ্য ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ কাজে লাগানোর পক্ষেও মত দিয়েছেন। তবে তাঁরা নেহাতই সংখ্যালঘু! রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “রাজ্য সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে আমরা এখনও একটাও ধর্মঘট ডাকিনি। এ বারের ধর্মঘট সর্বভারতীয় প্রশ্নে। কিন্তু আমরা যে দায়িত্বশীল বিরোধী দল, এই বার্তা মানুষের সামনে থাকা জরুরি।”
কয়েক দিন আগে সিটুর রাজ্য কাউন্সিল বৈঠকেও পরিবহণ ইউনিয়নের নেতারা প্রশ্ন তুলেছিলেন, পরপর দু’দিন গাড়ি বার না-করে পরিবহণ শ্রমিকদের মজুরি হারানোর দিকে ঠেলে দেওয়া হবে কেন? ক’মাস আগে সিটুর ডাকা পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহার করিয়েছিল আলিমুদ্দিন। বস্তুত, এ বারও আলিমুদ্দিন-ঘনিষ্ঠ সিটুর রাজ্য নেতারা দু’দিনের ধর্মঘটের বিপক্ষে। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে ভাষা দিবসকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেই এ রাজ্যে এক দিন ধর্মঘট শিথিল করানোর দিকে যেতে পারে আলিমুদ্দিন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে রাজ্য কমিটিতে। কর্মসংস্থানের স্বার্থে শিল্পায়নের দাবিকে সামনে রেখে ভোটের জন্য দলের প্রস্তুত হওয়া উচিত, এমন প্রস্তাব দিয়েছেন কয়েক জন সদস্য। শিল্পায়নও চাইব আবার ধর্মঘটেও থাকব এই দ্বন্দ্ব দূর করারই চ্যালেঞ্জের মুখে এখন আলিমুদ্দিন!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.